নৌকা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বাংলা রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।
এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "নৌকা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা " প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
নৌকা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বাংলা রচনা || Nauka Vramaner Avigyata Bangla Rachana
নৌকা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা
ভূমিকা :
শহর কলকাতায় থাকি। ইট, কাঠ, বাড়ি আর গাড়ির ধোঁয়া আমাদের ঘিরে রাখে। নৌকাবিহার বলতে সল্টলেকের কাছে নৌকা ভাড়া করে দু-একবার ছোট্ট ঝিল ঘুরেছি। আউট্রাম ঘাটে নৌকা বাঁধা দেখলে, মনে মনে বলেছি, 'নদীর ঘাটের কাছে/নৌকা বাঁধা আছে'-কিন্তু ইচ্ছেমতো পাল তুলে দিয়ে নদীবক্ষে পাড়ি দেব, এমনটা কখনও হয়ে ওঠেনি। তবু বৃষ্টি পড়লে কাগজের নৌকা জলে ভাসিয়ে মনকে বলেছি চল, অনেক দূর। আবার ছোটোবেলায় মনকে সান্ত্বনা দিয়ে কখনও এও ভেবেছি, বড়ো হলে খেয়াঘাটের মাঝি হব। বহু ঝড়-ঝঞ্ঝা পেরিয়ে রবিনসন ক্রুশোর মতো কোনো অজানা দ্বীপে পৌঁছে ভাবব, 'এলেম নতুন দেশে'। এতসব স্বপ্ন-কল্পনা একদিন সত্যি হল। একবার সত্যি সত্যিই সুযোগ এল নৌকাভ্রমণের, যা আজও ভাবলে আমাকে উতলা করে তোলে।
নৌকায় বেড়াতে যাব। নদীর ঢেউ-এর তালে তালে ঘুরব ভাবলেই মজা লাগছে। নৌকা বলতেই মনের মধ্যে ঘুরপাক খায় পাল তোলা এক তরণি। ভাবতেই ভালো লাগে আর কানে সুর বেজে ওঠে 'যাবই, আমি যাব'। সেবার দিন কয়েকের জন্য গিয়েছিলাম মুরশিদাবাদে। হাজারদুয়ারি, পলাশির প্রান্তর দেখতে দেখতে একদিন জলঙ্গিতে নৌকায় ঘুরব বলে ঠিক হল।
অভিজ্ঞতা :
আমরা সকাল সাতটায় পৌঁছে গেলাম নদীর ঘাটে, নৌকা ছাড়ল। নৌকার সঙ্গে দুলে উঠলাম আমরাও। মাঝি ভাইরা পাল তুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুহূর্তের মধ্যে কোথায় যেন ভেসে গেলাম। ওপরে নীলাকাশ। পাখিরা ডানা মেলে চলেছে আর মেঘও চলেছে আমাদের সঙ্গে। সূর্যের তেজ তখনও প্রখর হয়নি। তীর ছেড়ে আমাদের পানসি চলল সুনীল জলধির মাঝে। নৌকায় আমরা যাত্রী ছিলাম মাত্র পাঁচজন-মা, বাবা, দিদি, মাঝিভাই ও আমি।
মাঝিভাই ওই অঞ্চলের নানা কাহিনির বর্ণনা করতে করতে চললেন। দূরের এক-একটি গ্রামের নাম বলতে থাকেন, আর তাদের টুকরো টুকরো ইতিহাস। নদীর এক পাড়ে কিছু ভাঙা মন্দির ও মসজিদও দেখলাম। ভোরের আলোয় মন্দির-মসজিদের চূড়াগুলি আমার মনে এক আশ্চর্য প্রশান্তি বয়ে নিয়ে এল। এভাবেই ছোটো ছোটো ঢেউ ডিঙিয়ে নৌকা ভেসে চলে, আমরাও ভেসে যাই। ওপারের সবুজ গাছপালারা যেন আমায় ডাকে। চলতে গিয়ে দেখি কোথাও নদীর পাড়ভাঙা, কোথাও বা নদীর ঘাটে ঘাটে অসংখ্য মানুষ স্নান করছে। কেউ বা জপ করছে আধ কোমর জলে দাঁড়িয়ে, কেউ বা পূর্বপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ করছে। হঠাৎ নৌকার গতি ধীর হয়। দেখি সামনে জাল পাতা হয়েছে মাছ ধরার জন্য, তাই একটু ঘুরে যেতে হবে।
মাইল খানেক উজানে যেতে হবে আমাদের, যেতে যেতে নদীর বাঁকে বজরা বাঁধা দেখলাম। মাঝিভাই এই বজরাগুলো দেখিয়ে বলল, এ অঞ্চলের জমিদার ছিলেন যাঁরা, তাঁদের এই বজরা। তাদের জমিদারির অস্তিত্ব নেই। তবুও পারিবারিক কোনো এক উৎসবে বছরে একবার করে জলে নামায়। বেশি দূর যেতে পারে না, সময়ের সঙ্গে আজ আর তাল মেলাতে পারে না! মনে পড়ে যায় বঙ্কিমচন্দ্রের দেবী চৌধুরানির কথা। তিনি বজরায় চড়ে ইংরেজদের সঙ্গে কী যুদ্ধই না করেছিলেন, কিন্তু হায়! এই মুরশিদাবাদেই আমরা পরাধীন হয়েছিলাম ইংরেজদের হাতে।
উপসংহার :
এভাবেই আমরা বড়ো নদীতে ফিরে আসি। জলঙ্গির জলের রং কী অপরূপ। নদী যেন সূর্যের আলোয় কত রঙে সাজে। কখনও সে ছোটো ছোটো ঢেউ-এর মালায় নিজেকে সাজিয়ে তোলে, কখনও আবার বড়ো ঢেউ। হঠাৎ দূরের আকাশে দেখা দিল কালো মেঘ। মাঝিমাল্লারা সতর্ক হল। বাতাসের শনশন শব্দ শোনা গেল। মনে হল মুহূর্তে দৃশ্যপট বদলে, কোনো এক দৈত্য ছুটে আসছে। নৌকা যেন পাক খেয়ে উঠল। তবে ঝড় বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না। শুরু হল বৃষ্টি। আমরা এগিয়ে চললাম তীরের দিকে। আজও চোখ বন্ধ করলে কালো জলের ওই আহ্বান ধ্বনি যেন আমায় ডাকে।
আরও পড়ুন-