বইমেলা বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।
এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "বইমেলা" প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বইমেলা বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Boi Melay Bangla Prabandha Rachana
বইমেলা
ভূমিকা :
মেলা বঙ্গসংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। মেলা বাঙালির মহামিলন স্থল। মেলায় বাঙালি পেয়েছে সঞ্জীবনী প্রাণশক্তি। একদা একটি মেলাকে কেন্দ্র করে বাংলার নবজাগরণ দেখা দিয়েছিল। সেটি নবগোপাল মিত্র মহাশয়ের 'হিন্দুমেলা'। বর্তমানে 'বইমেলা'কে কেন্দ্র করেও বলা যায় একটা জাগরণ দেখা দিয়েছে শহরে, নগরে, গ্রামে-গঞ্জে।
বইমেলা :
জ্ঞানের প্রসারের ক্ষেত্রে বই হল একটি বড়ো মাধ্যম। তাই ইংল্যান্ড, আমেরিকা, জার্মানি প্রভৃতি স্থানে প্রতি বৎসর বৃহৎ জাতীয় মেলার অঙ্গ-স্বরূপ বইয়ের প্রদর্শনী বসে। পরবর্তীকালে একক ও স্বতন্ত্র মেলা রূপে বইমেলা প্রচলিত হয়। পৃথিবীর বইমেলাগুলির মধ্যে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুটের স্থায়ী বইমেলাটি সবচেয়ে বড়ো।
মনুষ্যত্ব বিকাশের মাধ্যম :
শিক্ষিত মানুষের বেঁচে থাকার অন্যতম রসদ হল বই। বই হল আয়নার মতো, যাতে আমাদের মনের প্রতিবিম্ব ধরা পড়ে। বইয়ের মতো অন্তরঙ্গ সহচর পৃথিবীতে আর কিছু নেই। আমাদের নিঃসঙ্গ মুহূর্তগুলিকে বই ভরিয়ে তোলে। শিশু-কিশোরের কাছে বই দিগ্দর্শনের কাজ করে। তবে বইমেলা সাধারণভাবে অনুষ্ঠিত রথের মেলা, গাজন মেলা প্রভৃতি মেলাগুলি থেকে একটু স্বতন্ত্র। এটা বইপ্রেমী মানুষের মিলনতীর্থ।
মিলনমেলা :
বইকে কেন্দ্র করে বইমেলা প্রাঙ্গণে এক হৃদ্য পরিবেশে সামাজিক মেলবন্ধন গড়ে উঠতে দেখা যায়। বইমেলায় প্রকাশক এবং পুস্তক বিক্রেতারা বিশ্বের নানা প্রান্তের নানা বিষয়ের বই এনে বিভিন্ন রুচির মানুষের সামনে হাজির করেন। সাধ আছে সাধ্য নেই, এমন বইপ্রেমী মানুষ বইমেলায় এসে বিভিন্ন বইয়ের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। বইমেলা জ্ঞানের অসীম ভান্ডারকে আমাদের সামনে উন্মুক্ত করে দেয়। বইমেলার উপযোগিতা দ্বিবিধ। বইমেলায় পাঠক বিপুল সংখ্যক বইয়ের সান্নিধ্যে এসে যেমন আনন্দ পায়, তেমনি প্রকাশক ও বিক্রেতারা বাণিজ্য করার সুযোগে সামগ্রিকভাবে লাভবান হয়।
পশ্চিমবঙ্গে বইমেলা :
পৃথিবীর সবদেশেই এখন বইমেলা বসে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেও বইমেলার আয়োজন হয়। কলকাতার বইমেলা আন্তর্জাতিক স্তরে উন্নীত হয়েছে। সরকারি উদ্যোগে 'পশ্চিমবঙ্গ গ্রন্থমেলা' অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় সাত/দশ দিনের বইমেলা হয়। এসব মেলায় গ্রামের সর্বস্তরের মানুষ ভিড় করেন। যাঁরা সবসময় বই কেনা বা পড়ার সুযোগ পান না, এইসব মেলায় এসে তাঁরা বহু নতুন বই হাতে করে দেখতে ও পড়তে পারেন। কলকাতার বইমেলা প্রায় দু'যুগ ধরে চলে আসছে। বই পড়তে উৎসাহ দেওয়ার পক্ষে এই মেলার ভূমিকা ভোলার নয়।
বইমেলা আসলে আনন্দমেলা। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, "মানুষ বই দিয়ে অতীত ও ভবিষ্যতের মধ্যে সাঁকো বেঁধে দিয়েছে।" ভিক্টর হুগো বলেছেন, "বই বিশ্বাসের অঙ্গ, বই মানবসমাজকে সভ্যতা টিকিয়ে রাখার জ্ঞান দান করে। অতএব বই হচ্ছে ভারতের রক্ষাকবচ।” সভ্যতার প্রতিবিম্বকে স্থায়ীরূপে ধরে রাখে বই। সুখ-দুঃখে, সুন্দরে-অসুন্দরে, ভালো-মন্দ মানুষের জীবন। এক-একটা বই যেন এক-একটা জীবনের চলমান প্রতিবিম্ব। অনন্ত মানুষের অফুরন্ত জীবন নিয়েই মানুষের পরিপূর্ণ মহাজীবন। সেই মহাজীবনের মেলা 'বইমেলা'। বইকে সর্বজনীন করার জন্য বইমেলার গুরুত্ব অপরিসীম। বইমেলা নবীন লেখকদের কাছে প্রতিভা-বিকাশের মুক্তমেলা। নবীন লেখকদের রচনা প্রকাশিত হয় বইমেলায়। তা ছাড়া এই মেলা উপলক্ষ্যে শিল্পী-কলাকুশলীরাও তাঁদের সৃষ্টিসম্ভার নিয়ে উপস্থিত হতে পারেন। এইভাবে বইমেলা প্রকৃতই এক মিলনমেলা হয়ে ওঠে।