চরিত্র গঠনে খেলার উপযোগিতা বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।
এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "চরিত্র গঠনে খেলার উপযোগিতা" প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
চরিত্র গঠনে খেলার উপযোগিতা বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Charitra Gathane khelar Upayogita
চরিত্র গঠনে খেলার উপযোগিতা
ভূমিকা :
"দুর্বল মস্তিষ্ক কিছুই করতে পারে না। আমাদিগকে উহা বদলাইয়া সবল মস্তিষ্ক হইতে হইবে। তোমরা সবল রা হও। গীতা পাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলিলে তোমরা স্বর্গের সমীপবর্তী হইবে।” স্বামী বিবেকানন্দের এই বহু চর্চিত উক্তিটির মসো সুস্থ-সবল দেহমনের পরিপূর্ণ বিকাশের জয়ধ্বনি ঘোষিত হয়েছে। চাষি যেমন জমিতে বীজ রোপণের আগে সমস্ত আগাছা তুলে দূর করে, ঠিক তেমনই মানুষের মনের জমি থেকে আলস্য, ক্লান্তি ও জড়তার আগাছা নির্মূল করতে খেলাধুলার কোনো বিকল্প নেই।
তাই সভ্যতার জন্মলগ্ন থেকেই আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু এবং সাহস বিস্তৃত বক্ষপটের অধিকারী মানুষের দৈনন্দিনতার সঙ্গী হল খেলাধুলা। আমরা জানি শিশু-কিশোরদের বেড়ে ওঠার পথে জ্ঞানচর্চা ও খেলা পরস্পরের পরিপুরক ভূমিকা পালন করলে মানবমন সুন্দরভাবে বিকশিত হবে। কারণ পরিপূর্ণ দৈহিক এবং মানসিক বিকাশের ফলেই কোনো মানুষের পূর্ণাঙ্গ চরিত্রগঠন সম্ভব হয়। আর সত্যি কথা বলতে জীবনে চলার পথে খেলাধুলার মধ্যেই মানুষ খুঁজে পায় অফুরন্ত আনন্দের চাবিকাঠি।
প্রাচীন যুগের খেলা :
প্রাচীন কাব্য বা পুরাণের গল্প পড়লে খেলার কথা পাওয়া যায়। দ্রোণাচার্যের সঙ্গে পাণ্ডব ও কৌরবদের খেলতে খেলতেই সাক্ষাৎ ঘটেছিল। তাদের অস্ত্রশিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ চিল শরীরচর্চা। নিহাররঞ্জন রায়ের 'বাঙালির ইতিহাস' বইয়ে নানা মল্লযুদ্ধ ও শারীরিক কসরতের উল্লেখ পাওয়া যায়। রাজদরবারে পাশাখেলা মগজাস্ত্রের অনুশীলন ছাড়া আর কিছুই নয়। এ ছাড়া অনেককাল আগে থেকেই কুস্তি, লাঠিখেলা প্রভৃতির প্রচলন ছিল। এই ভাবে মহরমের ক্রীড়াকৌশল, শরীরচর্চারই এক উৎকৃষ্ট নিদর্শন।
বর্তমানে খেলাধুলার চর্চ্চা :
খেলাধুলার প্রতি শিশুর আকর্ষণ সহজাত। জন্মের পর হাত-পা ছোঁড়ার মধ্যে দিয়ে যে খেলা শুরু, তা ক্রমশ ঘরে এবং ঘর থেকে বাইরে মাঠে তাকে টেনে নিয়ে যায়। এই মুক্তি তার চরিত্রকে উন্মুক্ত ও প্রসারিত করে। তাই আধুনিক শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ হল খেলাধুলা ও শরীরচর্চা। স্কুলের পাঠক্রমে বাধ্যতামূলকভাবে এসেছে দৌড়, হা-ডু-ডু, খো-খো, ব্যায়াম, যোগাসন, জিমন্যাস্টিকস, টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন, ফুটবল, ক্রিকেট প্রভৃতি নানান ধরনের ব্যক্তিগত ও দলগত খেলা।
অনেকে মিলে খেলতে অভ্যস্ত দলগত খেলাগুলিতে খেলার হার-জিতের পাশাপাশি এক বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবনারও জন্ম হয়। শিশু মনে সহযোগিতা ও সহানুভূতির বিকাশ ঘটে। এখানে উল্লেখ্য পরাধীন ভারতে শরীরচর্চার জন্য ব্রতচারী শিক্ষা শুরু করেছিলেন গুরুসদয় দত্ত। ব্রতচারী এমনই একটি চর্চা যা নাচগানের মধ্যে দিয়ে শরীর ও মনকে বিকশিত হতে সহায়তা করে। তিনি জ্ঞান, শ্রম, সত্য, একতা এবং আনন্দ-এই পাঁচটি ব্রত নিয়ে কিশোরদের উদ্দীপিত করতে প্রয়াসী হয়েছিলেন। বর্তমানে চরিত্রগঠনের উপায় হিসেবে ব্রতচারীকে বিদ্যালয় পাঠক্রমে অনুর্ভুক্ত করা হয়েছে।
খেলাধুলা ও চরিত্রগঠন :
শরীরের সঙ্গে মনের আনন্দের জন্যও খেলাধুলার প্রয়োজন। খেলা আমাদের জানবার বাসনাকে বাড়িয়ে দেয়। ক্লান্তি দূর করে। খেলার মধ্য দিয়ে মানুষ যেমন নিয়মের অনুবর্তী হয় তেমনি সময় সম্পর্কে সচেতন হতে শেখে। কেননা খেলায় যেমন আনন্দ আছে, তেমনই তার মধ্যে শৃঙ্খলা ও ঐক্যবোধের শিক্ষাও আছে। খেলতে হলেই নিয়ম মানতে হয়। অথচ খেলার আনন্দে শিশুরা বোঝে না যে সে একাগ্র মনে কোনো কিছু মান্য করতে শিখছে। এমনকি অপরের নেতৃত্ব মেনে চলা কিংবা অন্যকে নেতৃত্ব দিতে শেখা যায় খেলার মাধ্যমে। যুথবদ্ধ জীবনের আনন্দ মানুষ খুঁজে পায় দলগত খেলার প্রাণবন্ততার মধ্যে। ব্যক্তিস্বার্থের গণ্ডিতে আঁটকে না থেকে খেলার মধ্য দিয়েই শিশু-কিশোর অর্জন করে বিপদকে জয় করার শক্তি। খেলার হাত ধরে সকলেই আত্মবিশ্বাসী হতে শেখে।
উপসংহার :
খেলাধুলায় সংযম ও শৃঙ্খলার চর্চা থাকায় চারিত্রিক দৃঢ়তা এবং মানসিক বলিষ্ঠতার জন্ম হয়। খেলার সাফল্য এবং ব্যর্থতা আমাদের জীবন সম্পর্কেও গভীর প্রত্যয়ী করে তোলে। মনের প্রকৃত ভারসাম্য বা sportsman's spirit এর খোঁজ মানুষতো খেলার মাঠেই লাভ করে। ধৈর্য, সাহস, দক্ষতা, একাগ্রতা, সহ্যশক্তি, উদারতা ও সর্বোপরি মানুষকে ভালোবাসার গভীর উপলব্ধি জন্মায় খেলার মধ্য দিয়ে। এ সমস্ত কারণেই একজন সফল খেলোয়াড় কোনো দেশ বা জাতি তথা এ পৃথিবীর আদর্শ বা আইকন হয়ে উঠতে পারেন, যাকে অন্যরা অনুসরণ করতে ভালোবাসে।
তাই এ দরিদ্র দেশে সম্ভাবনাময় অজস্র শিশু-কিশোর যেন খেলার সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয় সেই দিকে সরকারকে সতর্ক হতে হবে। খেলাধুলা যাতে অনেকের জীবিকার পথ হয়ে উঠতে পারে, যেন সে বিষয়েও সদর্থক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। সর্বোপরি সকলেই খোলা মাঠে খেলার সুযোগ পেলে হয়ে উঠবে সবল, উদার, অকুতোভয়, সচল ও গতিশীল। আমরা সমাজকে এই ব্যাপ্তিই তো দিতে চাই।