Ads Area


দেশভ্রমণ শিক্ষার অঙ্গ বাংলা প্রবন্ধ রচনা

 প্রিয় দশম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রী তোমাদের দেশভ্রমণ শিক্ষার অঙ্গ বাংলা প্রবন্ধ রচনাটি সুন্দরভাবে লিখিত আকারে নিচে দেয়া হলো । এটি মাধ্যমিক পরিক্ষার জন্য একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রচনা। এটির শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান১০ ।


 ভূমিকা

অজানাকে জানার, অচেনাকে চেনার স্পৃহা মানবমনের অনন্তকালের সঙ্গী। প্রাত্যহিকতার গ্লানি অপনোদনের বাসনায় মানবমন নিরন্তর নতুন প্রকৃতির সন্ধানে আত্মহারা হয়ে ওঠে। আর তখনই নতুনকে আবিষ্কারের নেশায় নিত্যনতুন দেশ ভ্রমণের মাধ্যমে মানবমন লাভ করে শিক্ষা ও আনন্দ।


 ভ্রমণের মাধ্যমে শিক্ষার প্রাচীন ইতিহাস: 

প্রাচীনকালে জ্ঞানচর্চার সীমিত ক্ষেত্র ও উপকরণে বৈপুল্যের অভাব মানুষের ভ্রমণপিপাসু মনকে উসকে দেয়। জ্ঞানার্থী মানুষের দল পরোক্ষভাবে জ্ঞান লাভের বস্তুর অভাবে প্রত্যক্ষাভিজ্ঞতার নেশায় পাড়ি জমাতে থাকে অন্যান্য স্থানে, বিভিন্ন দেশে। শারীরিক কষ্ট, দস্যু ভয়, পথের বন্ধুরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কোনো কিছুই তাদের উদ্দাম চলার নেশাকে প্রতিহত করতে পারেনি। ভারতভূমি তাই ধন্য হয়েছে বহু জ্ঞানী ও জ্ঞানান্বেষণকারী পর্যটক, শিক্ষার্থী ও বৌদ্ধ-দার্শনিক তথা বৌদ্ধ ভিক্ষুর পাদস্পর্শে।

ভ্রমণের মাধ্যমে শিক্ষা লাভ:

 মানুষের জ্ঞানভান্ডারের এক বৃহৎ অংশ পুস্তকের জগৎ থেকেই আবুত হয়। কিন্তু বইয়ের পঠনপাঠন আমাদের মননের গভীরতাকে "স্পর্শ করতে পারে না। তা ছাড়া শেকসপিয়রের বন্ধুণ্য "Home-keeping youths ever have homely wits" কথাটি সর্বান্তকরণে সত্য। গৃহাভ্যন্তরে নিশিদিন যাপনকারী যুবকের হৃদয় সংকীর্ণ ও কূপমণ্ডুক হয়ে ওঠে। অনন্ত প্রসারিত বিশ্বের প্রত্যক্ষাভিজ্ঞতা আমাদের চিন্তাভাবনার পরিধিকে বাড়িয়ে দেয়, আর তখনই লঙ্গ হয় প্রকৃত জ্ঞান।


 পাঠ্যবস্তূ পাঠে ভ্রমণের অপরিহার্যতা:

 ভ্রমণজনিত অভিজ্ঞতার আলোয় চলমান হয়ে ওঠে ইতিহাস, ভূগোল ও নৃতত্ত্ব। ইতিহাসের বইয়ে আবন্ধ ফা হিয়েন, হিউয়েন সাঙ কিংবা মেগাস্থিনিস ও অতীশ দীপঙ্করের ভ্রমণবর্ণনা প্রত্যক্ষ দর্শনে জীবন্ত হয়ে ওঠে, জ্বলন্ত রূপ ধারণ করে ঐতিহাসিক স্থানগুলির গ্রন্থাবন্ধ বর্ণনা। ঠিক একইভাবে ভূগোল বইগুলিতে বাঁধা পড়া অসংখ্য জালবিস্তারী নদী, আফ্রিকার গহন অরণ্য থেকে হিমালয়ের অভংলিহ সত্তার জাগ্রত কায়া-সবই ম্যাপের সীমানা পেরিয়ে নিজের অস্তিত্ব সহযোগে ধরা দেয় আমাদের দৃষ্টিপথে। ইতিহাস-ভূগোলের গ্রন্থাবন্ধ কথাকাহিনি আমাদের সমক্ষে যখন প্রকৃত রূপে প্রতিভাসিত হয় তখন সম্পূর্ণতা লাভ করে আমাদের শিক্ষা লাভের প্রয়াস।


সংস্কৃতির সমৃদ্ধি ও দেশভ্রমণ: 

দেশভ্রমণের ফলে আমাদের সাহিত্য ভাণ্ডারেও সংযোজিত হয় নরনার সৃষ্টি। ভ্রমণকাহিনি অবলম্বনে সৃষ্ট ভ্রমণসাহিত। অতীত ও বর্তমানের মাঝে সেতুবন্দন রচনা করে। ফা-হিয়েন, মেগাস্থিনিসের বর্ণনা থেকে শুরু করে আধুনিক কালের রবীন্দ্রনাথের ভ্রমণমূলক রচনাবলি সমৃন্ধ করেছে ভারতীয়সাহিত্যক্ষেত্রকে ও সেই সঙ্গে ভারতীয় সংস্কৃতিকে।


বিশ্বশান্তির বার্তাবহন :

বর্তমান বস্তুবিশ্বে চলমান শক্তির প্রতিযোগিতার লড়াইয়ের মাঝে দেশভ্রমণ কিংবা বিদেশভ্রমণ বয়ে আনছে শাস্তির বার্তা। ভ্রমণের ফলে ভিনদেশি মানুষরা পরস্পরের সান্নিধ্য লাভ করায় নিষ্ঠুর ভেদাভেদের প্রাচীর ঘুচিয়ে দিয়ে শুভবোধে উন্নীত হতে পারবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক তথা জাতীয় ক্ষেত্রে সম্প্রীতি ও সৌভ্রাতৃত্বের সৌধ রচিত হবে। বস্তুত, এই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সমাজে বিশ্বশান্তির দামামা বাজানো সম্ভবপর হবে একমাত্র ভ্রমণেরই কল্যাণে।


আর্থিক উন্নয়নে ভূমিকা:

ভ্রমণকে অবলম্বন করে দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশ দেশে অর্থাগমের পথ প্রশস্ত করছে। পর্যটন শিল্প বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশের ধনভাণ্ডারকে স্ফীত করছে, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের গমনাগমনে বৈদেশিক মুদ্রার আগম ঘটছে, দর্শনীয় স্থানগুলি ও স্থানীয় হোটেলগুলির শ্রীবৃদ্ধি ঘটছে।


উপসংহার: 

বর্তমান যুগে বিজ্ঞানের বিজয় বৈজয়ন্তীর সময়ে বহিরাঙ্গিক সমৃদ্ধির জয়গাথা রচিত হচ্ছে অন্তরের ভগ্নদশাপ্রাপ্ত শিলাস্তরের উপর। তাই বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে ভ্রমণ একান্ত অপরিহার্য। চির অচেনার মাঝে অজানা সঙ্গীগুলি যখন একসঙ্গে চলতে শুরু করে তখন দূর হয়ে ওঠে নিকট, পর হয়ে ওঠে আপন। ফলে আমরা আমাদের ভ্রমণসঙ্গীকে অবলম্বন করেই বিশ্বমৈত্রীর পথে এগিয়ে যাই ও তৃপ্ত করি আমাদের চির-জিজ্ঞাসু, চিরপিপাসু মনকে।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area