দার্জিলিং-এর পথে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।
এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "দার্জিলিং-এর পথে" প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
দার্জিলিং-এর পথে বাংলা প্রবন্ধ রচনা ||Darjeeling-Era Pathe Bangla Prabandha Rachana
দার্জিলিং-এর পথে
ভূমিকা :
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় লিখেছিলেন 'স্মৃতির সোয়েটার পরে নস্টালজিয়ার পথে আনাগোনা আমার বড়ো প্রিয়'। এই কথাটা আমার খুব প্রিয়। আমারও মন আড়ালে অবসরে স্মৃতির ভাঁজে ঘোরাফেরা করে। যদিও আমার এই স্মৃতি অবশ্য খুব বেশিদিনের নয়। গত বছর বার্ষিক পরীক্ষা হয়ে যেতেই মন চেয়েছিল কোথাও একটা যেতে হবে। আমার ভাবনা বোধহয় মা বুঝেছিলেন। তাই দুদিন বাদেই বেড়াতে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হল। কোথায় যে যাচ্ছি তা জানি না-সমুদ্রে বা অন্য কোথাও হবে। সমুদ্রের উত্তাল-উদ্দামতা আমার ভালো লাগে ঠিকই, তবে পর্বতের নিঃসঙ্গ চূড়ার হাতছানিও আমাকে খুব একটা কম উতলা করে না! ঘটনাচক্রে ঠিক এই সময়েই দার্জিলিং-এ বাবার কাজ পড়ায় বাক্স গুছিয়ে কলকাতা থেকে দার্জিলিং মেল ধরে আমরাও চললাম তাঁর পিছু পিছু। বাবাকে চাকরির জন্য নানা জায়গায় যেতে হয়, সব সময় তো সঙ্গে আমরা যেতে পারি না, তবে পাহাড় ও চা বাগানে ঘেরা দার্জিলিং-এর হিম হাতছানি যেন আমরাও এড়াতে পারলাম না।
গন্তব্যের পথে :
ট্রেন নিউ জলপাইগুড়িতে পৌঁছাল সকাল আটটায়। চা আর সকালের খাবার খেয়ে মারুতিতে উঠলাম। আমি সমতল ভূমির মেয়ে, পাহাড়ের অচেনা-অজানা জগৎ তাই আমায় রোমাঞ্চিত করে। গাড়ি চলছে চড়াই-উতরাই পথ পেরিয়ে; দুধারে পাইন, দেবদারু, ফার প্রভৃতি নানা গাছ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে। এই গাছ আমাদের সমতলের মতো নয়; ডালপালা ছড়িয়ে থাকে না, কাউকে আশ্রয়ও দেয় না। মনে হয় যেন কোনো এক পুরোনো কাল থেকে এরাই অতন্দ্র প্রহরীর মতো পাহাড়কে রক্ষা করছে। পথে শুনলাম আগের দিন বৃষ্টি হয়েছে। গাছেরা বৃষ্টিপাত হয়ে সোনালি আলোর দিকে চেয়ে রয়েছে।
পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে বিপদকে অগ্রাহ্য করে আমাদের গাড়ি এগিয়ে চলেছে। এই আঁকাবাঁকা পথে অন্য দিক থেকেও গাড়ি আসছে ছুটে, কোণ ঘেষে দুজন দুজনের দূরত্ব বজায় রেখে পরস্পরকে অতিক্রম করছে। হঠাৎ চমরী গাই-এর একটি দল অন্যদিক থেকে এসে রাস্তায় ঢুকে পড়ল। ব্যাস সরু রাস্তায় সব গাড়ির একেবারে নট নড়নচড়ন অবস্থা। মনে পড়ে গেল সৈয়দ মুজতবা আলির 'দেশে বিদেশে'-র কিছু অনুষঙ্গ। পাহাড়ি খাদের পাশে রাস্তায় গোরুর ছটফটানি আর গাড়ির এদিক-ওদিক দেখে ভয়ে আমরাও প্রায় চোখ চেপে বসে আছি। তবে এরই ফাঁকে পাহাড়ের দুধারে নানান রংবেরঙের ফুল দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ যেমন হিমালয়ের পথে যেতে অনুভব করেছিলেন, ঈশ্বরই প্রকৃতিকে অপার সৌন্দর্যে সাজিয়েছেন, আমারও অনেকটা এমনটি মনে হতে লাগল। মনে মনে অনন্য প্রকৃতিকে নতজানু হয়ে অভিবাদন জানালাম।
গন্তব্যে পৌঁছে :
আমরা বেলা এগারোটায় গেস্ট হাউসে পৌঁছে কিছু খেয়েই বেড়িয়ে পড়লাম। আঁকাবাঁকা পথ ধরে হাঁটছি। কিছু পাহাড়ি মানুষ মোট বয়ে আনছে, কেউ বা টুরিস্টদের মাল অভ্যস্ত হাতে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ি মানুষেরা অনেক বেশি পরিশ্রমী ও কর্মঠ। পাহাড়ি পথ বেয়ে যত হুড়হুড় করে নামছি, ততই চোখে পড়ছে দু'ধারের ঢেউখেলানো চা বাগান। মনে পড়ে যাওয়ায় বাবা মুলকরাজ আনন্দের 'দুটি পাতা ও একটি কুঁড়ি' উপন্যাসটির কথা গল্পচ্ছলে বলছিলেন।
বইটি আমি পড়িনি। তবে বাবার মুখে শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, যেন চোখের সামনে সবই দেখছি। এভাবে ম্যালে গিয়ে পৌঁছালাম। সেখানেই খাওয়া সেরে দুপুরটা ম্যালের ধারে বসেই আমরা সময় কাটালাম। ধীরে ধীরে গেস্ট হাউসে ফেরার সময়, পাহাড়ের বুকে সন্ধ্যা নেমে আসছে। এবার দার্জিলিং শহরকে দেখলাম আরেক ভাবে। গেস্ট হাউসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে মনে হল অন্ধকারে পাহাড়ে পাহাড়ে কারা যেন সন্ধ্যাদীপ জ্বালিয়েছে। সে অপূর্ব এক দৃশ্য! বিন্দু বিন্দু আলোকমালায় প্রদীপ্ত এক আশ্চর্য অন্ধকার!
পরের দিন ভোরের আগেই রওনা দিয়ে আমরা টাইগার হিলে গিয়ে সূর্যোদয় দেখলাম। এমন আশ্চর্য দৃশ্য যেন জন্মজন্মান্তরেও ভোলা যায় না। শ্বেতশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘার উপর সূর্যের সোনালি আলোর সোনার মুকুট যেন আমার মনকে অভিভূত করে দিল। মহাকালের মন্দির, নিবেদিতার বাড়ি দেখে আমরা হোটেলে ফিরলাম।
এই বাড়িটি অধুনা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সহযোগিতায় এবং রামকৃষ্ণ মিশনের সহায়তায় সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে দেখে ভালো লাগল। এবার বিদায় নেবার পালা। পথে নির্ঝরিণী খরস্রোতা তিস্তার জলধারার শব্দ শুনতে শুনতে নেমে এলাম শিলিগুড়ি। যদিও ফেরারি মনের আয়নায়, তখনও দার্জিলিং-এর টুকরো টুকরো ছবি ভাসছে।
আরও পড়ুন-