কুসংস্কার প্রতিরোধে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।
এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "কুসংস্কার প্রতিরোধে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা" প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
কুসংস্কার প্রতিরোধে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা বাংলা প্রবন্ধ রচনা ||Class-X Bangla Prabandha Rachana
কুসংস্কার প্রতিরোধে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা
ভূমিকা :
বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞান যুক্তি-বুদ্ধির দ্বারা প্রকৃতি জগতের নানা রহস্যের সমাধান করেছে। তবু মানুষের মনে নানা অবৈজ্ঞানিক বিশ্বাস দানা বেঁধে আছে। অপ্রাকৃত, অলৌকিক, যুক্তিহীন এই বিশ্বাসকে কুসংস্কার বলে। এগুলি মানুষের মুক্ত চেতনাকে আচ্ছন্ন করে রাখে। কুসংস্কার মানবজীবনকে গণ্ডিবদ্ধ করে রাখে, এগিয়ে চলতে বাধা সৃষ্টি করে, চিন্তা-চেতনা ঘুম পাড়িয়ে রাখে। এযুগে আধুনিক বিজ্ঞানের ব্যাপক বিকাশ সত্ত্বেও মানুষের মন থেকে এইসব কুসংস্কার দূর হয়নি। তুকতাক,মন্ত্রতন্ত্র, ঝাড়ফুঁক ইত্যাদি আজও আমাদের আকর্ষণ করে। বৈজ্ঞানিকের হাতেও আংটি, তাবিজ শোভা পায়। বলা বাহুল্য তথাকথিত আধুনিক যুগে বাস করেও আমরা মধ্যযুগীয় চেতনায় আবিষ্ট হয়ে আছি।
কুসংস্কারের স্বরূপ :
আমাদের দেশে কুসংস্কারের সীমা-পরিসীমা নেই। এখনও ডাইনি সন্দেহে মানুষ খুন করা হয়। মন্দিরে পশু বলি দেওয়া হয়। বিড়াল রাস্তা পার হলে গাড়ি থমকে দাঁড়ায়। টিকটিকির স্বাভাবিক ডাক আমাদের মনে খটকা জাগায়। সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণে বাড়ি বাড়ি হাঁড়ি ফেলার ধুম পড়ে যায়। ছাত্ররা সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের বৈজ্ঞানিক কারণ জানার পরেও সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের সময় রাহুর হাত থেকে চন্দ্র-সূর্যকে মুক্ত করার জন্য খোল-করতাল নিয়ে হরিধ্বনি করে। কুসংস্কার আমাদের চিন্তা-চেতনাকে আচ্ছন্ন করে বলেই আমরা প্রকৃত সত্য থেকে দূরে সরে যাই।
কুসংস্কার প্রতিরোধে প্রয়োজনীয়তা ও ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা :
নদী তার গতি হারালে শৈবালে পূর্ণ হয়, জাতি গতি হারালে কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়। কুসংস্কার প্রগতির পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে। দেশের প্রকৃত প্রগতির জন্য কুসংস্কার দূরীকরণ আবশ্যিক। একাজ করতে পারে সুশিক্ষিত কুসংস্কারমুক্ত মনের অধিকারী নাগরিক সমাজ, আর পারে ছাত্রসমাজ। তারা মুক্ত জ্ঞানের অধিকারী। প্রকৃত বিদ্যা সংস্কারমুক্ত মন গঠন করে, সুতরাং ছাত্রছাত্রীরাই দেশকে কুসংস্কার থেকে মুক্ত করতে পারে। তারা আগামী দিনের দেশের ধারক ও বাহক। দেশের নিরক্ষর মানুষদের কাছে বিজ্ঞানের আলো পৌঁছে দিয়ে তাদের যুক্তিবাদী করে তুলতে পারে। মানুষকে শেখাতে হবে কুসংস্কার মানবিকতা বিরোধী। দৈব ও অলৌকিক বলে কিছু হয় না।
এই পৃথিবীতে সকল ঘটনা ও বিষয়ের পিছনে একটা যুক্তি-শৃঙ্খলা রয়েছে। সুতরাং অলীক বিশ্বাসের পিছনে না যাওয়াই উচিত। ছাত্ররা যুক্তিবাদী, তারা যুক্তি দিয়ে মানুষকে সব ঘটনার পিছনের সত্যকে সকলের সামনে তুলে ধরবে, এটাই প্রত্যাশিত। হাঁচি, টিকটিকি, বারবেলা, অমৃতযোগ ইত্যাদি আধিদৈবিক-আধিভৌতিক ব্যাপারগুলি যে মানুষের অন্ধ-সংস্কার ছাড়া কিছু নয় তা ছাত্রছাত্রীরাই ভালো করে সকলকে বোঝাতে পারবে। মানুষ কখনও ডাইনি হয় না, দেবতা কখনও সন্তানের রক্তে খুশি হন না, সতীদাহ হলে কারও কোনো লাভ হয় না, সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণে শুধু হাঁড়িকুড়ি নষ্ট হয়-এইসব বিষয়ে ছাত্রছাত্রীরা মানুষকে বোঝাতে পারে।
উপসংহার :
ছাত্রছাত্রীরা তাদের দায়িত্বের কথা কখনও ভুলবে না, এটাই প্রত্যাশিত। তারা জাতির মানসমুক্তি ঘটিয়ে ভারতবর্ষকে সকল বন্ধনমুক্ত মানবতার মুক্তিতীর্থে প্রতিষ্ঠিত করবে, তাদের কাছে জাতির এই প্রত্যাশা।