একটি ভাঙা ছাতার আত্মকথা বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।
এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "একটি ভাঙা ছাতার আত্মকথা " প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
একটি ভাঙা ছাতার আত্মকথা বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Ekti Bhanga Chatar Atmokotha Bangla Prabandha Rachana
একটি ভাঙা ছাতার আত্মকথা
ভূমিকা :
চার মাথার মোড়ে ছোটো ছাতা সারাই-এর দোকানের আমি একটি ছাতা। একটু সাবেক কালের। আমার কাপড়ের কালো রং রোদে পুড়ে, জলে ভিজে ফ্যাকাসে আর ধূসর হয়ে এসেছে। লোহার শিক বা ডাঁটির অবস্থাও তথৈবচ। অর্থাৎ বয়সের ভারে আমি বেশ একটু নড়বড়েই হয়ে পড়েছি। তাই বেশিরভাগ সময়েই মনের দুঃখে দোকানের এককোণে পড়ে থাকি।
আর মনে মনে নিজের পুরোনো কেতাদুরস্ত জীবনের কথা ভাবি। তবে মাঝেমধ্যে আমার ভাগ্যেও শিকে ছেঁড়ে। মানে দোকানে কেউ ছাতা সারাতে দিলে মিস্ত্রিদাদা আমাকে দু-একদিনের জন্য তাদের বাড়ি পাঠায়। তখন হঠাৎ হারানো যৌবন ফিরে পেয়ে খুশিতে মনটা ডগমগ করে ওঠে। নিজের সাধ্যমতো রুগ্ম শরীরেও রোদ-বৃষ্টির সঙ্গে যুঝে চলি। কিন্তু মাত্র কয়েকদিন, ফের আবার ব্যথায় ভরা দেহে যন্ত্রপাতির পাশে মুখ গুঁজে পড়ে থাকি। এ-বাড়ি থেকে সে-বাড়ি ঘুরে বেড়াই। কখনও আনন্দ নিয়ে ফিরে আসি, কখনও-বা দুঃখ।
জন্ম ও অতীত ইতিহাস :
আমার জন্ম তালপুকুরের একটি ছাতার কারখানায়। সেখান থেকে ঝকঝকে সুন্দর হয়ে এসেছিলাম দোকানে, বেশ ছিলাম। রোদ লাগে না, বৃষ্টি লাগে না, নিশ্চিন্ত হয়ে দোকানের কাচের শোকেসে সাজানো থাকতাম। মাঝেমধ্যে কেউ কেউ এসে হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে, ফের রেখে দিয়ে চলে যায়। এভাবেই দিন কাটে। তবে একদিন অপেক্ষার শেষ হল। এক ভদ্রমহিলা কিনে নিলেন আমায়। অচেনা পথে পাড়ি দিলাম আর বুঝলাম আমার কাজ শুরু হবে এবার। তিনি আমাকে বাড়ি নিয়ে এসে তার মেয়ের হাতে তুলে দিলেন। মেয়েটি বেজায় খুশি।
আমারও ছোট্ট সঙ্গিনীর আদরে-যত্নে দিব্যি দিন কাটে। কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই মেয়েটি আমায় বাসে ফেলে এল। কিছুক্ষণ নির্জনে পড়ে থাকার পর আমি গিয়ে পড়লাম একজন লোকের হাতে। লোকটি আমায় হাতে পেয়ে কৌতুকবশে একবার খোলে আর একবার বন্ধ করে। এরপর নেড়েচেড়ে দেখে সে আমার নাম রাখল 'ছত্রসুন্দরী'। এমন পছন্দসই নাম পেয়ে সেদিন আমার যে কী গর্ব হয়েছিল, সে আর কী বলব।
জীবনযাত্রা ও পরিণাম :
মাঝে বছর চারেক কেটে গেছে, ফলে আমার যে কী অবস্থা। রোদে তেতে আমার সুন্দর কালো রং ইতিমধ্যে ফ্যাকাসে হয়ে এল। দিন কাটতে লাগল অবহেলায়। তখন বারবার মনে হত মানুষেরা আমার ছত্রছায়ায় রোদ-বৃষ্টির হাত থেকে আরাম পায়, আর আমি নির্বাক হয়ে পড়ে থাকি। আমি নিরুপায়। ছাতা হয়ে কী করে মানুষের সঙ্গে বিবাদ করব বলো। এইভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিল। আমি 'ছত্রসুন্দরী' ভিজে-তেতে পড়ে থাকতাম ওই লোকটির ঘরের এক কোণে।
একদিন হঠাৎ করে বৃষ্টি এল। লোকটিকে বাইরে কাজে যেতেই হবে। সে আমায় সঙ্গে নিল। কিন্তু বৃষ্টির ঝাপটায় লড়তে না পেরে, একটু পরেই আমি উলটে গেলাম। সেদিন সে আমায় সারাতে দিল এই দোকানে, তবে আর নিতে এল না। কুড়িয়ে পাওয়া 'ছত্রসুন্দরী' বলেই হয়তো আমার এই দশা হল। সেই থেকে আমি এই মিস্ত্রিদাদার দোকানে পড়ে আছি। বদলির কাজ করি তো তাই খুব একটা যত্ন পাই না। কেন-ই বা পাব? বাইরের চাকচিক্য নেই, কাজের সেই সামর্থ্যও নেই। এই ভাবেই দিন চলছিল। তবে হঠাৎ একদিন একটা কান্ড ঘটল। মিস্ত্রিদাদা খুটখাট করে রোজকার মতো ছাতা সারাচ্ছিল।
আমি চুপচাপ চেয়ে দেখছিলাম, কীভাবে মিস্ত্রিদাদা আমায় হাতে তুলে নিয়ে যন্ত্রের মোচড়ে আমার শরীরের একমাত্র মজবুত অংশ রডটিকে টেনে বের করে নিল! এই অবস্থায় কয়েকদিন দোকানে পড়ে রইলাম। বুঝলাম আমার সময় এসেছে। মনকে তৈরি করলাম। এরপর একদিন এক কাগজ কুড়ুনির কাছে সে আমাকে পাঁচ টাকায় বেচে দিল। তারপর ওই কাগজ-কুড়ুনির কাছ থেকে হাতফেরতা হতে হতে একদিন আমার লোহাশুদ্ধ কাপড়-প্লাস্টিকগুলো সব চলে গেল বিভিন্ন কারখানায়। আমি 'ছত্রসুন্দরী' সময়ের শব্দ গায়ে মেখে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেলাম।