একটি ঝড়ের রাত্রি বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "একটি ঝড়ের রাত্রি" প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
একটি ঝড়ের রাত্রি বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Ekti Jhorer Raatri Bangla Prabandha Rachana
একটি ঝড়ের রাত্রি
"আকাশ কোণে সর্বনেশে
ক্ষণে ক্ষণে উঠছে হেসে
প্রলয় আমার কেশে বেসে
করছে মাতামাতি।"
ঝড়ের পূর্বাভাস :
সেটি ছিল অক্টোবরের এক মায়াবী সন্ধ্যা, পুজো আসন্ন। শরতের হাওয়ায় দূরাগত শীতের আমেজ। বাতাস ছিল শিউলির গন্ধে ভরা। হাজার তারার মালায় আকাশ মেঘমুক্ত নক্ষত্রমালিনী। এমনি এক সন্ধ্যায় টি.ভি.-র পর্দায় ভেসে উঠল 'বিশেষ সাইক্লোন সতর্কবার্তা'। আবহাওয়া দফতরের বিশেষজ্ঞ জানালেন, বঙ্গোপসাগরে বিদ্রোহী মেঘপুঞ্জের সম্মেলনবার্তা। সমুদ্রের বুকের ওপর দিয়ে ধেয়ে আসছে সাইক্লোন। সঙ্গে নিয়ে আসছে বিপদের আশঙ্কা। ঝড়ের গতি হতে পারে ঘণ্টায় একশো কিলোমিটারের বেশি। আমরা উদ্বিগ্ন বোধ করলাম। রাতের খাওয়া শেষ করে যখন বিছানায় ঘুমোতে গেলাম তখন নিকষ কালো কষ্টিপাথরে মতো আকাশের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে দেখতে পেলাম কিঞ্চিৎ বিদ্যুৎ ঝলক। কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম জানি না। ঘুম ভাঙল রবীন্দ্রসংগীতের ঝটিকা সংকেতে-
"যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙল ঝড়ে
জানি নাই যে তুমি এলে আমার ঘরে।"
ভৈরবের বজ্রনির্ঘোষ :
চারিদিকে দমাদ্দম দরজা-জানলা পড়ছে। বাইরে গাছেদের মাথা নুয়ে ছুটে চলেছে যেন এক পাগলা হাতি। অন্ধকারে সবকিছু ভালো দেখা যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে আকাশ বিদীর্ণ করা বজ্রের শব্দ আর বিদ্যুতের ঝলকানি। সেই সঙ্গে দমকা বৃষ্টি। আকাশে-বাতাসে-চারদিকে এক মত্ত- মাতালের দাপাদাপি। ঝোড়ো বাতাসের সঙ্গে অনাহুত বৃষ্টি ঢুকে পড়েছে আমার ঘরে। বৃষ্টির ছাঁটে ভিজে যাচ্ছে বিছানা।
ততক্ষণে উন্মাদ হাওয়ার সঙ্গী জলের কণারা আমায় ভিজিয়ে দিয়ে গেছে। ঠান্ডায় শিরশির করে উঠল শরীর। শিকলে আটকানো জানলাগুলো তখন বাইরের ঝড়ের আগমনবার্তার সংকেত করে চলেছে খটখট শব্দ করে। হঠাৎই জানলার ফাঁকফোঁকর দিয়ে বিদ্যুতের শতধাবিভক্ত জিভ বজ্রনির্ঘোষে জানিয়ে দিয়ে গেল খ্যাপা ভৈরবের তাণ্ডব বার্তা। সেই মন্ত্রিত ধ্বনিতে আতঙ্কিত হয়েই মনে হয় নিভে গেল ঘরের নৈশদীপ। অন্ধকারে শুয়ে শুনতে লাগলাম সহজ নাগিনির দীর্ঘ হাহুতাশ।
রাতের রুদ্ররূপ :
দরজার বাইরে ঝড়ের তাণ্ডবলীলা বুঝতে পারলাম। প্রবল বেগে বয়ে চলেছে ঝড়। অন্ধকারের বুক থেরে গুমরে উঠছে ঝড়ের গর্জন। যেন আদিম অদেখা কোনো দানবের দাপাদাপি। মাঝে মাঝে বিদ্যুতের অপার্থিব আলোয় ঝলসে উঠছে প্রলয়ের ক্ষণস্থায়ী চলচ্চিত্র। সেই মুহূর্তে প্রাচীন ঋষির অনুভূতি সঞ্চারিত হয়ে উঠছে মনের মধ্যে, 'হে রুদ্র, তোমার দক্ষিণ ও বাম পদবিক্ষেপে জগতের জন্ম ও মৃত্যু প্রতিফলিত হয় ওঠে...।' প্রলয়নৃত্যরত নটরাজের সেই রুদ্র, ভয়াল অথচ সুন্দর প্রকাশের সামনে আমি করজোড়ে নিজের অজান্তেই বলতে থাকলাম- 'রুদ্র যত্তে দক্ষিণম্ মুখম্....।'
ভোরের অপেক্ষা :
আমি অধীর আগ্রহে নিদ্রাহীন চোখে অপেক্ষা করতে থাকলাম ভোরের জন্য। মনে জেগে উঠল রবীন্দ্রনাথের গান-
"যেতে যেতে একলা পথে
নিভেছে মোর বাতি
ঝড় উঠেছে, ওরে এবার ঝড়কে পেলেম সাথী।"
ঝড়ের রাতের বাণী :
সে রাত চলে গেল। পরের সকালে লন্ডভণ্ড বিধ্বস্ত প্রকৃতির সঙ্গে আমরা আবিষ্কার করলাম এই প্রলয়লীলায় ধ্বংস হয়ে গেছে ওড়িশার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। সে খবর, সেই দুর্বিপাক আজ ইতিহাস হয়ে গেছে, কিন্তু আজও সেই অন্ধকারের মধ্যে ঝড়ের স্মৃতি আমি কখনও ভুলতে পারিনি। জার্মান কবি রিলকে ঝড়ের গর্জনের মধ্যে শুনতে পেয়েছিলেন ঈশ্বরের বাণী। সে রাতে আমি অনুভব করেছিলাম আদিম প্রকৃতির রুদ্ররূপ। সেই ভয়াল সুন্দর উদ্দামতা, যা ছিল অন্ধকারের রহস্যমোড়কে আবৃত, সে যেন আজ বহু যুগের ওপার হতে অপরূপ এক ভয়ংকর বেশে দেখা দিল। আজও সে রাতের রূপ, ধ্বনি, ঘ্রাণ স্ফটিকের আকারে স্মৃতির গভীরে রয়ে গেছে।
"আজ ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার
পরানসখা বন্ধু হে আমার"
আরও পড়ুন-