ছাত্রজীবনে শিষ্টাচারের উপোযাগিতা বাংলা রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।
এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "ছাত্রজীবনে শিষ্টাচারের উপাযোগিতা" প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ছাত্রজীবনে শিষ্টাচারের উপযোগিতা বাংলা রচনা || Chatra jibane Sisthacarera Upayogita
ছাত্রজীবনে শিষ্টাচারের উপযোগিতা
শিষ্টাচার কাকে বলে?
'শিষ্টাচার' কথাটির অর্থ হল 'সদাচার' অর্থাৎ সকলের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা। আমরা যাকে বলি 'ভদ্রতা, 'সৌজন্য' বা মিষ্টি ব্যবহার, শিষ্টাচার এদের থেকে পৃথক কিছু নয়। কিন্তু একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে, এই আচরণটি ওদের থেকে একটুখানি বেশি। এই ব্যবহারটি হল আন্তরিক। এর ভেতর রয়েছে সংস্কৃতির ছোঁয়া। ধনরত্নের প্রাচুর্য, বিদ্যার বৈভব এবং বুদ্ধির বৈদগ্ধ্য দিয়ে শিষ্টাচারকে অর্জন করা যায় না। এটি হল মানুষের সহজাত। সহজাত হলেও বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেখবার সময় এটিকে আত্মস্থ করতে হয়।
লেখাপড়ার সঙ্গে শিষ্টাচারের অভ্যাস :
প্রাচীনকালে আমাদের তপোবন শিক্ষার সময় শোনা গিয়েছিল, 'অধ্যয়নই হল ছাত্রদের তপস্যা'। সাধুসন্ত এবং মুনি-ঋষিরা যেমনভাবে তপস্যা করে ইষ্ট দেবতাকে লাভ করতেন, ছাত্ররাও সেইভাবে তাদের বিদ্যাকে পাওয়ার জন্য একমনে লেখাপড়া করুক। এই উপদেশটি একমাত্র সত্য। তবে এখন যেহেতু তপোবনের মাঝে ছাত্রদের বিদ্যাচর্চা হয় না, লেখাপড়া শিখতে হয় সমাজে বসে, তাই সামাজিক ভাবে বাঁচতে গেলে আচার-ব্যবহারেও আমাদের কিছু পাঠ নিতে হবে। এই পাঠ্য তালিকায় প্রথম পাঠটি হল 'শিষ্টাচার'। সকলের সঙ্গে মিলেমিশে ভালো ব্যবহার করা।
ছাত্রসংখ্যার আধিক্য হেতু সকলের জন্য শিষ্টাচার :
ইদানীংকালে শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক প্রসারের ফলে আমাদের দেশে ছাত্রছাত্রীসংখ্যা অনেক। আমাদের দেশে এরাই জাতির ভবিষ্যৎ। এই ছাত্ররা বিভিন্ন পরিবেশ থেকে এসেছে শিক্ষার আঙিনায়। এদের কেউ নগরবাসী, কেউ-বা প্রত্যন্ত গ্রামের অধিবাসী। এদের অনেকেরই জাতি ও ধর্ম আলাদা। এদের ভেতরে কেউ উগ্র, কেউ নম্র। কেউ মৃদুভাষী, কেউ কর্কশভাষী। কিন্তু শিক্ষার অঙ্গনে সকলে সমান। বৈচিত্র্য বজায় রেখে শিক্ষা তাদের এমন এক সংস্কৃতিতে দীক্ষা দেয়, যার ভেতর 'শিষ্টাচার' হল প্রধান। এই শিষ্টাচার রপ্ত হলে এই বিচিত্র ও বিভিন্ন সমাজ-পরিবেশ থেকে আসা ছাত্ররা এক মিলনসূত্রে গাঁথা হয়ে যায়। পরস্পরের ভেতর একটি সখ্যের বন্ধন তৈরি হয়।
বিদ্বেষ, বিভেদ বাদ দিয়ে শুধু শিষ্টাচার :
ছাত্ররা অনেক সময় সহজাত শিষ্টাচার বর্জন করে অশিষ্ট, অভদ্র হয়ে ওঠে। একজন যখন আর একজনকে গালাগালি করে তখন তাদের ভাষা হয় অমার্জিত, কর্কশ এবং মেজাজ হয় প্রতিহিংসাপরায়ণ। এই অসংযত ব্যবহারের কারণ হয় নানারকম। এর পিছনে থাকে জাতিবিদ্বেষ, ধর্মবিদ্বেষ অথবা প্রাদেশিকতা। ইদানীং এই বিদ্বেষের আর একটি নতুন ইন্ধন হল 'রাজনীতি'। এই রাজনীতির ভেদাভেদ এতই ব্যাপক যে, তা সবরকম নীতিবোধকে টলিয়ে দেয়। হারিয়ে যায় তখন সবরকম ভদ্রতা, সদাচার। বিসর্জিত হয় সৌজন্যবোধ। আমাদের দেশের ছাত্রসমাজ এখন এই ভয়ংকর ব্যাধিতে আক্রান্ত। এ যেন কুসুম কাননে দুষ্ট পোকার আক্রমণ। এই দুষ্ট পোকা কেবল ফুলগুলি নষ্ট করে না, নষ্ট করে খেতের পর খেত, কাননের পর কানন, ধ্বংস করে গোটা দেশ।
ভালোবাসাই শিষ্টাচার :
'শিষ্টাচার' হল উন্নত ও সভ্য মানুষের চরিত্র-ধর্ম। ছাত্রদের কাছে উন্নত জীবনে পৌঁছানোর সোপান হল এই শিষ্টাচার। ফুলের মধ্যে যেমন মধু, এটি হল তেমনি আমাদের ভেতর ভালোবাসার মাধুর্য। ছাত্রজীবনেই এর জন্ম, এখানেই এর উৎকর্ষ। মানুষে মানুষে এটি হল এক অটুট মেলবন্ধন। তাই ছাত্রজীবনে শিষ্টাচারের চর্চা করা খুবই জরুরি।