Ads Area


তোমার প্রিয় লেখক বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Tomar Priyo lekhok Bangla Prabandha Rachana

 তোমার প্রিয় লেখক বাংলা প্রবন্ধ রচনা

পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।

এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "তোমার প্রিয় লেখক " প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

তোমার প্রিয় লেখক বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Tomar Priyo lekhok Bangla Prabandha Rachana


তোমার প্রিয় লেখক বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Tomar Priyo lekhok Bangla Prabandha Rachana


তোমার প্রিয় লেখক


ভূমিকা :

সেই কবে ১৮৬৪-তে গড় মান্দারণ থেকে অশ্বারোহণে বাংলা উপন্যাসের পথচলা শুরু হয়েছিল, সে চলা অন্তহীন পথে যাত্রা করেছে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সেদিন ভেরি বাজিয়েছিলেন। তারপর রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, বিভূতিভূষণ, তারাশঙ্কর, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় আরও অনেকই সেই যাত্রা পথে অশ্বারোহী সৈনিকের সাথি হয়েছেন। তাঁদের কেউ কেউ আমার পরিচিত, তাঁদের লেখা আমাকে আকর্ষণ করেছে। আবার অনেকেই থেকে গেছেন আমার জানাশোনার সীমানার বাইরে। তবু বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র, বিভূতিভূষণ বা তারাশঙ্করকে মনে রেখেও বলতে হয় সতীনাথ ভাদুড়ীর লেখা আমাকে মুগ্ধ করেছে। সতীনাথ ভাদুড়ীই আমার প্রিয় লেখক।

শিক্ষা ও কর্মজীবন :

১৯০৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর বিহারের পূর্ণিয়া জেলার ভাট্টাবাজারে সতীনাথ ভাদুড়ীর জন্ম। ১৯৩০-এ এম এ পাস করার পর আইনের ছাত্র হিসাবে ল' পাস করে ওকালতি পেশায় যোগ দেন। তবে উত্তেজনামুখর সময়বৃত্তে দাঁড়িয়ে সতীনাথ নিজেকে জাতীয় আন্দোলন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেননি। স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়ে ১৯৪০ থেকে ১৯৪৪-এর মধ্যে একাধিকবার কারাবরণ করেন। কংগ্রেসের কর্মী হিসেবে দেশসেবায় অংশ নিয়েছেন। ১৯৪৮-এ কংগ্রেস ত্যাগ করে সি. এস. পি. সদস্য হয়েছেন। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের ৩০ মার্চ তাঁর মৃত্যু হয়।

সাহিত্যজীবন :

 সতীনাথ ভাদুড়ীর সাহিত্যজীবন ১৯৪৫ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত। এই সময়পর্বে তাঁর ৬টি উপন্যাস ও ৬টি ছোটোগল্প সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। উপন্যাসগুলি হল জাগরী (১৯৪৫), চিত্রগুপ্তের ফাইল (১৯৪৯), ঢোঁড়াইচরিতমানস (১৯৪৯, ১৯৫১), অচিনরাগিণী (১৯৫৪), সংকট (১৯৫৭) এবং দিগভ্রান্ত (১৯৬৫), গল্পগ্রন্থগুলি হল গণনায়ক (১৯৪৮), অপরিচিতা (১৯৫৪), চকাচকী (১৯৫৬), পত্রলেখার বাবা (১৯৫৯), আলোক দৃষ্টি (১৯৬৪)।

উপন্যাস সাহিত্যে সতীনাথ :

রবীন্দ্র পুরস্কার প্রথম পেয়েছিলেন সতীনাথ ভাদুড়ী তাঁর জাগরী উপন্যাসের জন্য। মূলত এই উপন্যাসটি পাঠ করেই সতীনাথকে চিনতে শিখেছিলাম আমি। এটি সতীনাথের প্রথম উপন্যাস এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক উপন্যাস। উপন্যাসটি ইউনেসকো থেকেও পুরস্কৃত হয়েছিল। বাবা-মা-বড়ো ভাই বিলু ও ছোটোভাই নীলুর নিশিজাগরণের গল্প এখানে লেখক বলেছেন চারটি অধ্যায় জুড়ে। বাবা-মা ও বড়ো ভাই ৪২-এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অপরাধে জেলবন্দি। 

ছোটো ভাই নীলু ভিন্ন রাজনৈতিক মত পোষণ করে এই আন্দোলনে অংশ নেয়নি। ভোররাতে বিলুর ফাঁসি হবে। ছোটো ভাই নীলুর সাক্ষ্যের ভিত্তিতেই ফাঁসি। তবু সে তার দাদার দেহ নিতে এসেছে। অপেক্ষা করছে জেলফটকের সামনে। সমস্ত রাত চারজন মানুষই চোখের পাতা এক করতে পারেনি। তবে একেবারে শেষ পাতায় পৌঁছে নীলু এবং আমরা পাঠক জানতে পারি সরকার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ফাঁসির আদেশ রদ করেছে। এ এক অসাধারণ গল্প। ঢোঁড়াইচরিতমানস সতীনাথ ভাদুড়ীর লেখা অন্যতম শ্রেষ্ঠ মহাকাব্যিক উপন্যাস। বিহার অঞ্চলের আঞ্চলিক উপভাষার সাহায্যে গণজীবনের ছবি এখানে ঔপন্যাসিক দুটি খণ্ডে তুলে ধরেছেন। উপন্যাসটির আঙ্গিক কাঠামোতে তুলসীদাসের রামচরিতমানসের প্রভাব রয়েছে বলে মনে করা যায়। উপন্যাসটিতে মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বাধীন অসহযোগ আন্দোলনের ছোঁয়া রয়েছে।

কেন প্রিয় :

 সতীনাথ ভাদুড়ী জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক নন। তবে তিনি ছিলেন লেখকদের লেখক। সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন, তিনি ছিলেন 'Writer's writer'। তবু মনোযোগী পাঠক হিসেবেই তাঁর উপন্যাসে প্রবাহিত অন্তর্নিহিত গল্পস্রোত আমাকে টানে। তিনি স্থানীয় লোকভাষা, লোকজীবন ব্যবহার করেছেন বলে সাধারণ পাঠকের সঙ্গে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, সেই দূরত্বের মধ্যেই আমি খুঁজে পাই তাঁর লেখক সত্তার স্বাতন্ত্র্য।

উপসংহার :

বঙ্কিমচন্দ্র থেকে রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র থেকে সমরেশ বসু বাংলা কথাসাহিত্যের এই দীর্ঘ যাত্রাপথে পড়ে থাকা নুড়িপাথর আমি মাঝেমধ্যেই কুড়িয়ে নিই। কখনো ভালো লাগে 'আনন্দমঠ', কখনো 'পথের দাবী', কখনো-বা 'চার অধ্যায়'। কিন্তু যেদিন প্রথম 'জাগরী' পড়েছিলাম সেদিন যথার্থ অর্থেই চমকে উঠেছিলাম। একেবারেই অন্য ফর্মে, অন্য ধারায় অন্যভাবে লেখা একটি উপন্যাস, যেখানে জীবন আছে, জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাজনীতি আছে। আধুনিক বাংলার নতুন কথাকার সতীনাথ। সতীনাথ ভাদুড়ীই আমার প্রিয় লেখক।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area