তোমার প্রিয় চলচ্চিত্র বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।
এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "তোমার প্রিয় চলচ্চিত্র" প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তোমার প্রিয় চলচ্চিত্র বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Tomar Priyo Calaccitra Bangla Prabandha Rachana
তোমার প্রিয় চলচ্চিত্র
ভূমিকা :
আমাদের একান্নবর্তী পরিবারে ছোটোদের সিনেমা বা চলচ্চিত্র দেখার অনুমতি ছিল না। টিভি থাকলেও তার সামনে বসা যেত না। কিন্তু গত বছর টিভি-র সামনে ডেকে নিলেন স্বয়ং কাকাই, টিভিতে তখন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা 'পথের পাঁচালী' শুরু হয়েছে। দুর্গা ছেঁড়া কাঁথার মধ্যে আঙুল ঢুকিয়ে ফাঁক করতেই দেখা গেল ডাগর চোখ মেলে তাকিয়ে আছে অপু, এরপর অনেকদিন কেটে গেছে, কিন্তু এখনও চোখ খুললেই দেখতে পাই রেলগাড়ি দেখার অনন্ত কৌতূহল বুকে নিয়ে দুর্গা আর অপুর মাঠ, খেত পার হয়ে ছুটে চলা, কিংবা ঝড়বাদলের সেই ভয়ংকর রাতে দুর্গার চলে যাওয়া। সেই ভালোলাগা অনুভূতি এখনো আমার সমস্ত মনে ছড়িয়ে রয়েছে।
চলচ্চিত্রের নেপথ্যকথা :
'পথের পাঁচালী' সত্যজিৎ রায়ের প্রথম ছবি। মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫৫ সালে। স্বাধীনতা পরবর্তী এই সময়ে আজকের প্রযুক্তির প্রয়োগ চলচ্চিত্র শিল্পে একেবারেই ছিল না। তখন সবেমাত্র মুক সিনেমা সবাক হয়েছে। সেই সময় কাব্যধর্মী একটি উপন্যাসকে চলচ্চিত্রের বিষয় করে তোলা অত্যন্ত দুঃসাহসিক একটি কাজ ছিল, তবে এ কাজে তাঁকে আর্থিক সহযোগিতা করেছিল তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
চলচ্চিত্রের নেপথ্যকথা :
'পথের পাঁচালীর' কাহিনি অত্যন্ত সাধারণ। হরিহর-সর্বজয়ার অভাবের সংসার। হরিহর দরিদ্র ব্রাহ্মণ, যজমানি করে সংসার চালায় কোনোমতে। মাঝে মাঝেই রোজগারের সন্ধানে অন্য গ্রামে চলে যায়। সর্বজয়া অসহনীয় দারিদ্র্য, অনাহার, অর্ধাহারে থাকতে হয়ে উঠেছে মুখরা, স্বার্থপর; বিধবা ননদ ইন্দিরা ঠাকুরনকে মনে হয় গলগ্রহ। তবু তার মধ্যে ফুটে উঠেছে চিরন্তন বাঙালি নারী-যিনি স্বামীর জন্য অপেক্ষা করেন, সন্তানদের মুখে দুটো অন্ন তুলে দেবার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করেন। তাকে একেবারেই পাথর হয়ে যেতে দেখি একমাত্র মেয়ে দুর্গার বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুতে।
বিভিন্ন দৃশ্য :
পথের পাঁচালী সিনেমার অনেকগুলি দৃশ্যই মনে স্থায়ী দাগ কেটে যায়। সবথেকে মর্মস্পর্শী দুটি দৃশ্য হল ইন্দিরা ঠাকরুন ও ঝড়-জলের রাতে দুর্গার মৃত্যুদৃশ্য। ইন্দিরা ঠাকরুনের চরিত্রে চুনিবালাদেবীর অভিনয় অসামান্য। আরও কয়েকটি দৃশ্য মনে পড়ে। যেমন, দুর্গার পুণ্যিপুকুর ব্রতপালন, আকাশে প্রথম কালবৈশাখীর ঘন মেঘের আনাগোনা ও দুর্গার বৃষ্টিতে ভেজা। বৃষ্টিতে ভিজে দুর্গার অসুখ আর তারই ফলে মৃত্যু। এমনকি ক্ষুধার্ত বিড়ালটি যে খাবার সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যে আরশোলাটা ইন্দিরা ঠাকরুনের মৃতদেহের উপর দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারও যেন একটা ব্যক্তিত্ব আছে। এমনকি ঝড়ে কেঁপে ওঠা দরজারও যেন একটা মুখ আছে।
উপসংহার :
সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী' বিভূতিভূষণের 'পথের পাঁচালী' থেকে একটু আলাদা। শোনা যায় সিগনেট প্রেস-কৃত সংস্করণের ইলাসট্রেশন করতে করতেই ছবির চিত্রকল্প তাঁর মাথায় আসে। 'পথের পাঁচালী' মুক্তি পাওয়ার পর চলচ্চিত্র সমালোচক দেবকীকুমার বসু লিখেছিলেন "একটা ছবি যে এভাবে তোলা যায়, সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। সত্যজিৎ রায় আমাদের পথপ্রদর্শক হয়ে রইলেন"। সেই মুগ্ধতা আজও বাঙালির মনে রয়ে গেছে। তাই 'পথের পাঁচালী' আমার প্রিয় চলচ্চিত্র।