Ads Area


বাংলা শিশু-কিশোর সাহিত্যের বিভিন্ন চরিত্র বাংলা রচনা || Bengali Grammar Class-X

 বাংলা শিশু-কিশোর সাহিত্যের বিভিন্ন চরিত্র বাংলা রচনা

পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।

এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "বাংলা শিশু-কিশোর সাহিত্যের বিভিন্ন চরিত্র" প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।


বাংলা শিশু-কিশোর সাহিত্যের বিভিন্ন চরিত্র বাংলা রচনা || Bengali Grammar Class-X


বাংলা শিশু-কিশোর সাহিত্যের বিভিন্ন চরিত্র বাংলা রচনা || Bengali Grammar Class-X 



বাংলা শিশু-কিশোর সাহিত্যের বিভিন্ন চরিত্র


ভূমিকা :

শিশুমাত্রই ভাবুক ও কল্পনাবিলাসী। শিশুমন কল্পনায় ভেসে ভেসে মনের মাঝে গড়ে তোলে এক কল্পলোকের সব পেয়েছির দেশ। কখনও রাক্ষস-খোক্ষস, কখনও ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমি, আবার কখনও রূপকথার রাজা-রানি-মৎস্যকন্যা-জলপরিরা ভিড় করে থাকে তাদের মনে। ছোটো শিশু কাগজের নৌকা বানিয়ে পাড়ি দেয় নতুন নতুন দেশ। এই শিশুদের নিয়ে সমগ্র বিশ্বসাহিত্যে লোককথা-রূপকথা যেমন অনেক, তেমনই কালজয়ী লেখকদের ছড়া-কবিতা-গল্প ও উপন্যাসের সংখ্যাও প্রচুর। স্বাভাবিকভাবেই সৃষ্টিশীল বাঙালির চিন্তাভাবনার প্রকাশ ঘটেছে তার শিশু সাহিত্যের পাতায়। প্রথমে পাঠ্য বইয়ের প্রয়োজনে নীতিশিক্ষামূলক গল্প দিয়ে এর আরম্ভ হলেও পরে ধীরে ধীরে শিশুমনের উপযোগী বাংলা মৌলিক রচনার জন্ম হয়েছিল।

শিশু-কিশোর সাহিত্যের চরিত্রেরা :

বাংলা শিশু সাহিত্যের চরিত্রগুলিকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। একদিকে রূপকথা-লোককথার বিভিন্ন চরিত্র, আর এক দিকে শিশুদের জন্য ভিন্ন স্বাদের মৌলিক গল্পের নানান চরিত্রেরা। এই রূপকথায় আমরা পাই রাজপুত্রের জয়, রাজকন্যাকে উদ্ধার ও দুখিনী সুয়োরানি-দুয়োরানির গল্প। বুদ্ধভূতম, বাঁদর ও পেঁচা, রাজার ছেলে এরাই হল গল্পের চরিত্র। এই রূপকথার রাজ্যের লালকমল-নীলকমল হীরামন পাখি, এদেরকে নিয়েই বসেছে গল্পের আসর। 

১৯০৭ সালে প্রকাশিত লালকমল-নীলকমল-বুদ্ধভূতম-শীত-বসন্ত-অরুণ-বরুণ-কিরণমালাদের নিয়ে প্রকাশিত সচিত্র সংকলন 'ঠাকুরমার ঝুলি', (দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের)-র চরিত্রগুলিকে আমরা কখনোই ভুলতে পারি না। এ সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, 'ঠাকুরমার ঝুলিটির মতো এত বড়ো স্বদেশি জিনিস আমাদের দেশে আর কি আছে?' অন্য দিকে বাংলা মৌলিক শিশু-কিশোর সাহিত্যের বৈচিত্র্যপূর্ণ ধারায় অজস্র আশ্চর্য চরিত্রকে আমরা পেয়েছি। 

সুকুমার রায়ের 'পাগলা দাশু', 'হযবরল'-এর 'ন্যাড়া', 'প্রোফেসর হিজবিজবিজ', খগেন্দ্রনাথ মিত্রের 'ভোম্বল সর্দার', প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'ঘনাদা' কিংবা গল্পবাজ আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের 'গাঁজাখুরি'-র, 'পিন্ডিদা'কে শিশুমন স্থায়ী আসন দিয়েছে। চালাকবাজ 'অমরেশ' অমর হয়ে রয়েছে বিধায়ক ভট্টাচার্যের হাতে। আবার নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'টেনিদা', শিবরাম চক্রবর্তীর 'হর্ষবর্ধন ও গোবর্ধন'-কে আমরা ভুলি কি করে! রাজকুমার মৈত্রের 'বগলামামা' বা শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'মিস্টার ব্লেক', সাধু 'কালাচাঁদ' আজও শিশু-কিশোর মনকে মাতিয়ে রেখেছে।

এ ছাড়া হেমেন্দ্রকুমার রায়ের 'বিমলকুমার-জয়ন্ত-মানিক-সুন্দরবাবু', শরদিন্দুর 'সদাশিব' এবং বুদ্ধদেব গুহর 'ঋজুদা' কিছুটা ভিন্ন স্বাদের হলেও অ্যাডভেঞ্চারের জন্য আমাদের কাছে জনপ্রিয়। সত্যজিৎ রায়ের কল্পবিজ্ঞান গল্পের চরিত্র প্রোফেসার 'শঙ্কু' বাংলা শিশু-কিশোর সাহিত্যের একটি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী সংযোজন।

বাংলা সাহিত্যের গোয়েন্দারা :

তবে আজকাল গোয়েন্দা নায়কেরা বাংলা শিশু সাহিত্যে বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। প্রতিটি নায়কদের মধ্যে লুকিয়ে আছে এক অনন্য বাঙালিয়ানা। এদের মধ্যে বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্যকে খুব সুন্দরভাবে খুঁজে পাওয়া যায়। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'ব্যোমকেশ', নীহাররঞ্জন গুপ্তের 'কিরীটী রায়', সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের 'কর্নেল', সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'কাকাবাবু ও সন্তু', সমরেশ বসুর 'গোগোল', বিমল করের 'কিকিরা' এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। বিশেষত সত্যজিৎ রায়ের 'ফেলুদা' অধুনা কিশোরদের মনে বিশেষ এক স্থান করে নিয়েছে।

শিশু-কিশোর সাহিত্যের বিভিন্ন চরিত্র প্রসঙ্গে আলোচনাকালে বাংলা কমিকসের চরিত্রগুলির কথা না বললে আলোচনাটি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। সুকুমার রায় ১৯২২ সালে 'সন্দেশ' পত্রিকার জন্য নিজস্ব অননুকরণীয় ভঙ্গিতে লিখেছিলেন 'বুঝবার ভুল' নামে ছয় লাইনের একটি কবিতা, যার প্রতি দুই লাইনের মাথায় ছিল একটা করে ছবি। মনে হয়, এই ন্যারেটিভ ফর্মে লেখা 'বুঝবার ভুল' দিয়েই বাংলা কমিকসের সূত্রপাত। সেকালে তিরিশ 'পিসিয়েল'-এর 'খুড়ো' মাতিয়ে দিয়েছিল বাংলার হৃদয়। একইভাবে 'শেয়াল পণ্ডিত' সিরিজও ছোটোবড়ো সকলের মন মাতিয়েছিল। পরবর্তীতে নারায়ণ দেবনাথের আঁকা ও লেখায় 'হাঁদাভোঁদা', 'বাঁটুল দি গ্রেট', 'নন্টে ফন্টে' বাংলার কমিকসের চরিত্র হিসেবে আমাদের মনে অবিস্মরণীয় হয়ে রয়েছে। এরপরে ময়ুখ চৌধুরী, পূর্ণেন্দু পত্রী ও চন্ডী লাহিড়ীর সৃষ্ট কমিকসের বিভিন্ন চরিত্রও আমাদের মনে চিরকালীন ছাপ রেখে গেছে।

উপসংহার :

উপরের আলোচনা থেকেই স্পষ্ট অজস্র আশ্চর্য ও বৈচিত্র্যপূর্ণ চরিত্রের সাক্ষ্য বহন করছে বাংলা শিশু-কিশোর সাহিত্য। এখানে উল্লেখ্য বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'অপু' কিংবা শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'শ্রীকান্তের' 'ইন্দ্রনাথের' মতো চরিত্রের, সমগ্র বিশ্বসাহিত্যেই যার জুড়ি মেলা ভার। বাঙালির বহুবিচিত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে এইসব চিত্রগুলি আমাদের সামনে এসে হাজির হয়। তাই এদের মধ্যে কখনও আমরা নিজেদের খুঁজে পাই, আবার কখনও নিজেদের অজ্ঞাতে এদের মতো হওয়ার চেষ্টা করি। তাই তো এরা চিরকালের, তাই তো এরা সার্থক।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area