শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলি বাংলা রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলি” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলি বাংলা রচনা || Soisoba Phele Asa Dinaguli Bangla Rachana
শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলি
এখন আমি এক তরুণ কিশোর। সবে শৈশব অতিক্রম করে এসেছি।
ভূমিকা :
তা শৈশব অতিক্রম করে এলেও, শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলির কথা আমার খুবই মনে পড়ে। ওই দিনগুলি ভীষণ সুখের ছিল এবং মজারও ছিল।
অচেতন শৈশব থেকে সচেতন শৈশবে :
মায়ের কোল ছেড়ে টলমল করে চলার দিন থেকে আমার প্রকৃত শৈশব শুরু হয়েছিল। তখন সবে দুরস্ত হয়েছি, দৌড়ে বেড়াই। সেই সময়কার এক মজার সন্ধ্যার কথা মনে পড়ছে। পিসির কাছে এক 'ছায়া-ধরার' ছড়া শুনেছিলাম। আলোর বিপরীতে দাঁড়িয়ে পিসি দুলে দুলে সেটি পড়ছিলেন এবং পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পিসির ছায়াও দুলছিল দেওয়ালে। আমি দৌড়ে গিয়ে ওই ছায়া ধরতে চেষ্টা করলাম। পিসি পাশের ঘরে সরে গেলেন, ছায়াও গেল হারিয়ে। আমি কেঁদে উঠলাম। আমার শৈশবস্মৃতির সেখান থেকেই শুরু। ছায়া যে বাস্তব নয়, সে-যে কেবল ছায়া-মাত্র, সেদিন তা আমার ধারণায় ছিল না।
রূপকথার জগৎ :
এই বাস্তববোধের অভাব আমার শৈশবের দিনগুলিকে খুবই মাতিয়ে তুলেছিল। অবাস্তব এবং আজগুবি চিন্তায় আমার মন সেদিন ছিল উদ্বেল। পিসির মুখে হরেকরকম রূপকথার গল্প আমি শুনেছি, শুনতে শুনতে সেই রূপকথার জগতের আমি বাসিন্দা হয়ে গিয়েছিলাম। রাজপুত্র ও রাজকুমারীদের যেন চোখের সামনে তখন দেখতে পেতাম। দেখতে পেতাম রাক্ষস-রাক্ষসীদের। গাছের কোটরে বসে থাকা ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমিদেরও খুব মনে পড়ে। আর পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চড়ে আমি তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে চলে যেতাম রাজকুমারীর ঘুম ভাঙাতে। শৈশবের এই দিনগুলিতে ওই রূপকথার জগৎ ছিল আমার কাছে বাস্তব সত্য।
পৌরাণিক গল্প, হাসান-হুসেনের কথা, ঘটোৎকচ :
আমাকে ভীষণভাবে মোহিত করত রামায়ণ-মহাভারত এবং পৌরাণিক গল্পগুলি। সীতার দুঃখে ভারি কষ্ট পেতাম। রাগ হত খুব রাবণ রাজার ওপর। অনেক দিন ধরে পরিকল্পনা করেছি কীভাবে 'অশোক কানন' থেকে সীতাদেবীকে উদ্ধার করে আনা যায়। মহরমের কাহিনি শোনার পর হাসান-হুসেনের দুঃখে আমার চোখ ভেসে গিয়েছিল কান্নার জলে। মহাভারতের কাহিনি শুনে আমার ভারি পছন্দ হয়ে গিয়েছিল ঘটোৎকচকে। আমার তখন মনে হত, এই ঘটোৎকচকে সঙ্গে পেলে আমি বিশ্বজয় করতে পারতাম।
প্রকৃতির জগৎ, পাখি :
আমার শৈশবের দিনগুলি যে বাড়িতে কেটেছে, তার সামনেই ছিল একটি বাগান। এ বাগানে ছিল অনেক গাছগাছালি এবং অনেক ফুলের সমারোহ। এখানে ছিল হরেক রকমের পাখিদের আনাগোনা। বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে অনেক গাছগাছালির সঙ্গে আমার ভাব হয়ে গিয়েছিল। তারা আমার ভাষা বুঝত এবং আমিও তাদের ভাষা কিছু কম বুঝতাম না। অনেক ফুলের সঙ্গে ছিল আমার মিতালি। পাখিরা মাঝে মাঝে উড়ে এসে তাদের কথা আমাকে বলে যেত।
টুনটুনির বই :
এই সময় পিসি আমাকে মজার একটি বই পড়ে শুনিয়েছিলেন, বইটিতে টুনটুনির কথা বলা ছিল। বলা ছিল, দুষ্টু বেড়াল, বাঘ, কুমির এবং শেয়ালের বৃত্তান্তও। তাদের কথা শুনতে শুনতে একদিন তারাও আমার সহচর হয়ে গিয়েছিল। তারা আমাকে জঙ্গলে নিয়ে যেতে চাইত, শহর ছাড়িয়ে অনেক দূরে। সেইসব অনুভূতির স্মৃতি এখনও আমাকে আবেগে আপ্লুত করে। আমি হারিয়ে যাই রূপকথার জগতের মধ্যে।
বাস্তব-অবাস্তব, সীমানাহীন :
শৈশবের ওই ফেলে আসা দিনগুলিতে তারা-ভরা আকাশ, আকাশ-ভরা চাঁদ আমার মনে বিস্ময় সৃষ্টি করত। তখন বাস্তব ও অবাস্তবের সীমানা নির্দিষ্ট কিছু ছিল না। সব কিছুই একাকার হয়ে গিয়েছিল। এই রকমই ছিল আমার শৈশবের দিনগুলি।
আরও পড়ুন-