সমাজকল্যাণে ছাত্রসমাজের ভূমিকা বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।
এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "সমাজকল্যাণে ছাত্রসমাজের ভূমিকা" প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সমাজকল্যাণে ছাত্রসমাজের ভূমিকা বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Samaje Kalyane Chatra Samajer Bhumika
সমাজকল্যাণে ছাত্রসমাজের ভূমিকা
"ছাত্র তারাই, শক্তি তারাই যারা পড়াশুনার মাঝে, সমাজসেবার মন্ত্র নিয়ে-যুক্ত দেশের কাজে।"
ভূমিকা :
মানুষ সামাজিক জীব। ছাত্রগণও এই সমাজেই অন্তর্ভুক্ত। তাই, যে সমাজে তারা লালিতপালিত, সেই সমাজের উন্নতি কল্যাণ বিধানে নিঃস্বার্থ সেবায় অংশগ্রহণ করা তাদের পবিত্র কর্তব্যই দায়িয়া ছাত্রাণাম্ অধ্যয়নং তপঃ' অর্থাৎ 'অধ্যয়নই হল ছাত্রদের তপস্যা'। অধ্যয়ন ছাত্রদের তপস্যা হলেও, সামাজিক দায়দায়িত্ব তারা এড়িয়ে যেতে পারে না। 'আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে/আসে নাই কেহ অবনী পরে/সকলের তরে সকলে আমরা/প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।'
সামাজ ও ছাত্রদের শিক্ষা :
সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে উদাসীন থেকে শুধুমাত্র বিদ্যানুশীলনে ব্যাপৃত থাকা ছাত্রজীবনের লক্ষ্য নয়। পুথিগত বিদ্যা মানুষকে পূর্ণ মানব গড়ে তুলতে পারে না। পুথিগত বিদ্যায় মানুষ পণ্ডিত হতে পারে, কিন্তু পূর্ণ মানুষ হয়ে উঠতে হলে তাকে মানুষের কথা ভাবতে হবে, সমাজের কথা চিন্তা করতে হবে। কেননা ছাত্ররা সমাজবদ্ধ মানুষেরই অংশ। সুতরাং সমাজের প্রতি তাদের দায় তারা এড়াতে পারে না। শিক্ষালাভের লক্ষ্য মনুষ্যত্বের বিকাশ। ছাত্রজীবনকে পরিপূর্ণ করতে হলে কেবল পুথির ভেতর আটকে না থেকে সমাজের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। পরার্থে আত্মত্যাগ ছাড়া মনুষ্যত্বের পূর্ণতা অর্জন সম্ভব নয়।
সামাজিক সংকট ও ছাত্রসমাজ :
আমাদের দেশে ছাত্ররা সমাজসেবার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমাদের ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে সমাজকল্যাণমুখী কর্মযজ্ঞের ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। সমাজের নানা স্তরে দারিদ্র্য ও অজ্ঞতা, কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতা, অস্পৃশ্যতা ইত্যাদি বহু রকমের পাপ বাসা বেঁধে রয়েছে। এ ছাড়া খরা, মহামারি, বন্যা হল এদেশের চিরপরিচিত অভিশাপ। এসব সামাজিক অভিশাপ, সমস্যার দূরীকরণে ছাত্রসমাজ অংশ নিতে পারে।
সমাজকল্যাণে কী কী কাজ করা যায় :
আমাদের মতো বিশাল একটি দেশের সার্বিক উন্নতিসাধনে একমাত্র সরকারি প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়। ছাত্ররা সংগঠিতভাবে বা এককভাবে সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করে দেশের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে সহায়তা করতে পারে। সাম্প্রদায়িক সমস্যা, নিরক্ষরতা, জাতিবিদ্বেষ, খরা-বন্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ছাত্ররা অংশ নিতে পারে। এসব কাজে তারা জনসচেতনতা সৃষ্টি করবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ সংগ্রহ ও বিলি ইত্যাদি করতে পারে। বস্তি ও গ্রামীণ উন্নয়নের কাজে অংশ নিতে পারে। বিশেষ করে নিরক্ষরতা দূরীকরণে তারা সক্রিয় অংশ নিতে পারে। ছাত্রদের প্রত্যেকের উচিত অন্তত একজনকে সাক্ষর করে তোলা।
নিঃস্বার্থ সেবা :
ছাত্ররাই দেশের আশা, ভরসা ও ভবিষ্যৎ। তারাই দেশের শক্তি ও বল। তাদের আছে মহৎ আদর্শ, উৎসাহ ও আত্মত্যাগের মনোবৃত্তি। তারা নিঃস্বার্থভাবে সব সংকীর্ণতা দূরে ঠেলে দেশের কল্যাণযজ্ঞে অংশ নিয়ে প্রকৃত মানুষ ও নাগরিক হয়ে উঠুক, তাদের কাছে দেশের এই প্রত্যাশা। সামাজিক কর্মযজ্ঞে শামিল হয়ে হাতে-কলমে কর্মশিক্ষা ও জীবনের অভিজ্ঞতা অর্জনের পথে ছাত্রদের প্রকৃত মানুষ ও নাগরিক হয়ে ওঠার সুযোগ করে নিতে হবে।