Ads Area


ভারতবর্ষে আধুনিক শিক্ষার জনক বিদ্যাসাগর বাংলা রচনা || Bengali Grammar Class-10

ভারতবর্ষে আধুনিক শিক্ষার জনক বিদ্যাসাগর বাংলা রচনা

পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।

এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "ভারতবর্ষে আধুনিক শিক্ষার জনক বিদ্যাসাগর " প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতবর্ষে আধুনিক শিক্ষার জনক বিদ্যাসাগর বাংলা রচনা || Bengali Grammar Class-10


ভারতবর্ষে আধুনিক শিক্ষার জনক বিদ্যাসাগর বাংলা রচনা || Bengali Grammar Class-10




ভারতবর্ষে আধুনিক শিক্ষার জনক বিদ্যাসাগর


"বীরসিংহের সিংহ শিশু বিদ্যাসাগর বীর। 

উদ্বেলিত দয়ার সাগর বীর্যে সুগম্ভীর।" 

(সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত)


ভূমিকা :

উনিশ শতকের বঙ্গে যিনি আত্মতেজের মহান অগ্নি প্রজ্বলিত করে মানবতার জয়গান গেয়েছেন, তিনি প্রাতঃস্মরণীয় মহামানব, বীরসিংহের সিংহশিশু, দয়ার সাগর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন- "আমাদের এই মানুষের সমাজে দেবতার চেয়ে অনেক বেশি দুর্লভ মানুষ ছিলেন বিদ্যাসাগর"। সমাজকে কুসংস্কারমুক্ত করে নবজীবনের স্রোতধারায় চালিত করার গুরুভার তিনি মাথায় নিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন যেন কর্তব্যে বজ্রের চেয়েও কঠোর, আবার স্নেহ-মমতায় কুসুমের চেয়ে কোমল। "বজ্রাদপি কঠোরানি মৃদুনি কুসুমাদপি।"

জন্মপরিচয় :

 বিদ্যাসাগর ১৮২০ সালে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পিতার নাম ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, মাতার নাম ভগবতী দেবী।

অজেয় পৌরুষ ও মানবধর্ম :

বিদ্যাসাগরের ঈশ্বর ছিল মানুষ এবং স্বদেশ। তিনি এক সর্ববন্ধনমুক্ত সমাজ ও দেশ দেখতে চেয়েছিলেন। তিনি অনুভব করেছিলেন যুগ যুগ ধরে হাজারটা সংস্কার, রীতিনীতি দেশের সমাজের ওপর চেপে বসে আছে। তার থেকে মুক্তির জন্য সর্বস্ব পণ করেছিলেন তিনি। শিক্ষা-সংস্কারের মাধ্যমে সমাজ গঠনই ছিল তাঁর জীবনের প্রাথমিক লক্ষ্য। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন সমাজের শিক্ষার অভাব অনগ্রসরতার মূল কারণ। এই কুসংস্কারাচ্ছন্ন জড়তাগ্রস্ত সমাজের জাগরণের জন্য চাই কার্যকরী প্রগতিশীল পাশ্চাত্য শিক্ষা। তাই শিক্ষার আলোক বিকীর্ণ করে অজ্ঞতাজনিত কুসংস্কার দূর করাই ছিল বিদ্যাসাগরের সমাজসংস্কারের প্রধান লক্ষ্য।

তাই শিশুশিক্ষা ও নারীশিক্ষার জন্য তিনি সচেষ্ট হন এবং প্রকৃত লোকশিক্ষকের ভূমিকা গ্রহণ করেন। যুগোপযোগী শিক্ষাবিস্তারের উদ্দেশ্যে তিনি একক প্রচেষ্টায় মেট্রোপলিটন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বহু বিদ্যালয় তিনি প্রতিষ্ঠা করেন। 

বহু নারীশিক্ষা কেন্দ্র ও বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে তিনি নারীসমাজের মুক্তি ঘটাতে চেয়েছিলেন। তিনি নারীদের দুর্দশার কারণ যে অশিক্ষা ও শিক্ষাহীনতা তা বুঝেছিলেন। তাই তো তিনি নারীশিক্ষা বিস্তারে তাঁর অর্জিত অর্থের বহুলাংশ ব্যয় করেছিলেন। সেই সঙ্গে নারী মন থেকে কুসংস্কার দূর করার জন্য তাদের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারও ঘটাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন।

শিক্ষার প্রসার ও গ্রন্থরচনা :

শিক্ষার মধ্যেই আছে সমাজের মুক্তির চাবিকাঠি, এই কথা বিদ্যাসাগর বিশ্বাস করতেন। শিশুদের শিক্ষার জন্য তিনি রচনা করলেন বর্ণপরিচয়, কথামালা, আখ্যানমঞ্জুরী, চরিতাবলি, বোধোদয় প্রভৃতি গ্রন্থ। আরও পরে লিখলেন সীতার বনবাস, শকুন্তলা প্রভৃতি গ্রন্থ। শিক্ষা বিভাগের পরিদর্শক হিসেবে চাকরি করার সময় তিনি বাংলার দুর্গম অঞ্চলের শিক্ষার দুরবস্থা সরকারের নজরে আনেন। কখনও সরকারের সহযোগিতায়, কখনও-বা একক প্রচেষ্টায় তিনি বহু প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

বিধবাবিবাহ প্রতিষ্ঠা ও সমাজসংস্কার :

বিদ্যাসাগর ছিলেন একাধারে শিক্ষাব্রতী ও সমাজসংস্কারক। বিধবাবিবাহ প্রচলন ও বাল্যবিবাহ রোধ ছিল তাঁর বিশেষ কীর্তি। এ ছাড়া কৌলীন্য প্রথা ও বহু বিবাহের তিনি ছিলেন ঘোরতর বিরোধী।

বাংলা গদ্যের উন্নতি :

 "শ্রী ছাঁদহীন বাংলা ভাষাকে সংযত ও সুবিন্যস্ত করে বিদ্যাসাগরই শিল্পরূপ দান করেছিলেন।” তাই তিনি বাংলা গদ্যের জনক নামে আখ্যাত। বিদ্যাসাগর ছিলেন প্রকৃত 'হিউম্যানিস্ট', ফিলানথ্রোপিস্ট (Philanthropist-মানবহিতৈষী)। তাঁর শিক্ষাপদ্ধতি ছিল মানবকল্যাণমুখী। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন-“তাঁর শিক্ষাবিস্তারে কেন্দ্রীয় মূল্যমান ছিল মনুষ্যত্ববোধ।" এটাই আধুনিক শিক্ষা-চিন্তারও মূলকথা।

মহাপ্রয়াণ :

১৮৯১ সালে এই মহাপুরুষের মহাপ্রয়াণ ঘটে। শিক্ষাসংস্কার, আধুনিক শিক্ষার প্রচলন, নারী ও শিশুশিক্ষার বিস্তার ও ইংরেজি শিক্ষার প্রসারে বিদ্যাসাগরের সক্রিয় ভূমিকাটি আজও দেদীপ্যমান। মানবপ্রেমের এমন করুণাঘন মূর্তি আর মেলে না। তাই, মহাকবি মধুসূদন দত্ত বলেছেন- "বিদ্যারসাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে করুণার সিন্ধু তুমি সেই জানে মনে- দীন যে দীনের বন্ধু!”

আরও পড়ুন-

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area