একটি বটগাছের আত্মকথা বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।
এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "একটি বটগাছের আত্মকথা " প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
একটি বটগাছের আত্মকথা বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Ekti Bot Gacher Atmokotha Bangla Prabandha Rachana
একটি বটগাছের আত্মকথা
ভূমিকা :
আমাকে চিনতে পারছ? প্রতিদিন রাস্তা পারাপার করার সময়, হয়তো ব্যস্ততায় বা গাড়ির দাপটে কিংবা অন্যমনস্কভাবে আমার তলায় দাঁড়িয়েছ। কিন্তু কখনও খুঁটিয়ে আমায় লক্ষ করেছ কি? আমি তো অনেক ইতিহাসের সাক্ষী। কত যুগ পরিবর্তনের নীরব দর্শক আমি! কোনো দিন জানতে চেয়েছ কি কত শত বিস্তৃত কাহিনি আমার রক্তে ধারণ করে, আমি মুখ বুজে দাঁড়িতে রয়েছি। তোমাদের জীবনের মতো সংঘাতময় উত্থান-পতন হয়তো আমার জীবনে নেই। তবে আমার সহ্যশক্তি আর অভিজ্ঞতায় আমি হয়েছি-শান্ত, স্থির ও প্রাজ্ঞ। আমি এক বটগাছ।
আজও ঝাপসা মনে পড়ে সেই কবেকার ছোটোবেলাকার কথা। মায়ের বৃন্ত থেকে বোধহয় একটি টিয়াপাখি আমাকে ফেলে দিয়েছিল রাস্তার ধারে বোসপুকুরের এই প্রান্তে। তার কয়েকদিন পরে চোখ মেলে দেখেছিলাম এই সুন্দর পৃথিবীকে। চাঁপা রঙের রোদ্দুরের বুকে আকাশের গায়ের টুকরো টুকরো মেঘ হাত নেড়ে আমায় বেড়ে উঠতে বলেছিল। মাটির কাছ থেকে সাহস পেয়ে ধীরে ধীরে বিকশিত হয়েছিলাম। তারপর আমার পল্লবিত ছোটো ছোটো শাখারা সূর্যের সামনে দৃপ্তভাবে নিজেকে মেলে ধরতে শিখল। ক্রমে আমি বড়ো হলাম।
আমার ছায়ায় শ্রান্ত মানুষ খুঁজে পেল আশ্রয়। কত পথিক, নাম-না-জানা বুড়ো-বুড়ি আমার কাছে এসে বিশ্রাম নেয়। বেশ ভালো লাগে। ডালপালা বাড়িয়ে রোদ কিংবা বৃষ্টির হাত থেকে ওদের প্রাণপণে বাঁচাতে চেষ্টা করি। জানো তো আমাদের এক জ্ঞাতিকে নিয়ে তোমাদের রবি ঠাকুর লিখেছিলেন-'নিশিদিশি দাঁড়িয়ে আছ মাথায় লয়ে জট/ছোটো ছেলেকে মনে কি পড়ে, ওগো প্রাচীন বট।'
প্রতিদিনের জীবনযাত্রা :
আমার বিশাল ছাতার মতো নিরাপদ আশ্রয়ে কাকের দল বাসা বানিয়েছে। কাঠবেড়ালি দুবেলা ছুটোছুটি করে আমার ডালে খুঁজে বের করেছে স্বাচ্ছন্দ্যের কোটর। দূর আকাশ থেকে প্রচণ্ড গরমে পরিশ্রান্ত চিল নেমে এসে আমার ডালে বসে। মাঝেমধ্যেই কোকিল এসে গান শুনিয়ে যায়, আর দেখি কাকের বাসা খুঁজতে গিয়ে আমার পাতার মাঝে নিজেকে কেমন লুকিয়ে রাখে। এ ছাড়া যাওয়া-আসার পথে কত পাখি যে আমার গায়ে বসে একটু জিরিয়ে নেয় তার ইয়ত্তা নেই।
যেই বর্ষা নামে, আমি পাতাগুলো মেলে ধরে শ্রাবণ অরণ্যের ঘ্রাণ পেতে চেষ্টা করি। যদিও আমার ফল মানুষ খায় না, কিন্তু পূজাপার্বণে আমার পাতা সংগ্রহ করতে আসে। প্রথম প্রথম পাতা ছিঁড়লে ব্যথা লাগত, রাগও হত খুবই কিন্তু এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি, মনে ভাবি মানুষের কাজে তো লাগি। এখন গ্রামের পঞ্চায়েত থেকে আমার চারপাশে একটা বেদি করে দিয়েছে। সেখানে বর্ষায় মানুষ এসে বসে, গরমে গোল হয়ে বসে আড্ডা দেয়, বেশ লাগে। কত গোরু, ছাগল, মোষ এসে আমার ছায়ার ঘেরাটোপে বসে ঝিমোয়।
তবে সবচেয়ে আনন্দ হয় আমার ঝুরিগুলি যখন ছোট্ট কচিকাঁচাদের খেলার দোলনা হয়। ওদের প্রাণের আনন্দে যেন আমি মেতে উঠি। সকাল থেকে বিকেল এভাবেই মানুষের আনাগোনায় আমার দিন কাটে। কখনও মানুষ বা পশুপাখিদের ভিড়ে আমি পূর্ণ, আবার কখনও শূন্য নির্জনতায় একলা চেয়ে দেখি। বিশেষত যখন মন্থর পায়ে সন্ধ্যা নেমে আসে, চিলের ডানা থেকে মুছে যায় রোদ্দুরের গন্ধ, সেই অন্ধকার ফাঁকা রাস্তার ধারে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকি। তখন মিটিমিটি নক্ষত্রের নীল ছায়াপথের আলো আমাকে রূপকথার গল্প শুনিয়ে যায়।
উপসংহার :
আজ আমি বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত। কালবৈশাখী ঝড় দেখলে মনে কেমন আশঙ্কা জাগে। বাজের শব্দে চমকে উঠি। ভয় হয় রাস্তা তৈরির প্রয়োজনে মানুষেরা আমায় কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলবে না তো। হয়তো এরকম কোনো কারণেই আর কয়েক বছরের মধ্যেই আমায় চলে যেতে হবে। তবু যে কটা দিন আছি, আলো-অন্ধকার ও আনন্দ-বেদনার দোলনায় দোলানো এ ধরিত্রীকে বড়ো সুন্দর বলে মনে হয়েছে। সহস্র মানুষ-পশু-পাখিকে হাওয়ায়, ছায়ায় আগলে ও পৃথিবীকে প্রাণের মায়ায় আঁকড়ে, সার্থক আমার এ জীবন।
আরও পড়ুন- একটি নদীর আত্মকথা বাংলা প্রবন্ধ রচনা