Ads Area


তোমার প্রিয় কবি বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Tomar Priyo Kobi Bangla Prabandha Rachana

 তোমার প্রিয় কবি বাংলা প্রবন্ধ রচনা

পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।

এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "তোমার প্রিয় কবি" প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

তোমার প্রিয় কবি বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Tomar Priyo Kobi Bangla Prabandha Rachana


তোমার প্রিয় কবি বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Tomar Priyo Kobi Bangla Prabandha Rachana


তোমার প্রিয় কবি


ভূমিকা :

 মানুষের ভালোলাগা, মন্দলাগা তার ব্যক্তিগত অনুভূতির ব্যাপার। ব্যক্তিগত অনুভূতির মানদণ্ডেই সে ঠিক করে নেয় কাকে গ্রহণ করবে আর কাকেই বা বর্জন করবে। কাজেই আমার প্রিয় কবি একান্তই আমার নিজস্ব নির্বাচিত কবি। আমার প্রিয় কবি শুধু নগর সভ্যতার নাগরিক কবি নন, আবার নিরাভরণ গ্রামবাংলার শুধু প্রকৃতিপ্রেমিক কবিও নন, তাঁর কবিতায় যেমন প্রেম আছে তেমনি অপ্রেমের কথাও তিনি বলেন, ভালোবাসার পাশাপাশি রণ-রক্ত সফলতা তাঁর কবিতাকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি জীবনানন্দ দাশ আমার প্রিয় কবি।

ছাত্রজীবন :

 জীবনানন্দের জন্ম ১৮৯৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বর্তমান বাংলাদেশের বরিশাল শহরে। বাবার নাম সর্বানন্দ দাশ, মা কবি কুসুমকুমারী দাশ। ১৯০৮-এ ব্রজমোহন স্কুলে ভরতি হন। ১৯১৫ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে ১৯১৯-এ প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স-সহ বিএ পাস করে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতি হন। ১৯২১-এ এখান থেকেই ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে এম এ পাস করেন।

কর্মজীবন :

কর্মজীবন শুরু করেন ১৯২২-এ। সিটি কলেজে অধ্যাপনা করেন ১৯২৮ পর্যন্ত। পরে বিভিন্ন সময়ে খুলনা জেলার বাগেরহাট কলেজে, দিল্লির রামযশ কলেজে, খড়গপুর কলেজে, বড়িশা কলেজে পড়ান। অবশেষে ১৯৫৩ সালের জুলাই থেকে হাওড়া গার্লস কলেজে আমৃত্যু অধ্যাপনা করেন।

জীবনানন্দের কাব্যচর্চা :

জীবনানন্দ দাশের মুদ্রিত কবিতা 'বর্ষ আবাহন' সত্যানন্দ সম্পাদিত 'ব্রহ্মবাদী' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। নিয়মিত লেখা শুরু করেন ১৯২৪-২৫ থেকে। কল্লোল, কালিকলম, প্রগতি, পরিচয়, কবিতা, চতুরঙ্গ, পূর্বাশা প্রভৃতি নানা পত্র-পত্রিকায় লিখতেন। প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'ঝরাপালক' প্রকাশিত হয় ১৯২৭ সালে। পরবর্তীকালে প্রকাশিত হয়েছে ধূসর পাণ্ডুলিপি (১৯৩৬), বনলতা সেন (১৯৪২), মহাপৃথিবী (১৯৪৪), সাতটি তারার তিমির (১৯৪৮), রূপসী বাংলা (১৯৫৭), বেলা অবেলা কালবেলা (১৯৬১) ইত্যাদি।

জীবনানন্দের স্বাতন্ত্র্য :

 রবীন্দ্র-সমসাময়িককালে বাংলা কবিতা মুক্তির পথ খুঁজছিল। খানিকটা অসচেতনভাবে নজরুল ইসলাম, মোহিতলাল মজুমদার এবং যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রবীন্দ্রকাব্যকলাকে পাশে সরিয়ে রেখে যে কবিতা লেখা যায় তার একটা মেঠো রাস্তা দেখিয়েছিলেন। এক ব্যতিক্রমী কাব্যসাধনা শুরু করলেন এঁরা। এঁদের এই ব্যতিক্রমী কাব্যসাধনা পরিণতি পেল সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, অমিয় চক্রবর্তী, বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে এবং জীবনানন্দ দাশের মধ্যে। এঁদের মধ্যে জীবনানন্দ একেবারেই পঞ্চম কবি। জীবনানন্দের কাব্যে যেমন রূপ-রস-গন্ধকে অনুভব করা যায়, তেমনি লক্ষ করা যায় তাঁর ইতিহাস সচেতনতা, সমাজ সচেতনতা। আর আছে মৃত্যুচেতনাজাত এক ধরনের নাগরিক বিচ্ছিন্নতাজনিত যন্ত্রণা, ফলে এক ধরনের আত্মিক সংকট তাঁর মধ্যে আমরা লক্ষ করি। এই যন্ত্রণার নাম কবি কখনো দিয়েছেন বোধ, কখনো বা দিয়েছেন 'বিপন্ন বিস্ময়'। আর এ ভাবেই বাস্তবতা ছাড়িয়ে পরা-বাস্তবতার হাত ধরে জীবনানন্দ নতুন আধুনিকতার জন্ম দিলেন।

কেন প্রিয় :

জীবনানন্দের কবিতায় আন্তর্জাতিক চেতনা, ইতিহাসবোধ, পৌরাণিক অনুভূতি থাকলেও তিনি ভুলে যাননি তাঁর দেশ-মাটি-মানুষের কথা। এই সুজলা-সুফলা বাংলা, এই শ্যামল বনছায়া, এই বাংলার লখিন্দর, বেহুলার গল্প, গাঙুড়ের নীল জল, কিশোরীর চাল ধোয়া হাতের গন্ধ, লাল ফুল, দোয়েল-ফিঙের নাচ-সবই উঠে আসে তাঁর কবিতায়। এখানেই জীবনানন্দ হয়ে ওঠেন বাঙালির কবি। আর একারণেই জীবনানন্দ আমার এত প্রিয় কবি।

উপসংহার :

 শতাব্দীর ব্যবধানে দাঁড়িয়ে আজ নজরুল ইসলামকে (১৮৯৯) মনে হয় পুরোনো দিনের কবি, সুধীন্দ্রনাথ, বিষু দে-কে মনে হয় শিক্ষিতজনের কবি। কিন্তু জীবনানন্দ আপামর বাঙালির কবি। জীবনানন্দকে তাই আমাদের বহন করতে হয় না, তিনিই আমাদের বহন করে নিয়ে চলেন দুঃখ থেকে সুখে, সুখ থেকে আনন্দে, আনন্দ থেকে সাহিত্যরসের অমৃতলোকে।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area