দেশাত্মবোধ ও জাতীয় অগ্রগতি বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।
এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "দেশাত্মবোধ ও জাতীয় অগ্রগতি" প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
দেশাত্মবোধ ও জাতীয় অগ্রগতি বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Class-12 Bangla Prabandha Rachana
দেশাত্মবোধ ও জাতীয় অগ্রগতি
"দেশের প্রতি ভালোবাসায় দেশাত্মবোধ হয়,
দেশের স্বার্থ দেখলে তবে সবার ভালো হয়।"
ভূমিকা :
দেশাত্মবোধ এক অন্যতম 'বোধ'। দেশকে ভালোবেসে দেশের সাথে একাত্ম হওয়াই দেশাত্মবোধ।
দেশাত্মবোধ :
যে দেশে আমাদের জন্ম, যে দেশ আমাদের মুখে অন্ন জোগায়, তৃষ্ণায় বারি প্রদান করে, সেই মাতৃসমা স্বদেশকে নিজের বোধের ভেতরে অভেদ জ্ঞান করাই হল, দেশাত্মবোধ। স্বদেশ, স্বজাতি, দেশের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি, ধর্ম প্রভৃতির প্রতি তীব্র মমত্ববোধই হল দেশাত্মবোধ।
দেশাত্মবোধের স্বরূপ :
'জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী'-জননী এবং জন্মভূমি স্বর্গের থেকেও গরীয়সী। উভয়ই অভিন্ন, সমানভাবে পূজ্য। তাই মাতৃসমা জন্মভূমিকে নিজের সঙ্গে অভেদ জ্ঞান করে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসা প্রত্যেক সন্তানেরই পবিত্র কর্তব্য। মহাকবি শেকসপিয়র তাঁর বিখ্যাত নাটক 'জুলিয়াস সিজার'-এ ব্রুটাসের মুখ দিয়ে বলেছেন- 'Who is here so vile that will not love his country?'-'এখানে কে এমন নরাধম আছেন, যিনি নিজের দেশকে ভালোবাসে না'? ইংরেজ কবি বায়রন বলেছেন- 'He who loves not his country, can love nothing'- 'যে নিজের দেশকে ভালোবাসেন না, সে আর কোনো কিছুকেই ভালোবাসতে পারে না।'
আদর্শ দেশপ্রেম: তার নমুনা :
দেশ আমাদের মা। দেশের স্থান সবার ওপরে। দেশের সঙ্গে প্রতিটি মানুষের নাড়ির যোগ রয়েছে। দেশের মাটিতে আমাদের শরীর গঠিত। দেশের জল-বাতাসে আমাদের প্রাণ প্রতিপালিত। দেশের ভালোমন্দের সঙ্গে আমাদের ভালো থাকা, মন্দ থাকা নির্ভর করে। এজন্যই প্রকৃত দেশপ্রেমিক যিনি, তিনি তাঁর জন্মভূমির কল্যাণকেই সব কিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দেন। দেশের মঙ্গলের জন্য নিজের স্বার্থ, এমনকি নিজের জীবন পর্যন্ত বিসর্জন দিতে আদৌ কুণ্ঠাবোধ করেন না। এই ভারতবর্ষে অনেক মহান দেশপ্রেমিক মাতৃভূমির বেদিতে তাঁদের জীবন উৎসর্গ করে গিয়েছেন। ঝাঁসীর রানি লক্ষ্মীবাঈ, ভগৎ সিং, ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকী, বিনয়-বাদল-দীনেশ, নেতাজির আত্মোৎসর্গে গড়ে উঠেছে স্বাধীন ভারতের মুক্তিসৌধ। আজও অগণিত কৃষক, শ্রমিক, সাধারণ মানুষের কর্ম ও সাধনার বলে ভারতের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা সগৌরবে উড়ছে।
দেশ গঠন :
দেশাত্মবোধের সাথে জাতীয় অগ্রগতি গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। এর জন্য চাই দেশের প্রতি ভালোবাসা। একটি জাতির অগ্রগতির রূপটি নির্ধারিত হয় সেই জাতির সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও নৈতিক উন্নতির মানদণ্ডে। জাতি যখন দীর্ঘকালীন কুসংস্কার থেকে মুক্ত হয়, অর্থনৈতিক শ্রেণিবৈষম্য যখন মানুষে মানুষে কৃত্রিম বিভেদ সৃষ্টি করে না, রাজনীতির দূষিত বাষ্প যখন মানুষকে বিষাক্ত করে না, সকলেই যখন একতাবদ্ধ হয়ে সমগ্র কর্মপন্থাকে নিয়ন্ত্রিত করে, তখনই একটা দেশ বা জাতি অগ্রগতি লাভ করে 'জগৎ সভায়' আসন লাভ করতে সক্ষম হয়।
জাতীয় সংহতি :
আমাদের স্বাধীনোত্তর ভারতবর্ষে জাতীয় সংহতি বিপন্ন, বিপর্যস্ত হওয়ায় জাতীয় প্রগতি বিঘ্নিত হচ্ছে। বিষময় সাম্প্রদায়িকতা, সংকীর্ণ প্রাদেশিকতা, ধনবৈষম্য প্রভৃতি নানা কারণে জাতীয় ঐক্যচেতনা আজ কিছুটা ক্ষীণ হয়ে পড়েছে। তার ফলে জাতীয় অগ্রগতি স্তব্ধ হয়ে পড়েছে।
দেশসেবা :
দেশের অগ্রগতির জন্য সর্বাগ্রে দেশকে ভালোবাসা প্রয়োজন। দেশের স্বার্থকে যতদিন নিজের স্বার্থ বলে বোধ না হবে ততদিন দেশের উন্নতি সম্ভব নয়। দেশকে ভালোবেসে স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন-".... ভারতের মৃত্তিকা আমার স্বর্গ, ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ।” সমগ্র ভারতবাসী যখন বিবেকানন্দের এই বাণীর মর্ম অন্তরে উপলব্ধি করবে, তখনই জাতীয় অগ্রগতি সম্ভব হবে। ভারত তখন জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করবে। তাই, দেশাত্মবোধই জাতীয় অগ্রগতির মূলমন্ত্র।