বাংলার একটি গ্রামের ছবি বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "বাংলার একটি গ্রামের ছবি" প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলার একটি গ্রামের ছবি বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Banglar Ekti Gramer Chobi Bangla Prabandha Rachana
বাংলার একটি গ্রামের ছবি
'অঞ্জনা নদীতীরে খঞ্জনী গাঁয়
পোড়ো মন্দিরখানি ঠিক তার বাঁয়।'
ভূমিকা বাংলার গ্রাম :
পশ্চিমবঙ্গ গ্রাম দিয়ে ঘেরা দেশ। "শস্য শ্যামলাং মলয়জ শীতলাং"-বাংলার গ্রাম শান্তি দিয়ে ঘেরা, মমতাময়ী প্রকৃতি দিয়ে মোড়া। দূরে নগরের আগ্রাসী থাবার বাইরে আজও বাংলার গ্রাম স্বমহিমায় বিরাজিত। বাংলার প্রায় আশি শতাংশ আজও গ্রামাঞ্চল। নদী-মাঠ-বন শস্যশ্যামল ধানখেত নিয়ে এক একটি জনপদ বাংলার সম্পদ। নগর সভ্যতার আগ্রাসন সত্ত্বেও গ্রাম আজও টিকে আছে তার স্বকীয়তা নিয়ে, তার অপরূপ রূপ নিয়ে। সে মুখের অধরা মাধুরী দেখে কবি জীবনানন্দ বলেছিলেন-
"বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর;"
গ্রামের নাম কদমগাছি : তার পরিচয় :
এমন এক গ্রাম, আমাদের কদমগাছি। কবে কোন্ বিস্মৃত প্রপিতামহকুল পুষ্পিত কদম গাছের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এর নাম রেখেছিলেন কদমগাছি, সে ইতিবৃত্ত জানা নেই। গ্রামের বুক চিরে চলে গেছে রেলপথ ধু-ধু দিগন্তে। একপ্রান্তে তার জেলাশহর বারাসাত, অন্যদিকে ইছামতী তীরে গড়ে ওঠা হাসনাবাদ। এই জনপদের ভেতর কোনোটি ইট-কাঠের কোঠাবাড়ি, কোনোটি টালির ছাউনি, এই জনপদের ভেতর কোনোটি আবার পুরোনো খড়ের দোচালা ঘর। গ্রামের উত্তরে কালো চওড়া টাকী রোড। এরই ধার-ঘেঁষে বিশাল খেলার মাঠের ধারে পাঁচিলঘেরা গ্রামের হাই স্কুল।
একটু তা দূরে পোস্ট অফিস, ডাক্তারখানা। উলটোদিকের মাঠে ছোটো ছোটো খড়ের চালার নীচে হাট। আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ডাক্তারখানা, - মুদির দোকান, সেলুন, বেঞ্চিপাতা চায়ের দোকান, মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। বড়ো পুকুরের কিনারায় বাবা পঞ্চানন্দের মন্দির। সেখানে প্রতি চৈত্র সংক্রান্তিতে গাজনের মেলা বসে। একটু দূরে ছোট্ট সাদা মসজিদ, দরগা, পির সাহেবের মাজার। প্রতি শীতে সেখানে জমজমাট মেলা হয়।
ছয় ঋতুতে গ্রামের নিজস্ব রূপ :
গ্রীষ্মের খরতাপে কদমগাছির শূন্য মাঠগুলিতে ভরে ওঠে ফাটলের অপরূপ নকশা। গ্রীষ্মের কালবৈশাখীর হাত ধরে আসে লাবণ্যময়ী বর্ষা। নীল আকাশের উড়ুনি গায়ে দিয়ে যখন শরৎ আসে তখন মাঠের ধারে ধারে, রেললাইনের পাশ বরাবর মাথা দোলায় কাশের ফুল। দুশো বছরের পুরোনো জমিদার বাড়ির ডাকের সাজে সজ্জিত প্রতিমার সামনে ঢোল বাজায় বৃদ্ধ কেষ্ট ঢুলি। হেমন্তের পূর্ণিমার রাতে একমাঠ ঘন কুয়াশায় মাখামাখি হয় চাঁদের আলো। শীতে ধান কেটে নেওয়া মাঠে ঝুপ ঝুপ করে নামে কত নাম-না-জানা শীতের পাখি। মাটির ছোটো পাত্র-ঝোলানো খেজুর গাছগুলোয় নিঃশব্দে জমা হয় গাছের ক্ষত থেকে মধুর রস।
গ্রামের প্রকৃতি: সমস্যা :
পিচের রাস্তা-যা শহুরে সভ্যতার প্রতীক, তা গ্রাস করে নিচ্ছে প্রকৃতির অনাহত নিষ্পাপ সবুজ। শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ছোঁয়া এসে লেগেছে গ্রামে। কারখানা বসেছে রাস্তার পাশে। শিল্পের ধোঁয়া কৃষিজমির সবুজকে ম্লান করে দিচ্ছে। যান্ত্রিক সভ্যতা আমাদের কদমগাছিকে ক্রমে ক্রমে গ্রাস করে চলেছে।
গ্রামের মানুষ সংকট :
এ গ্রামের মানুষের পারিবারিক পেশা লুপ্ত। জীবিকার সন্ধানে মানুষ দিগ্ভ্রান্ত। চাষিরা কেউ হয়েছে কারখানার শ্রমিক, কেউ সবজির ফড়ে। যুবকেরা চাকরির চেষ্টায় নাজেহাল। টিভির প্রোগ্রাম ও অন্ধ রাজনীতির ঘূর্ণিপাকে মানুষ বাংলার একটি গ্রামের ছবি বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Banglar Ekti Gramer ভুলে যাচ্ছে আত্মীয়তা, বন্ধুত্ব, মানবতার প্রীতির বন্ধন। তবুও এই গ্রামে বেশিরভাগ মানুষ গ্রামীণ ঐতিহ্যের সৌজন্য, ভদ্রতা অক্ষুণ্ণ রেখেছে।
ধীরে ধীরে অবলুপ্তির পথে :
একটি গ্রামের চিত্র, শব্দের বন্ধনে ধরা পড়ে না। যেটুকু ধরা যায়, তাও একটি মুহূর্তের। সময়ের সঙ্গে চলেছে নিত্য পরিবর্তন। এভাবেই মানুষের সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কদমগাছি বাংলার আর-পাঁচটি গ্রামের মতোই এগিয়ে চলেছে। তার ক্ষয়িষু পরিবর্তনশীলতার মাঝে আজও কোথায় যে 'হৃদয়' টুকু রয়ে গেছে, তাই আজও সেখানে ফুল ফোটে, পাখি গান গায়, শিশুরা কলকল রবে হেসে ওঠে।
আরও পড়ুন-