বাংলার উৎসব বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।
এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "বাংলার উৎসব" প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলার উৎসব বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Banglar Utsav Bangla Prabandha Rachana
বাংলার উৎসব
ভূমিকা :
সুজলা-সুফলা যে বাংলাদেশের ছবি বঙ্কিমচন্দ্র এঁকেছেন তার বিপরীত প্রান্তের অন্য এক ছবি এঁকেছেন মুকুন্দ চক্রবর্তীও- 'শিশু কাঁদে ও ওদনের তারে'। আসলে বাঙালি সুখ-সম্পদশালী বোধহয় কোনো দিনিই ছিল না। তাই বাঙালি পরিবার মানেই আমাদের সামনে ভেসে ওঠে হরিহর-সর্বজয়ার (পথের পাঁচালী) পরিবার। এ জীবনে অভাব আছে, দারিদ্র্য আছে। মহামারি, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গার সর্বগ্রাসী ক্ষুধা তাকে বারবার বিপন্ন করেছে। তবু বাঙালি বেঁচে আছে, বেঁচে থাকবে প্রাণের স্পন্দনে, উৎসবে। বাঙালি এই উৎসবের রঙিন দিনগুলি থেকেই সঞ্চয় করে নিয়েছে তার বাঁচার উপাদান।
উৎসবের নানা রূপ :
বাঙালির জীবনে উৎসব নানা রং নিয়ে আসে। ধর্মীয় উৎসবের রং আর ঋতু উৎসবের রং এক নয়। তেমনি সামাজিক উৎসব, সাংস্কৃতিক উৎসব বা জাতীয় উৎসবে-প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা রং, স্বাদ বা মেজাজ নিয়ে আসে বাঙালির মনের দরজায়। আর এই উৎসবের মধ্য দিয়েই বাঙালি অভাব-অনটনের মধ্যেও খুঁজে নেয় প্রাণের রসদ।
ধর্মীয় উৎসব :
ধর্মীয় পরিমণ্ডলের ছায়াতলেই বাঙালি সমাজ গড়ে উঠেছে। ধর্মপ্রাণ বাঙালি তাই জীবনযাপনের প্রতিটি পদক্ষেপে ধর্মীয় অনুশাসন আচার-অনুষ্ঠান মেনে চলে। তাই ধর্মকেন্দ্রিক উৎসবগুলিই বাঙালি জীবনকে সবথেকে বেশি আন্দোলিত করে। উৎসবগুলি বিশেষ ধর্মীয় উৎসব হলেও তা সমস্ত স্তরের সমস্ত ধর্মের মানুষের মধ্যেই ছড়িয়ে যায়। এ জাতীয় উৎসবগুলির মধ্যে আছে দুর্গাপুজো, সরস্বতী পুজো, কালীপুজো প্রভৃতি। এই পুজোগুলিকে কেন্দ্র করে উৎসবে মেতে ওঠে সাধারণ মানুষ। এ ছাড়াও রয়েছে চণ্ডী, মনসা, শীতলা, টুসু, ভাদু, দক্ষিণ রায়, রথযাত্রা, দোলযাত্রা, ঝুলন যাত্রা, রাস পূর্ণিমা, রাখি পূর্ণিমা, চড়ক-গাজন প্রভৃতি ধর্মীয় অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক উৎসব।
এর সঙ্গে রয়েছে বাঙালি মুসলমানদেরও নানা ধর্মীয় উৎসব। যেমন ইদলফেতর, ইদুজ্জোহা, মহরম, সবেবরাত প্রভৃতি। এই উৎসবের দিনগুলিতে অন্য ধর্মের মানুষেরাও আনন্দ ভাগ করে নেন। খ্রিস্টানরা পালন করেন বড়োদিন, গুড ফ্রাইডে, ইস্টার স্যাটারডে। বড়োদিনের উৎসব এখন সমস্ত বাঙালির সাধারণ উৎসবে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে নানক-জয়ন্তী, বুদ্ধজয়ন্তী, পরেশনাথের উৎসব। এই উৎসবগুলি ধর্মীয় উৎসব হলেও প্রকারান্তরে তা হয়ে উঠেছে মানুষের উৎসব।
সামাজিক ও ঋতু উৎসব :
বাঙালি শুধু ধর্মীয় আবেগপ্রবণ জাতি নয়, সেই ধর্মীয় অনুভূতির সঙ্গে মিলিয়ে নিয়েছে তার নানা পারিবারিক বা সামাজিক অনুষ্ঠান। যেমন অন্নপ্রাশন, বিবাহ, জামাইষষ্ঠী, ভ্রাতৃদ্বিতীয়া। দৈনন্দিন জীবনের নানা প্রয়োজনের সঙ্গে জড়িত এই উৎসবগুলিতে সমগ্রভাবে গোটা বাঙালি সমাজ যুক্ত না হলেও বহু মানুষই এগুলিকে ঘিরে আনন্দে মেতে ওঠে। নানা ঋতুকে ঘিরেও উৎসবে মেতে ওঠে বাঙালি। বর্ষামঙ্গল, পৌষমেলা, নবান্ন, নববর্ষের মতো নানা ঋতুকেন্দ্রিক উৎসবের মধ্য দিয়ে দুঃখ, দারিদ্র্য, অভাবপীড়িত বাঙালি নতুন করে নব আনন্দে জেগে ওঠে।
উপসংহার :
বাঙালি মাত্রই উৎসবপ্রিয়। তাই যে-কোনো বিষয়কেই তারা উৎসবে রূপায়িত করে। একালে ঐতিহ্যবাহিত উৎসবগুলির পাশাপাশি গ্রামীণ ঐতিহ্যকে মনে রেখে কিছু নাগরিক উৎসবের সূচনা ঘটেছে। যেমন-পিঠে-পুলি উৎসব, ইলিশ উৎসব, মাটি উৎসব ইত্যাদি। আবার এরই সঙ্গে কিছু জাতীয় দিবসকেও উৎসবের চেহারা দেয় বাঙালি মন। যেমন-১৫ আগস্ট, ২৩ জানুয়ারি, ২৬ জানুয়ারি, ২৫ বৈশাখ-এর মতো দিনগুলিতে বাঙালি মাত্রই সকাল হলেই উৎসবের মেজাজে জেগে ওঠে। নানা সাংস্কৃতিক উৎসবকেও বাঙালি তার জীবনযাত্রার অঙ্গ করে তুলেছে। এর মধ্যে চলচ্চিত্র উৎসব, নাট্যোৎসব, কবিতা উৎসব, বইমেলা উৎসব উল্লেখযোগ্য। কলকাতার আন্তর্জাতিক বইমেলার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলার আঞ্চলিক বইমেলাগুলিও উৎসবের মেজাজ তৈরি করে স্থানীয় ভাবে।