Ads Area


একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Ekti Bhromonera Oviggota Bangla Prabandha Rachana

একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বাংলা প্রবন্ধ রচনা

পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।

এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা " প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বাংলা প্রবন্ধ রচনা || ekti bhromonera oviggota Bangla Prabandha Rachana


একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Ekti Bhromonera Oviggota Bangla Prabandha Rachana


একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা


"বিশ্বভুবন আমারে ডেকেছে 'ভাই', 

চার দেওয়ালের গন্ডি ছেড়ে তাইতো ছুটে যাই।"


ভূমিকা :

 মানুষ চিরকাল সুদুর পথের যাত্রী। তার রক্তে বাজে রবীন্দ্রনাথের গান "আমি চঞ্চল হে, আমি সুদূরের পিয়াসী।" গৃহের সীমা মানুষকে বদ্ধ করে রাখতে পারে না। দূর আকাশ, দূরদিগন্ত, দূর ভুবন হাতছানি দিয়ে ডাকে পিঞ্জরের পাখিকে। পাখির মতো গৃহবদ্ধ মানুষও ছটফট করে ঘরের বাইরে পা রাখার জন্য। কিন্তু পথ ডাকলেও অনেক সময় পাথেয় জোটে না, কখনও-বা পথের বন্ধু জোটে না। তবু মন-পাখি বেরিয়ে পড়ে নিরুদ্দেশে।

হরিদ্বার যাত্রা :

গত অক্টোবরে বাবার এল. টি. সি. পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ বেড়ালের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ল। আমরা সপরিবারে ভ্রমণে বের হলাম। আমরা হরিদ্বার-দেরাদুন-মুসৌরি যাবার প্রোগ্রাম করলাম। পোঁটলাপুঁটলি বেঁধে এবং অনেক স্বপ্ন দেখতে দেখতে আমরা পৌঁছলাম হরিদ্বারে। পথে আসবার সময় চলন্ত ট্রেনের দু'ধারের দৃশ্য গিলতে গিলতে এসেছি। দেখেছি মকাই এবং গেঁচুর খেত। দেখেছি খোলা মাঠে ময়ূর চরে বেড়াতে। আর মাঝেমাঝেই দেখেছি দূরের ঝাপসা মায়াময় নীল পাহাড়। হরিদ্বারে পৌঁছানোর পর আসল পাহাড়ের দেখা পেলাম এবং গায়ে স্পর্শ করে গেল একঝলক হিমশীতল হাওয়া।

ধর্মশালা : নতুন নতুন অভিজ্ঞতা :

আমরা প্রথমে এসে উঠলাম 'ভোলাগিরি ধর্মশালা'য়। গঙ্গার পাড়ে ধর্মশালা। গঙ্গা এখানে রীতিমতো স্রোতস্বিনী, বেগবতী। এতখানি স্রোত দেখা আমাদের অভ্যাস নেই। ওপরের একটি ঘরে আমাদের কোনোরকমে ঠাঁই হল।

হর-কা-পৌরি :

 পরের দিন সকাল থেকেই আরম্ভ হয়ে গেল আমাদের হরিদ্বারে বেড়ানো। প্রথমেই গেলাম 'হর-কা-পৌরি'তে। এটি ভারি মনোরম জায়গা। হরিদ্বারের সব থেকে পবিত্র স্থান। এখানে রয়েছে 'গঙ্গা মাঈ' মন্দির। ওই মন্দিরের সামনে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে খরস্রোতা গঙ্গা। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওখানে অবিরাম ডুব দিয়ে স্নান করে চলেছেন দেশ-দেশান্তরের পুণ্যার্থীরা।

আরও অনেক দ্রষ্টব্য বিষয় :

হরিদ্বারে মনসা পাহাড় আর এক দ্রষ্টব্য স্থান। এই পাহাড় বেশ খাড়াই। আগে পায়ে হেঁটে এই পাহাড়ে উঠতে হত, এখনও সে ব্যবস্থা আছে। তবে আমরা উঠলাম 'রোপ-ওয়ে' দিয়ে। গঙ্গার বিপরীত রয়েছে 'চণ্ডী পাহাড়'। সেখানেও আমরা গিয়েছিলাম। আমরা গিয়েছিলাম 'নীলধারা' দেখতে। ভীমকুণ্ড, ভারতমাতার মন্দির এবং শেষে বেশ কয়েকটি আশ্রম আমরা দেখেছি। দেখেছি সেই পাহাড়ি ঝরনা, যেখানে যৌবনা উমা তপস্যা করতেন শিবকে পতিরূপে পাবার জন্য। 

পৌরাণিক স্থান :

আমরা হরিদ্বার থেকে অনতিদূরে কখলেও গিয়েছিলাম। দেখেছি রাজা দক্ষের প্রাসাদ। দক্ষকন্যা সতী যেখানে দেহত্যাগ করেছিলেন, সেই জায়গাটি আজও আছে। আমরা গিয়েছি হৃষীকেশ, দেখেছি লছমনঝোলা।

দেরাদুন-মুসৌরি :

একদিন আমরা স্পেশাল বাসে করে গেলাম দেরাদুন-মুসৌরির পথে। পাকদণ্ডী দিয়ে আমরা পৌঁছলাম ছোট্ট পাহাড়ি শহর মুসৌরিতে। শহর ছোটো হোক, কিন্তু আভিজাত্য আছে। সুউচ্চ পর্বতশ্রেণি, তার কোলে সবুজের মেলা বসেছে। রাস্তার দু-পাশে দেওদার পাইন এবং নাম-না-জানা কত না গাছগাছালি, মধ্যে মধ্যে পাহাড়ি ঝরনা একমনে গান গেয়ে ঝরে চলেছে। এমন জায়গায় এলে মন কেমন যেন উদাস হয়ে পড়ে। মনে হয়, পৃথিবীতে সংসারে আমরা অনেক কাজের মধ্যে থেকে নিজেকে ভুলে থাকি। এখানে না এলে নিজের ভিতরকার আনন্দময় মানুষটাকে চেনা যায় না।

ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ও আনন্দ :

হরিদ্বারকে কেন্দ্র করে আমরা বেশ কয়েকটি জায়গা ঘুরে ঘুরে দেখলাম। এই পাহাড়ি অঞ্চল, অজানা পরিবেশ এবং নানান রকমের ফুল ও পাখি আমাদের মুগ্ধ করল। আমাদের দেশ কত বড়ো, কত এর বৈচিত্র্য এবং এর নৈসর্গিক দৃশ্যাবলি কত সুন্দর, তা এখানে না এলে আমরা বুঝতে পারতাম না। বিচিত্র পরিবেশ এবং অচেনা-অজানা মানুষদের সঙ্গ ও সাহচর্য আমাদের মনকে সবরকম সংকীর্ণতা থেকে মুক্তি দেয়। আমাদের মনকে করে উদার ও প্রশস্ত। এই উদারতা সংসারের সকলকে ভালোবাসতে শেখায়। "সব ঠাঁই মোর ঘর আছে, আমি সেই ঘর লব খুঁজিয়া।” ভ্রমণ প্রতিদিনের তুচ্ছতা, শুধু দিনযাপনের, শুধু প্রাণ ধারণের গ্লানি থেকে আমাদের নিষ্কৃতি দেয়। হরিদ্বার ভ্রমণের স্মৃতি আমার মনের মণিকোঠায় চিরকাল উজ্জ্বল হয়ে আছে এবং থাকবেও।

আরও পড়ুন-

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area