15 ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের কবিতা
স্বাগত পাঠক বৃন্দ আজকের এই পোস্ট স্বাগতম। আজকে আমি তোমাদের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কিছু কবিতা শেয়ার করলাম।
১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস, যা ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তির স্মরণে উদযাপন করা হয়। এই দিনটি ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা উপনিবেশিক শাসনের অবসান এবং একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের আত্মপ্রকাশের প্রতীক।
প্রতি বছর ১৫ আগস্ট দিনটি সারা ভারত জুড়ে উদযাপিত হয়। দিল্লির লাল কেল্লায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। এই অনুষ্ঠানে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং দেশের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস এবং সামাজিক সংগঠনগুলোতে পতাকা উত্তোলন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং স্বাধীনতার ইতিহাসের উপর আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়
১৫ আগস্ট আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে স্বাধীনতা সহজে অর্জিত হয়নি। অসংখ্য দেশপ্রেমিকের আত্মত্যাগ, ত্যাগ এবং নিরলস প্রচেষ্টার ফলেই আমরা আজকের স্বাধীনতা পেয়েছি। এই দিনটি আমাদের মধ্যে দেশপ্রেম এবং জাতীয় একতার অনুভূতি জাগিয়ে তোলে এবং আমাদের জাতির উন্নয়নের জন্য একত্রে কাজ করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে আসে।
চলুন আর দেরি না করে স্বাধীনতা দিবসের কবিতা দেখে নিয়। কবিতা গুলি সুন্দরভাবে লিখিত আকারে নিচে দেওয়া হল।
স্বাধীনতা দিবসের কবিতা আবৃত্তি ছোটদের | ভারতের স্বাধীনতা দিবসের কবিতা আবৃত্তি ছোটদের
১. স্বাধীনতা তুমি
কবি: শামসুর রাহমান
স্বাধীনতা তুমি
রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল, ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো মহান পুরুষ, সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কাঁপা-
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা,
স্বাধীনতা তুমি
পতাকা-শোভিত স্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল, স্বাধীনতা তুমি ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
স্বাধীনতা তুমি
রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।
স্বাধীনতা তুমি
মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশি।
স্বাধীনতা তুমি
অন্ধকারের খাঁ-খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক,
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়া তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শাণিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি
চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোডো সংলাপ।
স্বাধীনতা তুমি
কালবোশেখীর দিগন্ত জোড়া মত্ত ঝাপটা।
স্বাধীনতা তুমি শ্রাবণে অকূল মেঘনার বুক,
স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।
স্বাধীনতা তুমি উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন,
স্বাধীনতা তুমি
বোনের হাতে নম্র পাতায় মেহেদির রঙ।
স্বাধীনতা তুমি
বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রঙা পোস্টার।
স্বাধীনতা তুমি
গৃহিণীর ঘন খোলা কালোচুলে, হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।
স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা, খুকির অমন তুলতুলে গালে রৌদ্রের খেলা।
স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান,
বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।
২. স্বাধীনতা, উলঙ্গ কিশোর
কবি: নির্মলেন্দু গুণ
জননীর নাভিমূল ছিঁড়ে উল্ঙ্গ শিশুর মত
বেরিয়ে এসেছো পথে, স্বাধীনতা, তুমি দীর্ঘজীবী হও।
তোমার পরমায়ু বৃদ্ধি পাক আমার অস্তিত্বে, স্বপ্নে,
প্রাত্যহিক বাহুর পেশীতে, জীবনের রাজপথে,
মিছিলে মিছিলে; তুমি বেঁচে থাকো, তুমি দীর্ঘজীবী হও।
তোমার হা-করা মুখে প্রতিদিন সূর্যোদয় থেকে
সূর্যাস্ত অবধি হরতাল ছিল একদিন,
ছিল ধর্মঘট, ছিলো কারখানার ধুলো।
তুমি বেঁচেছিলে মানুষের কলকোলাহলে,
জননীর নাভিমূলে ক্ষতচিহ্ন রেখে
যে তুমি উল্ঙ্গ শিশু রাজপথে বেরিয়ে এসেছো,
সে-ই তুমি আর কতদিন ‘স্বাধীনতা, স্বাধীনতা’ বলে
ঘুরবে উলঙ্গ হয়ে পথে পথে সম্রাটের মতো?
জননীর নাভিমূল থেকে ক্ষতচিহ্ন মুছে দিয়ে
উদ্ধত হাতের মুঠোয় নেচে ওঠা, বেঁচে থাকা
হে আমার দূঃখ, স্বাধীনতা, তুমিও পোশাক পরো;
ক্ষান্ত করো উলঙ্গ ভ্রমণ, নয়তো আমারো শরীরি থেকে
ছিঁড়ে ফেলো স্বাধীনতা নামের পতাকা।
বলো উলঙ্গতা স্বাধীনতা নয়,
বলো দূঃখ কোনো স্বাধীনতা নয়,
বলো ক্ষুধা কোন স্বাধীনতা নয়,
বলো ঘৃণা কোন স্বাধীনতা নয়।
জননীর নাভিমূল ছিন্ন-করা রক্তজ কিশোর তুমি
স্বাধীনতা, তুমি দীর্ঘজীবী হও। তুমি বেঁচে থাকো
আমার অস্তিত্বে, স্বপ্নে, প্রেমে, বল পেন্সিলের
যথেচ্ছ অক্ষরে, শব্দে, যৌবনে, কবিতায়।
৩. বাতাসে লাশের গন্ধ
কবি: রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই,
আজো আমি মাটিতে মৃত্যুর নগ্ননৃত্য দেখি,
ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে-
এ দেশ কি ভুলে গেছে সেই দুঃস্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময়?
বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে,
মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ।
এই রক্তমাখা মটির ললাট ছুঁয়ে একদিন যারা বুক বেঁধেছিলো।
জীর্ণ জীবনের পুঁজে তারা খুঁজে নেয় নিষিদ্ধ আঁধার।
আজ তারা আলোহীন খাঁচা ভালোবেসে জেগে থাকে রাত্রির গুহায়।
এ যেন নষ্ট জন্মের লজ্জায় আড়ষ্ট কুমারী জননী,
স্বাধীনতা, -একি তবে নষ্ট জন্ম?
একি তবে পিতাহীন জননীর লজ্জার ফসল?
জাতির পতাকা খামচে ধরেছে আজ সেই পুরোনো শকুন।
বাতাশে লাশের গন্ধ-
নিয়ন আলোয় তবু নর্তকীর দেহে দোলে মাংসের তুফান।
মাটিতে রক্তের দাগ-
চালের গুদামে তবু জমা হয় অনাহারী মানুষের হাড়।
এ চোখে ঘুম আসে না। সারারাত আমার ঘুম আসে না-
তন্দ্রার ভেতরে আমি শুনি ধর্ষিতার করুণ চিৎকার,
নদীতে পানার মতো ভেসে থাকা মানুষের পচা লাশ,
মুন্ডহীন বালিকার কুকুরে খাওয়া বিভৎস শরীর
ভেসে ওঠে চোখের ভেতরে। আমি ঘুমুতে পারিনা, আমি
ঘুমোতে পারিনা-
রক্তের কাফনে মোড়া কুকুরে খেয়েছে যারে, শকুনে খেয়েছে যারে
সে আমার ভাই, সে আমার মা, সে আমার প্রিয়তম পিতা।
স্বাধীনতা, সে আমার স্বজন, হারিয়ে পাওয়া একমাত্র স্বজন-
স্বাধীনতা, সে আমার প্রিয় মানুষের রক্তে কেনা অমূল্য ফসল।
ধর্ষিতা বোনের শাড়ী ওই আমার রক্তাক্ত জাতির পতাকা।
৪. স্বাধীনতার মানে
কবি: ভবানীপ্রসাদ মজুমদার
যে ছেলেটা বস্তা-কাঁধে কাগজ কুড়ােয় পাড়ায় পাড়ায়
যে ছেলেটা রােজ বাজারে মুরগি কাটে, পালক ছাড়ায়,
যে ছেলেটা রেস্তোরাঁতে ধুচ্ছে থালা-গেলাস-বাটি
যে ছেলেটা সারাজীবন খায় লাথি-কিল-চড় ও চাঁটি!
ওদের কাছে প্রশ্ন কোরাে, ওরা কি কেউ সত্যি জানে
স্বাধীনতা’ কাকে বলে, স্বাধীনতার সঠিক মানে ?
যে মেয়েটা ভাের-না-হতেই মায়ের সাথে যাচ্ছে কাজে
যে মেয়েটা পরের বাড়ি কাপড় কাচে, বাসন মাজে,
যে মেয়েটা গােবর কুড়ােয়, ঘুঁটেও দেয়, কয়লা বাছে
যে মেয়েরা সারাজীবন পায়না আদর কারােই কাছে !
ওদের কাছে প্রশ্ন কোরাে, ওরা কি কেউ সত্যি জানে
স্বাধীনতা’ দেখতে কেমন ? স্বাধীনতার সঠিক মানে ?
যে ছেলেটা রাস্তাঘাটে করছে পালিশ পরের জুতাে
যে ছেলেরা ট্রেনের হকার, খাচ্ছে রােজই লােকের গুঁতাে,
লজেন্স খাওয়ার বয়স যাদের, করছে তারাই লজেন্স ফেরি
যাদের বুকে সূর্য ওঠার, গােলাপ ফোটার অনেক দেরি !
ওদের কাছে প্রশ্ন কোরাে, ওরা কি কেউ সত্যি জানে
স্বাধীনতা’ জিনিসটা কি ? স্বাধীনতার সঠিক মানে
স্বাধীনতার মানে বােঝে নীল-আকাশের বন্ধু পাখি
স্বাধীনতার মানে বুঝেই চাঁদ তারাদের পরায় রাখি,
স্বাধীনতার মানে বােঝে পাহাড়-সাগর-ঝরনা-নদী
স্বাধীনতার মানে বুঝেই বইছে বাতাস নিরবধি!
স্বাধীনতার সঠিক মানে ক’জন স্বজন সত্যি জানে
স্বাধীনতার সংজ্ঞা খুঁজো শেকল ছেঁড়া পাখির গানে!
৫.কান্ডারী হুশিয়ারি
দুর্গম গিরি কান্তার-মরু দুস্তর পারাবার
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে যাত্রীরা হুশিয়ার!
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভূলিতেছে মাঝি পথ,
ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ?
কে আছ জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যত।
এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার!!
তিমির রাত্রি, মাতৃমন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান!
যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান!
ফেনাইয়া উঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান,
ইহাদের পথে, নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার!!
অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানেনা সন্তরণ,
কান্ডারী! আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তিপণ!
“হিন্দু না ওরা মুসলিম?” ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?
কান্ডারী! বল ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা’র!
গিরি-সংকট, ভীরু যাত্রীরা, গুরু গরজায় বাজ,
পশ্চাৎ-পথ-যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ
কান্ডারী! তুমি ভূলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ-মাঝ?
‘করে হানাহানি, তবু চল টানি’, নিয়াছ যে মহাভার!
কান্ডারী! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর,
বাঙ্গালীর খুনে লাল হ’ল যেথা ক্লাইভের খঞ্জর!
ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর
উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পুনর্বার।
ফাঁসির মঞ্চে যারা গেয়ে গেল জীবনের জয়গান,
আসি’ অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন বলিদান?
আজি পরীক্ষা জাতির অথবা জাতের করিবে ত্রান?
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, কান্ডারী হুঁশিয়ার!