ভারতপথিক রামমোহন বাংলা রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।
এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "ভারতপথিক রামমোহন" প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতপথিক রামমোহন বাংলা রচনা || Varotpothik Rammohon Bangla Rachana Class-10
ভারতপথিক রামমোহন
"নবজাগরণের শুকতারা সম রাজা রামমোহন রায়, মানবতার মশাল হাতে ভারতপথিক, তুলনা নেই তার।"
ভূমিকা :
ভারত তথা সমগ্র প্রাচ্যদেশে যিনি নবজাগরণের বাণী শুনিয়েছেন, তিনিই 'নবজাগরণের শুকতারা' ভারতপথিক রাজা রামমোহন রায়। ইউরোপে জন উইক্লিফ যেমন 'Morning stars of Reformation', তেমন ভারতে রামমোহন প্রথম জাগ্রত মানুষ, মৃতসঞ্জীবনী মন্ত্রের স্রষ্টা। তিনিই কুসংস্কারের অন্ধকারে নিমজ্জিত জাতিকে উদ্ধার করে জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোয়- আলোকিত করে দেখালেন সত্যের পথ, মানবতার মার্গ।
জন্ম সময় :
রামমোহন রায় ১৭৭৪ সালে হুগলি জেলার অন্তর্গত খানাকুল-কৃষ্ণনগরের সন্নিহিত রাধানগর গ্রামে এক সম্পন্ন বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। রামমোহনের পিতা রামকান্ত রায়, মাতা, তারিণীদেবী।
লেখাপড়া ও সম্ভাবনা :
রামমোহন তাঁর জীবনের প্রথম চোদ্দো বছর কাটিয়েছিলেন রাধানগরে। রামমোহন পাটনায় আরবি এবং কাশীতে সংস্কৃত শিক্ষালাভ করেছিলেন।
রামমোহনের বিষয়-আশয় :
১৭৯৬ সালে তিনি পৈতৃক ও অন্যান্য সূত্রে কিছু জমি, বাগান, কলকাতাস্থ জোড়াসাঁকোর বাড়ির মালিকানা লাভ করেন। বৈষয়িক কাজে তিনি কলকাতা, বর্ধমান ও লাঙুলপাড়ায় বিভিন্ন সময়ে অবস্থান করতেন। ১৮১৪ সালে থেকে রামমোহন কলকাতায় বসবাস শুরু করেন। তাঁকে কেন্দ্র করে কলকাতার জনজীবনে এক বিপুল নবচেতনার আন্দোলন শুরু হয়। কলকাতায় এসে তিনি বেদান্ত অনুবাদে হাত দেন। বাংলায় বেদান্তের প্রথম অনুবাদ ছিল এক যুগান্তকারী ঘটনা। এরপর শুরু হয় বাংলার নবজাগরণের কাল।
বেদান্তের নতুন ভাষ্য: ব্রাাসমাজ প্রতিষ্ঠা :
রামমোহন তাঁর প্রথম জীবনের শিক্ষক হরিহরানন্দের কাছে হিন্দুশাস্ত্র ও দর্শনের পাঠ গ্রহণ করেছিলেন। কলকাতার স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে তাঁর জ্ঞান ও বিশ্বাস মতো ধর্ম, সমাজ, রাষ্ট্র, বাংলা ভাষা, সাহিত্যের উন্নতিবিধানে সচেষ্ট হন। বাংলা ভাষায় বেদান্তের তিনিই প্রথম ভাষ্যকার। সেই সঙ্গে একেশ্বরবাদ প্রচারের জন্য তিনি 'আত্মীয় সভা' প্রতিষ্ঠা করেন। এই সভাই পরবর্তীকালে 'ব্রাহ্মসমাজে'র রূপ লাভ করে। তিনি নিরাকার ব্রহ্মবাদের প্রচারক ছিলেন। তাঁর নতুন ধর্মমত তৎকালীন প্রগতিশীল মানুষদের মনে প্রভাব বিস্তার করেছিল। তাঁর এই ধর্মমত 'ব্রাহ্মধর্ম' নামে খ্যাত। তবে রক্ষণশীল হিন্দুসমাজ তাঁর নিরাকার ব্রহ্মবাদকে মেনে নেয়নি। ফলে রক্ষণশীল ব্যক্তিদের তিনি শত্রু হয়ে ওঠেন।
সতীদাহ প্রথা নিরোধ ও শিক্ষার প্রসার :
রামমোহন বেশ কিছু সাময়িকপত্রের সম্পাদনা করেন। ইংরেজি-বাংলায় 'ব্রাহ্মণ সেবধি', বাংলায় 'সম্বাদ কৌমুদী', ফারসিতে 'মীরাৎ-উল-আখবার' প্রকাশ করেছিলেন। রামমোহন নির্মিত ব্রাহ্মসমাজ ভবনে সর্বশ্রেণির মানুষের উপাসনার অধিকার ছিল। রামমোহন সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে জনমত গঠন করেছিলেন। তাঁর চেষ্টায় ১৮২৯ সালে লর্ড বেন্টিঙ্ক সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে তিনি ইংরেজি ভাষাকে উপযুক্ত মনে করতেন। নিজের খরচে 'অ্যাংলো হিন্দু স্কুল' স্থাপন করেন। মোটকথা রামমোহন ছিলেন আধুনিক ভারত-চিন্তার জনক।
রাজনৈতিক মতামত এবং বিশ্ববোধ :
রাজনৈতিক মতে রামমোহন ছিলেন আন্তর্জাতিকতাবাদী। বিশ্বের বড়ো বড়ো দেশের রাজনীতির খবরাখবর তিনি নিয়মিত রাখতেন। ফ্রান্সে ১৮৩০ সালে জুলাই বিপ্লবের সংবাদে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। এদেশে জুরি প্রথা প্রবর্তনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। দিল্লির বাদশাহের কাছ থেকে তিনি 'রাজা' উপাধি লাভ করেন। পরে তিনি তাঁর দূত হিসেবে ইংল্যান্ডের রাজদরবারে প্রেরিত হন। লিভারপুল বন্দরে অবতরণের পর তাঁকে বিপুলভাবে সংবর্ধিত করা হয়। তিনি ১৮৩২ সালে প্যারিসে যান, সেখানে লুই ফিলিপ কর্তৃক সংবর্ধিত হন। ইংল্যান্ডে ফিরে ব্রিস্টল শহরে বসবাস শুরু করেন। সেখানে ১৮৩৩ সালে হঠাৎ তাঁর মৃত্যু হয়।
বাংলা গদ্যরচনা ও আধুনিকতা :
রাজা রামমোহনের পান্ডিত্য ছিল অসাধারণ। অনেক ঐতিহাসিক রামমোহনকেই বাংলা গদ্যের জনক বলে থাকেন। প্রায় তিরিশটি বাংলা গ্রন্থ তিনি রচনা করেন। তিনি মুক্তচিন্তার মানুষ ছিলেন। ছিলেন ভারতবর্ষে আধুনিকতার প্রবর্তক। তাই তাঁকে 'ভারতপথিক' বলা হয়।
উপসংহার :
সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতার প্রবক্তা রামমোহন ছিলেন ভারতের গৌরবময় অতীত ও অনন্ত সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের মধ্যে জীবন্ত সেতুস্বরূপ। তাই তাঁর নাম আজও অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়।
আরও পড়ুন-