Ads Area


বাঙালির কীর্তনগান বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Class-10 Bangla Prabandha Rachana

 বাঙালির কীর্তনগান বাংলা প্রবন্ধ রচনা

পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।

এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "বাঙালির কীর্তনগান" প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বাঙালির কীর্তনগান বাংলা প্রবন্ধ রচনা ||  Class-10 Bangla Prabandha Rachana


বাঙালির কীর্তনগান বাংলা প্রবন্ধ রচনা ||  Class-10 Bangla Prabandha Rachana 


বাঙালির কীর্তনগান


ভূমিকা :

সংগীত মানুষের সৃষ্টিশীলতার আদিমতম প্রকাশ। এই গানই হল পৃথিবীর আদিমতম শিল্প। সভ্যতার সেই আদি যুগে প্রথমে প্রকৃতির নানান অনুষঙ্গে এবং পরে নিজের শরীর ও প্রাণসত্তার গভীরে মানুষ পেয়েছিল সুর-তাল-লয় ও ছন্দের ধারণা। তাই যে-কোনো জাতির সাংস্কৃতিক ইতিহাসের থেকে সেই জাতির সংগীতের ইতিহাসকে কোনো ভাবেই বিচ্ছিন্ন করা যায় না। বাঙালি জাতির দেহ ও প্রাণ যেন সামগ্রিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল তার পদাবলি কীর্তনে। কারণ বাঙালির জীবনযাত্রায় কীর্তন তার অন্তর্গত স্বরূপকে সবচেয়ে উজ্জ্বলভাবে মেলে ধরেছিল।

কীর্তনের স্বরূপ :

মধ্যযুগে বাঙালি হৃদয়ের গীতিময়তা প্রাণ পেয়েছিল বৈয়ব পদাবলিতে। ওই বৈয়ব পদাবলিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল কীর্তন। কীর্তন শব্দটি কীর্তিগাথা গানেরই নামান্তর। আসলে কীর্তিগাথা গান থেকে 'কীর্তন' শব্দ ও কীর্তন গানের সৃষ্টি। বাচস্পত্য অভিধানকর 'কীর্তি' শব্দটি 'খ্যাতি' বা 'যশঃ' অর্থেই ব্যবহার করেছেন। মনু 'যশস্ব কীর্তিশ্চ' প্রভৃতি শ্লোকে যশ বা কীর্তিসূচক গানকেই কীর্তন বলেছেন।

 খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতকে শাঙ্গদেব তাঁর 'সংগীত রত্নাকর' গ্রন্থে লেখেন মঙ্গলারম্ভ- আনন্দবন্ধন ও কীর্তিলহরী-এই তিন শ্রেণির গানের মধ্যে কীর্তিগান বা 'কীর্তন' শেষোক্ত কীর্তি পূর্বিকালহরী বা কীর্তিলহরী শ্রেণিরই অন্তর্গত। ঈশ্বরের নাম, লীলা ও গুণাবলির উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণাকেই বলা হয় কীর্তন। মারাঠি ভক্তকবি তুকারামের অভঙ্গগুলিকেও 'কীর্তন' বলা হয়, তবে বাংলায় যেভাবে কীর্তন একটি স্বতন্ত্র সংগীত ধারার সৃষ্টি করেছে এমনটা আর কোথাও দেখা যায় না। 'ভজন' ও 'কীর্তন' দুই-ই ঈশ্বরের উদ্দেশে নিবেদিত, তবুও দুই-এর সুর আলাদা।

 নৃত্য-গীত এবং বাদ্যের সমাহারে ভাবের গভীরতা, উদ্যমময়তা এবং ভাবস্ফূর্তির সম্মেলক চরিত্রে, কীর্তন সত্যিই বিশিষ্ট। শোনা যায়, শ্রীচৈতন্য স্বয়ং কীর্তনকে নামকীর্তন বা সংকীর্তন এবং লীলাকীর্তন বা রসকীর্তন-এই দুই ভাগে শ্রেণিভুক্ত করেন। নামকীর্তনে সচরাচর কৃষ্ণনাম বা শ্রীকৃষ্ণের অষ্টোত্তর শতনাম গাওয়া হয়ে থাকে। অন্যদিকে বাল্যলীলা, গোষ্ঠলীলা, ঝুলন, মাথুর, মল প্রভৃতি রাধা-কৃষ্ণলীলার পর্যায়ভিত্তিক পদাবলি নিয়ে গীত হয় লীলাকীর্তন বা রসকীর্তন। কীর্তনের অঙ্গ পাঁচটি-যা হল কথা, দোঁহা, আখর, তুক ও ছট।

লীলাকীর্তন :

লীলাকীর্তনে বিভাব-অনুভাব যোগে শৃঙ্গার ভাব সংঘবদ্ধভাবে প্রকাশ পায়। এই কারণেই লীলাকীর্তনকে রসকীর্তনও বলা হয়। নামকীর্তন ও রসকীর্তনে তাই অধিকার ভেদ রয়েছে। নামকীর্তন সকলের জন্য কিন্তু লীলাকীর্তনে কেবল রসিকেরই অধিকার। কীর্তনে মোট চৌষট্টিটি রসের সন্ধান পাওয়া যায়। উৎসাহ, মেলাপক, ধ্রুব ও আভোগ-এই চারটি কলিতে কীর্তন নিবদ্ধ। কীর্তন যিনি করেন তাকে বলা হয় কীর্তনিয়া। তিনি প্রয়োজনে যে-কোনো সময় অতিরিক্ত অলংকার বা আখর যোগ করতে পারেন। গানের অর্থ ও অন্তর্নিহিত ভাব পরিস্ফুট করার মানসেই এই আখর যোজনা করা হয়।

গায়ন পদ্ধতি :

 সাধারণভাবে গৌরচন্দ্রিকা দিয়ে গান শুরু হয়। বাদ্যযন্ত্র হিসেবে থাকে খোল ও করতাল। কীর্তন হল সম্মেলক গান, এখানে তাই নৃত্য, গীত ও বাদ্য তিনটিই থাকে। প্রায় একশোরও বেশি তাল, কীর্তনে ব্যবহৃত হয়। কীর্তনে পালাগান করে মিলন গান করার রীতি আছে। বিভিন্ন সময়ের প্রসিদ্ধ কীর্তনিয়াদের মধ্যে কমলাছরিয়া, কীর্তন সম্রাট নন্দকিশোর দাম, রাধারমণ কর্মকার, রাধারানি দাসী, সুবল দাস প্রমুখ বিখ্যাত। আধুনিককালে ছবি বন্দ্যোপাধ্যায় কীর্তন গান গেয়ে বাংলার ঐতিহ্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছিলেন।

রবীন্দ্রনাথের গানে কীর্তনের সুর :

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা কীর্তনের সুরকে তাঁর গানে অসামান্য নিজস্বতায় ব্যবহার করেছেন। তাঁর 'অন্তরমম বিকশিত করো', 'আমি কান পেতে রই', 'নয়নও তোমারে পায় না দেখিতে', 'মাঝে মাঝে তব দেখা পাই', 'আজি প্রণমী তোমারে নাথ', 'হৃদয়ের একুল ওকুল' প্রভৃতি রবীন্দ্র সংগীতগুলি কীর্তনাঙ্গের গান হিসেবে বাঙালির কাছে সমাদৃত। 

উপসংহার :

ভারতের প্রায় সব দেশেই ভজনাত্মক কীর্তনধারার প্রচলন আছে। তবে বাংলার পদাবলি কীর্তন অন্য প্রদেশের কীর্তনের থেকে অনেকটাই আলাদা। এই কীর্তন বাঙালি জাতিরই নিজস্ব শিক্ষা ও সংস্কৃতির সার্থক প্রতিচ্ছবি। বাঙালির কীর্তনে রসভাব ও প্রেমের নিবিড়তা এবং তার ঐতিহাসিক রূপের বিকাশ, বাংলাদেশের রসমিশ্রিত অনাবিল আধ্যাত্ম-সাধনার মর্মকথাটিকেই প্রকাশ করে। সমগ্র বাঙালি জাতির হৃদয়-অমৃত মন্থন করা ভক্তিভাব ও আকুলতা যেন তার কীর্তন গানের মধ্যে দিয়েই সমধিক প্রকাশিত হয়েছে।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area