Ads Area


বিবেকানন্দ ও যুবসমাজ বাংলা প্রবন্ধ রচনা || vivekananda jubosamaj Bangla prabandha Rachana

বিবেকানন্দ ও যুবসমাজ বাংলা প্রবন্ধ রচনা

পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।

এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "বিবেকানন্দ ও যুবসমাজ" প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।


বিবেকানন্দ ও যুবসমাজ বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Vivekananda Jubosamaj Bangla prabandha Rachana


বিবেকানন্দ ও যুবসমাজ বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Vivekananda Jubosamaj Bangla prabandha Rachana  



বিবেকানন্দ ও যুবসমাজ


"বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ জ্ঞানের আলোক শিখা, 

ভারত আত্মার মূর্ত প্রতীক বিশ্বপ্রেমের দিব্য লিখা।"


ভূমিকা :

"হে বীর, সাহস অবলম্বন করো, সদর্পে বলো-আমি ভারতবাসী, ভারতবাসী আমার ভাই।"-এই বাণী মৃতপ্রায় জাতির কর্ণে যিনি শুনিয়েছেন, তিনি ভারত আত্মার মূর্ত প্রতীক বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ। প্রেমের ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের প্রিয়তম শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ ভারতের গৌরব সূর্য-যাঁর আলোকচ্ছটায় সমগ্র ভারত তথা পৃথিবী আলোকিত। আমাদের জন্য তাঁর প্রার্থনা- "আমাকে মনুষ্যত্ব দাও, আমাকে মানুষ করো।" এর থেকে বড়ো বাণী আর কী আছে?

জন্মপরিচয় :

এই মহামানব ১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি কলকাতার সিমলাপাড়ার দত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা বিশ্বনাথ দত্ত, মাতা ভুবনেশ্বরী দেবী। প্রথমে তাঁর নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ, ডাকনাম 'বিলে'। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে তিনি হলেন বিবেকানন্দ-আনন্দ ও বিবেক বৈরাগ্যের মূর্ত ভাববিগ্রহ। 

জীবে প্রেম :

বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণের কাছে ত্যাগ-মন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে নবরূপে ঈশ্বরকে উপলব্ধি করলেন, মানুষের ভেতর খুঁজে পেলেন ঈশ্বরকে এবং মানবসেবার মাধ্যমে দেখলেন ঈশ্বর সেবার পথ। উদাত্ত কণ্ঠে তিনি ঘোষণা করলেন-


"বহুরূপে সম্মুখে তোমার

ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর-

জীবে প্রেম করে যেই জন

সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।"

মানবমুক্তি :

বিবেকানন্দ বেদান্তের সমুদ্রমন্থন করে প্রচার করলেন বৈদান্তিক সাম্যবাদ; এই সাম্যবাদ হল শ্রেণিহীন, বর্ণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার সোপান। "সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই"- এই সত্য তিনি আবার সগর্বে ঘোষণা করলেন।

নতুন ভারতের স্বপ্ন :

স্বামীজি ভারতবর্ষে এমন একটি সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন- "যাতে ব্রাহ্মণ্য যুগের জ্ঞান, ক্ষত্রিয়ের সভ্যতা, বৈশ্যের সম্প্রসারণ শক্তি এবং শূদ্রের সাম্যের আদর্শ মিলিত হয়ে এদেশ এক মহামানবের পূর্ণ পীঠস্থান রূপে পরিগণিত হয়।” দুর্দশা তাঁকে ব্যথিত করেছিল। তবে তিনি আশা হারাননি। বলেছিলেন, "ভারত আবার উঠবে, জড়ের শক্তিতে নয়, চৈতন্যের শক্তিতে।" ভারত ছিল তাঁর মা। ভারতের মানুষ ও সংস্কৃতি ছিল তাঁর প্রাণ। ভারতকে ভালোবেসে তিনি হয়ে উঠেছিলেন- 'ভারতাত্মা'। "ভারতবাসী আমার ভাই, ভারতবাসী আমার প্রাণ, ভারতের দেবদেবী আমার ঈশ্বর, ভারতের সমাজ আমার শিশুশয্যা, আমার যৌবনের উপবন, আমার স্বর্গ, ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ।"

যুবকদের প্রতি আহ্বান :

 অধঃপতিত ভারতবর্ষকে পুনরায় স্ব-মহিমায় প্রতিষ্ঠিত করতে স্বামীজি যুবশক্তির ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন। তিনি বললেন- "শুধু মানুষ চাই, শুধু শক্তিমান মানুষ।" সেদিনের যুবসমাজ স্বামীজির ত্যাগ ও আদর্শের মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বদেশের শৃঙ্খল মোচনের জন্য উদ্বোধিত হয়েছিল। যুবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে স্বামীজি বলেছিলেন- "দেশপ্রেমিক হও.... জাতিকে প্রাণের সঙ্গে ভালোবাসে।” যুবকদের প্রতি তাঁর নির্দেশ ছিল- "হে যুবকবৃন্দ, দরিদ্র, অজ্ঞ ও নিপীড়িত মানুষের ব্যথা তোমরা প্রাণে প্রাণে অনুভব করো।" জনগণের সেবায় প্রাণপাত করতে বললেন তিনি।

 তাঁর আশীর্বাদ-"তোমরা বড়ো কাজ করবার জন্য জন্মেছ।.... লক্ষ্যে এগিয়ে যাও।” এ কাজের জন্য প্রয়োজন প্রকৃত মানুষের। তাই স্বদেশমন্ত্রে যুবকদের জন্য তিনি দিলেন প্রার্থনা মন্ত্র-“মা আমার দুর্বলতা, কাপুরুষতা দূর করো, আমায় মানুষ করো।" স্বামীজি বলেছিলেন- “টাকা নয়, চরিত্রই সবকিছু সাফল্যের মূল"। তাই তিনি চরিত্রবান বলিষ্ঠ হৃদয় যুবকদল গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। বলেছিলেন-"তোমরা মায়ের জন্য বলিপ্রদত্ত”। এই জীবন কেবল ব্যক্তিগত গুণের জন্য নয়, দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য। যুবকদের তিনি দীর্ঘ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে বলেছিলেন। তাদের যুদ্ধ অশিক্ষা, অজ্ঞতা, অস্বাস্থ্যের বিরুদ্ধে। তাঁর আশা ছিল ছাত্র ও যুবকরাই ভারতকে পূর্ব মহিমা ফিরিয়ে দিতে পারবে।

গ্রন্থরচনা ও তাঁর বাণী :

 স্বামীজি উপলব্ধি করেছিলেন জাতির অনগ্রসরতার কারণ অশিক্ষা, অজ্ঞতা। শিক্ষার মধ্যেই তিনি দেখেছিলেন জাতির মুক্তির চাবিকাঠি। তাঁর স্বপ্ন ছিল দেশের যুবকবৃন্দ নিরক্ষর অসহায় মানুষের মধ্যে জ্ঞানের আলোক প্রদীপ প্রজ্বলিত করবে। তাঁর আদর্শে প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মিশন আজ সেই কাজ করে চলেছে। এখানে স্বামীজির আদর্শে ভারত-সহ সমগ্র বিশ্বে মিশনের 'জগৎ-হিতায়' কর্মযজ্ঞ চলেছে। লক্ষ কোটি আর্ত মানুষ এখানে আশ্রয় ও আশ্বাস লাভ করে চলেছে।

 উপসংহার :

বিবেকানন্দ জাতির গৌরব, সেবাধর্মের মূর্তপ্রতীক, যুবশক্তির কাছে মৃতসঞ্জীবনী মন্ত্র। তাই বিবেকানন্দই ভারতবর্ষ, ভারতবর্ষই বিবেকানন্দ। যার জন্য কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ রোমাঁ রোলাঁকে বলেছিলেন- 'If you want to know India, read Vivekananda'.

আরও পড়ুন-

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area