Ads Area


একটি ছুটির দিন বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Ekti Chutir Din Bangla Prabandha Rachana

 একটি ছুটির দিন বাংলা প্রবন্ধ রচনা

পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “একটি ছুটির দিন” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

একটি ছুটির দিন বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Ekti Chutir Din Bangla Prabandha Rachana


একটি ছুটির দিন বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Ekti Chutir Din Bangla Prabandha Rachana


একটি ছুটির দিন


'ছুটি পেলেই হৃদয়পুরে বাজায় কে যে বাঁশি, 

যেদিকে চায়, খুঁজে যে পায়, মজা রাশি রাশি।'


হঠাৎ পাওয়া একটি ছুটির দিন :

হঠাৎ পাওয়া গেল একটি ছুটির দিন, একেবারে আচমকা, অপ্রত্যাশিত। একটানা পড়াশোনার সুকঠিন একঘেয়েমির ভেতর এসে হাজির হয়ে গেল অপ্রত্যাশিত একটি ছুটির দিন। গুমোট গরমের পর যেন একপশলা বৃষ্টি। মনের ভেতর রবীন্দ্রনাথের ওই গানটি বারবারই ধ্রুপদী সংগীত হয়ে বাজতে লাগল।

'কী করি আজ ভেবে না পাই, 

পথ হারিয়ে কোন্ বনে যাই।'

ছাত্রজীবনে ক্রমবর্ধমান পড়ার চাপ। ভালো রেজাল্টের জন্য শুধু পড়া আর পড়া। সাহিত্য, ভূগোল, অঙ্ক-কোনো বিষয়রে বাদ দেওয়ার নেই। পরীক্ষার বৈতরণী পার হতে হবে তো? তাই, ছুটি কোথায়? কোথায় অবকাশ?

সেদিন স্কুলে গিয়ে শুনলাম জেলা টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়ে 'কাপ' জিতে এসেছে। সুতরাং ওই অসাধারণ সাফল্যের জন্য ছুটি দেওয়া হয়েছে স্কুলে।

ছুটির দিনটি অতিবাহিত করবার পরিকল্পনা :

স্কুলে এসে জানা গেল এই ছুটির খবর, আগে নয়। সুতরাং বই বিছিয়ে পড়ার টেবিলে গিয়ে বসার ব্যাপারটা আর আসে না। আবার এই মুহূর্তে বাড়ি ফিরে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। সুতরাং এখন কী করা যায়? এমন সময় দেবদূতের মতো আমাদের বাংলা শিক্ষকমশায়ের সাথে দেখা। তিনি আমাদের মনের কথা বুঝতে পেরে বললেন, 'যদি তোমরা বাড়ি ফিরে না যাও, তাহলে আমি তোমাদেরকে এক জায়গায় নিয়ে যেতে পারি। যারা যেতে চাও আমার সাথে এসো এবং বাড়িতে জানিয়ে দাও।'

আমরা চারজন স্যারের কথায় রাজি হলাম। বাড়িতে জানিয়ে দিলাম। মনের ভেতর একটা খুশির ভাব আমাদেরকে অধীর করে তুলল।

মাস্টারমশায়কে নিয়ে 'মিলেনিয়াম পার্কে' যাওয়া :

গঙ্গার বুকে লঞ্চে চেপে আমরা গঙ্গাতীরের বিশেষ একটি জায়গায় গিয়ে হাজির হলাম। জায়গাটির নাম, 'ফেয়ারলি প্লেস'। তখন দুপুরবেলা। তেমন ভিড়ভাট্টা নেই। খানিকটা এগিয়ে যাবার পর নদীতীরের একটি সুন্দর বাগানের সামনে এসে থমকে দাঁড়ালেন মাস্টারমশাই। ঈষৎ গম্ভীর স্বরে তিনি আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, 'চেনো নাকি এই বাগানটা?-জানো কী এর নাম?-এর নাম হল 'মিলেনিয়াম পার্ক'। আজকে হঠাৎ ছুটির দিনে এই পার্কটিকে আমরা উপভোগ করতে চাই। কী, ব্যাপারটি কি খুব খারাপ হবে?' খারাপ?-আমাদের মুখ দিয়ে যেন কথা সরছে না? নদীতীরের এমন একটি সুন্দর বাগান আমরা জীবনে দেখিনি। গভীর বিস্ময়ে আমরা তাকিয়ে থাকলাম এই পার্কটির দিকে। পার্ক তো নয়, যেন স্বর্গের নন্দনকানন।

মিলেনিয়াম পার্কের বর্ণনা :

ভেতরে ঢোকার পর বিস্ময় আরও বেড়ে গেল। মাঝখান দিয়ে রঙিন পাথরের বাঁধানো রাস্তা।।দু'পাশে নানা বর্ণের ফুলের গাছ। কেবল ফুলগাছ নয়, রয়েছে লতা-বিতান। বসবার কী সুন্দর ব্যবস্থা। পাথরের সিংহাসন। ওই সিংহাসনে বসে মনে হল, আমরা যেন এই সুন্দর ফুলবাগিচার রাজা। একপাশে শহর কলকাতার স্ট্যান্ড রোড, ওপাশে প্রবাহিত গঙ্গা নদী। দুপুরের রোদ ঝিলিক দিচ্ছে গঙ্গার তরঙ্গমালায়। তরঙ্গের মাথায় হাজার হিরের ঝলক। একঝাঁক গাঙচিল উড়ছে জাহাজের মাথায়।

মাথার ওপর বিশাল আকাশের চন্দ্রাতপ। এই চন্দ্রাতপে সাদা সাদা মেঘের ফালি। সূর্যের আলোয় সেখানে চলছে মেঘ ও রৌদ্রের খেলা। নদীর বুক থেকে ধীরে ধীরে প্রবাহিত হয়ে আসছে মৃদু শান্ত সমীরণ। কী মধুর বাতাস! মন ভরে গেল, হৃদয় জুড়িয়ে গেল।

সৌন্দর্য উপভোেগ :

 গঙ্গা চিরকাল আমার মনকে টানে। এই পার্কের পাশ দিয়ে ভারতের প্রাণ প্রবাহিনী গঙ্গা বয়ে চলেছে। গঙ্গার হাওয়ায় আমার শরীর-মন জুড়িয়ে গেল। গঙ্গার বুকে ভেসে চলা ছোটো-বড়ো নৌকাগুলি আমাকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। তাদের পাল তুলে চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আমার মন কেমন উদাস হয়ে পড়ল।

শেষ দুপুরটা আমরা এই নদী তীরেই কাটালাম। মাথার ওপর যে সূর্য ছিল, তা পশ্চিমে ঢলে পড়ল। পার্কের গাছে গাছে শোনা গেল পাখির কিচিরমিচির। ওপারের গঙ্গাতীরের কারখানার একটি কল থেকে ভোঁ বাজল। পশ্চিমের আকাশে ধরল লাল রং। ওই পার্কটি আমাদের মনকে এমনভাবে রাঙিয়ে তুলল, যা কোনোদিন ভুলব না, কোনোদিন না।

অপরাহ্ণ বেলায় প্রত্যাবর্তন :

ছকবাঁধা জীবনের ফাঁকে হঠাৎ আসা একটি ছুটির দিন আমাদের কাছে বহন করে নিয়ে এল একটি নতুন উপহার। অপরাহ্ণ বেলায় আমরা ফিরে এলাম নিজের নিজের বাড়িতে। ফিরে এলাম ছুটির দিনের বুকভরা আনন্দের উপহার নিয়ে।

আরও পড়ুন-

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area