সমাজজীবনে চলচ্চিত্র বাংলা রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।
এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "সমাজজীবনে চলচ্চিত্র বাংলা রচনা" প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সমাজজীবনে চলচ্চিত্র বাংলা রচনা || Samajajibone calaccitra Bangla Rachana
সমাজজীবনে চলচ্চিত্র
"সিনেমায় সব আছে-
আছে ভালো মন্দ,
এ যুগের সিনেমা-
জীবনের ছন্দ।"
ভূমিকা :
মানুষের বিস্ময়কর সৃষ্টিগুলির অন্যতম চলচ্চিত্র। একই সঙ্গে দৃশ্যমান, চলমান, ভাষাময় এমন মাধ্যম দ্বিতীয় নেই। শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে সকলকে সহজে আকর্ষণ করতে পারে এই মাধ্যম। এজন্যই চলচ্চিত্র আজ এতখানি জনপ্রিয়। সমাজের সার্বিক কল্যাণসাধনে চলচ্চিত্র এক গুরুত্বপূর্ণ পালন করে থাকে। চলচ্চিত্র প্রধানত বিনোদন মাধ্যম হলেও এর নানা সামাজিক কল্যাণকর ভূমিকা আছে। চলচ্চিত্রের কাজ দু'ধরনের আনন্দদান ও শিক্ষাদান। বস্তুত আনন্দের মাধ্যমে জীবন-শিক্ষার এমন মাধ্যম আর দ্বিতীয় নেই। তা ছাড়া চলচ্চিত্রে প্রত্যক্ষ জ্ঞানের সুযোগ থাকায় 'যা দেখি তাই শিখি'। অর্থাৎ, চলচ্চিত্র চক্ষু, কর্ণ ও মস্তিষ্ককে একই সঙ্গে সচেতন করে। ফলে জ্ঞান সম্পূর্ণতা পায়।
চলচ্চিত্রের ভূমিকা :
শিক্ষার ক্ষেত্রে চলচ্চিত্রের প্রভাব সর্বাধিক। বই পড়ে যে জ্ঞান লাভ করি তা আংশিক, প্রত্যক্ষ দর্শনে সে জ্ঞান সম্পূর্ণতা লাভ করে। বিভিন্ন দেশের প্রাকৃতিক দৃশ্য বিভিন্ন জাতির আচার-ব্যবহার, বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ঘটনা, বিভিন্ন জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিষয়ের সঙ্গে সহজে পরিচিত হওয়া যায় চলচ্চিত্রের মাধ্যমে।
জানা-অজানা :
সাক্ষর মানুষ সংবাদপত্রের মাধ্যমে বিশ্বের খবর জানতে পারে। কিন্তু নিরক্ষর মানুষ পর্দায় চলমান চিত্রে বিশ্বের নানা ঘটনা প্রত্যক্ষ করে নিজেদের গঠন করতে পারে। তথ্যচিত্রগুলি জ্ঞানার্জনে, তথ্য সংগ্রহে এবং আনন্দলাভে সহায়তা করে। বিনোদনে চলচ্চিত্র দৈহিক স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য যেমন সুষম খাদ্যের প্রয়োজন, তেমন মানসিক স্বাস্থ্য অটুট রাখার জন্যও প্রয়োজন নির্ভেজাল আনন্দ, যা চলচ্চিত্র দিতে পারে। চলচ্চিত্র আজ আনন্দ আহরণের প্রধান উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্মক্লান্ত মানুষ চলচ্চিত্রকে বিনোদনের উপায় হিসেবে গ্রহণ করেছে। দেশ-বিদেশের বহু সার্থক চিত্র পরিচালক চলচ্চিত্র মাধ্যমটিকে এক বিশেষ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
জনশিক্ষা প্রচারে চলচ্চিত্র :
জনশিক্ষা প্রসারে তথ্যচিত্রের একটি বিশিষ্ট ভূমিকা রয়েছে। পৃথিবীর সবদেশেই জনকল্যাণে তথ্যচিত্রকে ব্যবহার করা হয়। কৃষি উন্নতি, সেচের বিভিন্ন পদ্ধতি, স্বাস্থ্যবিধি, সংক্রামক রোগ নিবারণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, খরা প্রতিরোধ, পরিবার কল্যাণ পরিকল্পনা, শারীরিক শিক্ষা প্রভৃতি জাতীয় জীবনের উন্নয়মূলক শিক্ষা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রচার করা সম্ভব। সাক্ষর-নিরক্ষর সব মানুষের মনে এসব চলচ্চিত্র গভীর ছাপ রেখে যায় এবং জনসাধারণকে সচেতন করে তোলে।
মন্দ দিক :
সুযোগসন্ধানী কিছু অর্থলোভী মানুষ ব্যাবসায়িক স্বার্থে বিনোদনের আধার হিসেবে চলচ্চিত্র শিল্পকে অপসংস্কৃতির ধারক করে তুলেছে। কুরুচিপূর্ণ ছবি পরিবেশন করে সমাজকে চরম দুর্গতির দিকে এরা ঠেলে দিচ্ছে। আর দু'হাত ভরে পয়সা লুঠছে। অশ্লীল চলচ্চিত্র কিশোর-কিশোরীদের বিপথগামী করে তুলছে। ছাত্রছাত্রীদের মনে চলচ্চিত্রের এই কুপ্রভাব যদি বাড়তে থাকে তাহলে জাতিকে সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে না।
উপসংহার :
সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত চলচ্চিত্রকে যদি দেশের কল্যাণে ব্যবহার করা যায়, তাহলেই চলচ্চিত্র সমাজ গঠনে প্রয়োজনীয় ভূমিকা গ্রহণে সক্ষম হবে। এই শিল্পটি যাতে আমাদের সমাজজীবনে সুস্থ ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে, সে বিষয়ে আমাদের নজর দিতে হবে।