Ads Area


পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার বাংলা প্রবন্ধ রচনা

 প্রিয় দশম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রী তোমাদের পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার বাংলা প্রবন্ধ রচনাটি সুন্দরভাবে লিখিত আকারে নিচে দেয়া হলো । এটি মাধ্যমিক পরিক্ষার জন্য একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রচনা। এটির শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান১০ ।


ভূমিকা

বর্তমান প্রগতিশীলতার যুগে প্রগতি ও উন্নয়নের যুগলবন্ধনে সমগ্র সমাজ, পরিবেশ ও মানবজীবন হয়ে উঠেছে আধুনিক গৃহাভ্যন্তরের সাধারণ জীবনব্যবস্থা থেকে শুরু করে সমগ্র সমাজই আজ উন্নত জীবনযাপন পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে বিজ্ঞানের সহায়তায়। তবে আধুনিক জীবন বিজ্ঞানদেবের আশীর্বাদের সঙ্গে সঙ্গে তার অভিশাপ বাষ্পে শ্বাসরুদ্ধ হচ্ছে-আর সেই অভিশাপই হল পরিবেশদূষণ।


দূষণের কারণ: 

বিজ্ঞানাশ্রিত যন্ত্র লালিত মানবসভ্যতায় দ্রুতহারে বংশবৃদ্ধি, কলকারখানার সৃষ্টি, বিশ্বযুদ্ধোত্তর পারমাণবিক শক্তির জয়গাথা রচনাকে কেন্দ্র করে দূষক পদার্থের উৎপত্তিতে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। জীবধাত্রী ধরিত্রীর বুক দূষিত হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকগুলি দিক বর্তমান, যেমন- বায়ুদূষণ, জলদূষণ, ভূমিদুষণ, শব্দদূষণ, বিষাক্ত রাসায়নিক বিক্রিয়াজাত দূষণ, তাপ সংক্রান্ত দূষণ, পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তাজাত দূষণ প্রভৃতি।

 বিভিন্ন প্রকার দূষণ ও তার প্রভাব:

১। বর্তমানের বিজ্ঞান নির্ভরতার যুগে জনস্বাস্থ্যে নানান ধরনের প্রতিকুলতা সৃষ্টি হয় বায়ুদূষণ-এর কারণে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে অরণ্যসম্পদ উচ্ছেদ করে বাসস্থান ও কৃষিজমি নির্মিত হওয়ায় পরিবেশে সবুজের অভাব ঘটছে। এর ফলশ্রুতিতে কার্বন ডাইঅক্সাইডসহ অন্যান্য বিষাক্ত গ্যাসের মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। কলকারখানা থেকে নির্গত দুর্গন্ধপূর্ণ বিষাক্ত গ্যাস, যানবাহন থেকে নির্গত কৃষ্ণকায় ধোঁয়ার কুণ্ডলী বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের ভারসাম্য নষ্ট করছে। এর ফলে সৃষ্ট অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টির আক্রমণে বিশৃঙ্খলাময় হয়ে উঠছে ঋতুচক্র। আবার, বায়ুমন্ডলের ওজোন গ্যাসের আস্তরণে ছেদ পড়ায় মানবজগৎ ক্যানসারের মতো মারণ ব্যাধির শিকার হচ্ছে।


২। বর্তমান কালে অতিরিক্ত পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে জলদূষণ। আধুনিক কৃষিজমিতে প্রযুক্ত কীটনাশক, রাসায়নিক সার ইত্যাদি বর্ষার জলে ধৌত হয়ে নদীর স্নিগ্ধ জলরাশিতে মিলিত হয় ও বিনষ্ট করে তার পবিত্রতাকে। এ ছাড়া মৎস্য চাষে আধুনিক পদ্ধতির প্রয়োগ, কলকারখানা ও গৃহস্থের নিকাশি ব্যবস্থা থেকে নির্গত বর্জ্য পদার্থসমূহের নদীবক্ষে সংযোজনকে কেন্দ্র করে নদী দূষিত হয় এবং ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে জলজ তথা স্থলজ জীবদের প্রাণ।


৩। কৃষিক্ষেত্রে নানাপ্রকার রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের প্রয়োগ, অযাচিত বৃক্ষচ্ছেদন যেমন ভূমিক্ষয়ের মাত্রাকে ত্বরান্বিত করছে তেমনই শিল্পকারখানা ও জনগণ সৃষ্ট আবর্জনা ও পচনশীল দেহাবশেষ বাড়িয়ে তুলছে ভূমিদূষণ।


৪। অতিযান্ত্রিকতার শব্দ-কলকারখানার তীব্র আওয়াজ, যন্ত্রদানবের বিচিত্র এয়ারহর্ন, মাইক্রোফোন, শব্দ বাজির প্রয়োগে জীবজগতের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হাইকোর্ট মাইকের কম্পাঙ্কের মাত্রা নির্ধারিত করে দিলেও শব্দদূষণের প্রভাবে কারওর বিনষ্ট হচ্ছে শ্রবণশক্তি কেউ-বা মস্তিষ্কের ভারসাম্য বিকৃতির কবলস্থ হচ্ছে।


৫। যুদ্ধের সময় ব্যবহৃত রাসায়নিক ও পারমাণবিক অস্ত্রাদি পরিবেশদূষণের অন্যতম কারণ-এর প্রমাণ আজও বহন করছে জাপানের হিরোসিমা-নাগাসাকি। এ ছাড়া তাপদূষণ ও পারমাণবিক তেজস্ক্রিয় দূষণের ফলে ওজোনোস্ফিয়ারের চাদর পাতলা হয়ে ইনফ্রা-রেড রে বা অতিলোহিত রশ্মির প্রকোপও বেড়ে চলেছে।


 প্রতিকারের উপায়:

 ক্রমবর্ধমান দূষণ থেকে পরিবেশকে মুক্ত করার জন্য কতকগুলি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। যথা-১। কলকারখানা ও পারমাণবিক গবেষণাগারের বর্জ্য পদার্থ কম ক্ষতিকারক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ ও সম্ভব হলে তার ধ্বংসসাধন, ২। কৃষিক্ষেত্রে জৈবসারের অধিক প্রয়োগ করা, ৩। সমুদ্রগর্ভে বা বায়ুমন্ডলের যে-কোনো স্তরেই পারমাণবিক বিস্ফোরণ নিষিদ্ধকরণ, ৪। বিভিন্ন গণমাধ্যমের দ্বারা বৃক্ষরোপণ কার্যে অগ্রগমন, ৫। জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং বন্যপশু সংরক্ষণ।


 উপসংহার: 

পরিবেশদূষণের প্রভাব শুধু একটি প্রজন্মেই নয় পরবর্তী প্রজন্মেও সঞ্চারিত হবে। তাই সুন্দর কুসুমিত মনোহরা ধরা গঠনের জন্য সকল সমাজবাসীকে, রাষ্ট্রসংঘ ও রাষ্ট্রগুলিকে সজাগ থেকে বন্ধ করতে হবে আণবিক-পারমাণবিক বস্তুর অবাঞ্ছিত ব্যবহার। অবশ্য সুন্দর দুষণমুক্ত পরিবেশ গঠনের জন্য যে দূষণমুক্ত, আন্তরিকতাপূর্ণ, সংগঠিত সমাজমানস প্রয়োজন তা প্রযুক্তির যুগে সততই অদৃশ্য। তাই সমাজে একাত্মতার বাতাবরণ সৃষ্টি করে পরিবেশদূষণ রোধ ও সবুজ প্রকৃতি গড়ার কাজে সবাইকে এক মনপ্রাণ হতে হবে।



Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area