Ads Area


বাংলার সংস্কৃতি বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Banglar Sanskriti Bangla Prabandha Rachana

 বাংলার সংস্কৃতি বাংলা প্রবন্ধ রচনা

পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।

এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "বাংলার সংস্কৃতি" প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলার সংস্কৃতি বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Banglar Sanskriti Bangla Prabandha Rachana


বাংলার সংস্কৃতি বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Banglar Sanskriti Bangla Prabandha Rachana


বাংলার সংস্কৃতি


ভূমিকা :

 জাতিসত্তার বিকাশের ইতিহাসই হল তার সংস্কৃতি। মানবীয় আচার-আচরণ, শিক্ষাদীক্ষা-সহ পারিপার্শ্বিক পরিবেশের নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহের মধ্য দিয়েই সংস্কৃতির জন্ম হয়। কাজেই সংস্কৃতির দর্পণে ধরা পড়ে একটি জাতির বহু শত শতাব্দী ব্যাপ্ত সামাজিক ক্রিয়াকাণ্ড, শিল্পকীর্তি, শিক্ষা, বুচি, সাহিত্যবোধ বা সংগীতচর্চার মতো নানা বিষয়। সবসময়ই যে এই চর্চা উন্নয়নমুখী হবে এমন নয়, অনেক সময় তার অবক্ষয় ঘটতেও দেখি। কিন্তু সব মিলিয়ে জীবনপ্রবাহের মতো কৃষ্টির একটি প্রবাহকেও আমরা লক্ষ করি। নিরবচ্ছিন্ন ধারায় কৃষ্টির এই প্রবাহকেই বলা যেতে পারে একটি বিশেষ জাতির সংস্কৃতি।

বাঙালি সংস্কৃতির উদ্ভব :

বাঙালি একটি মিশ্র জাতি। প্রাচীনকালে এই বদ্ধভূমিতে নিগ্রিটো বা নিগ্রবটু, অস্ট্রিক, দ্রাবিড় ও মঙ্গলয়েড জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করত। তখনও আর্যরা এদেশে আসেনি। তারা নানারকম গাছ, পাথরকেই সেদিন পুজোর আসনে বসিয়েছিল। পরবর্তীকালে আর্যরা এদেশে এলে তাদের সঙ্গে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মানুষের মিলনের ফলে শুধু যে একটি মিশ্র জাতির উদ্ভব হল তাই নয়, সেই সঙ্গে আর্য-অনার্যের দেবদেবীরও মিলন ঘটল। এই মিশ্র জাতি হল আজকের বাঙালির আদিপুরুষ। অন্যদিকে তাদের উভয় সংস্কৃতির মিলনের ফলে একটি মিশ্র সংস্কৃতিরও জন্ম হল। এই সংস্কৃতি হল সমন্বয়ের সংস্কৃতি, এই সংস্কৃতিই হল বাঙালি সংস্কৃতির প্রাণ। তারপর থেকে এদেশে শক, হুন, পাঠান, মোগল, মুসলিম, খ্রিস্টান প্রভৃতি নানা জাতি-ধর্মের মানুষ এসেছে। অত্যাচারীর বেশে এলেও এদেশে থাকতে থাকতে পুরুষানুক্রমে এরাও হয়ে গেছেন বাঙালি বা বাঙালির সাংস্কৃতিক জগৎকে আপন করে নিয়েছেন। এইসব ভিনদেশিদের সংস্কৃতিকে আপন করে নিয়েছে বাঙালিও। ফলে মিশ্র জাতি বাঙালির সাংস্কৃতিক ভাণ্ডারও ক্রমাগত সমৃদ্ধ হয়েছে।

সমন্বয়ের সাধক বাঙালি :

 বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য বাঙালি চিরকালই সমন্বয়ের সাধক। এ শিক্ষা বাঙালি ইতিপূর্বেই পূর্বজন্মের কাছে পেয়েছে। মধ্যযুগের মানবতাবাদী সাধক চৈতন্যদেব একদিন এই সমন্বয়ের ডাক দিয়েছিলেন। আবার এই মাটিতে দাঁড়িয়েই শাক্ত কবি উচ্চারণ করেছিলেন-

ওই যে কালী কৃয় শিব রাম

সকল আমার এলোকেশী

ঊনবিংশ শতকে মানবতাবাদী সাধক শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবও এই মুক্তমনের সাধনায় প্রভাবিত করেছিলেন গোটা বাংলাদেশকে। শুধু রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ নন, ঊনবিংশ শতাব্দীতে রামমোহন, কেশবচন্দ্র সেন প্রমুখের নেতৃত্বাধীন ব্রাহ্মরাও সমন্বয়বাদী ধর্ম ও সাহিত্য সাধনার বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সমগ্র বঙ্গভূমিতে। রবীন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ, যামিনী রায়, নজরুল ইসলাম, সত্যজিৎ রায় এই সমন্বয়বোধ, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের জ্ঞান, মানবিক চেতনাকে সঞ্চারিত করে দিয়েছেন। বাঙালির অন্তরে এই শিক্ষার ফলে ঊনবিংশ শতকের গোড়া থেকে সাহিত্য, ধর্ম, সংগীত, শিল্প, দর্শন, বিজ্ঞান-সর্বক্ষেত্রেই বাঙালি বিশ্ব সংস্কৃতিকে আত্মস্থ করতে শুরু করেছে।

বিশ্বায়ন ও বাঙালি সংস্কৃতি :

বর্তমান যুগ হল বিশ্বায়নের যুগ। আজকের এই হাই টেকনোলজির যুগে জাতিসত্তা ও তার নিজস্ব সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে উঠেছে। ফলে লোকায়ত স্তরের সংস্কৃতি যেমন ব্রত-পার্বণ, স্ত্রী-আচার, বিবাহ বা পরলৌকিক ক্রিয়া কিংবা অন্য কোনো সামাজিক উৎসব, পাঁচালি, কীর্তন, কথকতা, যাত্রার মতো সংস্কৃতির নানা দিকগুলি আজ নগরায়ণের ধাক্কাতে এবং বিশ্বায়নের ফলশ্রুতিতে অনেকটাই বিপন্ন হয়ে পড়েছে। বাঙালি সংস্কৃতির পরিপন্থী পশ্চিমি কৃত্রিম সংস্কৃতি আমাদের সাংস্কৃতিক জগৎকে আচ্ছন্ন করেছে। নতুন এই সংস্কৃতিকে অনেকেই অপসংস্কৃতি বলে দূরে সরিয়ে রাখেন। কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন অপসংস্কৃতি কারও কারও মতে অরুচিকর হলেও তা সংস্কৃতি এবং তাকে আত্মস্থ করে নিজের মতো করে গড়ে নেওয়াও বাঙালি সংস্কৃতির চিরকালের বৈশিষ্ট্য। কাউকে বর্জন করে নয়, সকলকে ভালোবেসে বুকে নিয়ে এগিয়ে চলাই সংস্কৃতির লক্ষ্য।

উপসংহার :

সংস্কৃতি মানুষের অর্জিত সম্পদ। এ সম্পদ বস্তুগত নয়, এ সম্পদ মানুষের ঐতিহ্যগত। বাঙালি যুগ যুগ ধরে পরম্পরাগতভাবে এই ঐতিহ্যকে ধারণ করেছে রক্তে। আর পরম্পরাগত সেই রক্তই বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area