Ads Area


একটি নদীর আত্মকথা বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Ekti Nodir Atmokotha Bangla Prabandha Rachana

একটি নদীর আত্মকথা বাংলা প্রবন্ধ রচনা

পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।

এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "একটি নদীর আত্মকথা " প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

একটি নদীর আত্মকথা বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Ekti Nodir Atmokotha Bangla Prabandha Rachana


একটি নদীর আত্মকথা বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Ekti Nodir Atmokotha Bangla Prabandha Rachana

একটি নদীর আত্মকথা


আমি কোন নদী :

আমিই সেই নদী, যাকে ভারতবাসী 'দেবী' বলে শ্রদ্ধা করে। আমার প্রবাহিত জলধারা সকলের কাছে পবিত্র। আমার জল অপবিত্রকে পবিত্র করে, পতিতকে উদ্ধার করে। এমনকি আমার জলে স্নান করাটাকে লোকে পরমপুণ্য বলে বিবেচনা করে। যুগ যুগ ধরে বহু মনীষী, বহু কবি আমাকে বন্দনা করে কবিতা এবং স্তোত্র রচনা করেছেন। আমি হলাম 'গঙ্গা'। তবে দেবলোকে এই আমিই হলাম 'অলকানন্দা' ও 'মন্দাকিনী' এবং পাতালে 'ভোগবতী'। হিমালয়ের গঙ্গোত্রী 'হিমবাহ' থেকে আমার জন্ম এবং সেখান থেকেই আমার যাত্রা শুরু।

আমার গতিপথ :

উত্তর ভারত এবং আর্যাবর্তকে অতিক্রম করে দু'হাজার পাঁচশো কিলোমিটার পথ পেরিয়ে গৌড়বঙ্গে প্রবেশ করে দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে আমি সাগরে এসে মিশেছি। উত্তর ও মধ্য ভারতে আমিই প্রধান নদী। দক্ষিণ ভারতে গোদাবরী, নর্মদা, কৃষ্ণা ও কাবেরী রয়েছে এবং ওড়িশায় রয়েছে মহানদী। কিন্তু আমার মতো এতখানি দীর্ঘপথ অতিক্রম তারা করেনি। এই নদীগুলিও পবিত্রসলিলা এবং প্রাচীন। তবে আমাকে নিয়ে জনসাধারণের ভেতর যে উচ্ছ্বাস দেখা যায়, তা তাদের নেই।

আমার পৌরাণিক পরিচয় :

আমি বহু প্রাচীনকাল থেকে আর্যভূমিতে প্রবাহিত হচ্ছি। তাই বহু প্রাচীন ও পৌরাণিক কাহিনি গড়ে উঠেছে আমাকে নিয়ে। স্বর্গ থেকে আমার অবতরণ নিয়ে রয়েছে অনেক আখ্যান। তার ভেতর রয়েছেন স্বয়ং মহাদেব, রয়েছে তাঁর জটা-জাল। রয়েছে ঐরাবতের গল্প। রয়েছে রাজা শান্তনু এবং 'অষ্টবসু'র কাহিনি। মহাভারতের ভীষ্ম আমার সন্তান বলে বিখ্যাত ও প্রচারিত। আমার গতিপথে ছিল 'জহ্নুমুনি'র আশ্রম। এই আশ্রমটি আমার উদ্দাম জলপ্রবাহে ভেসে যায়। সেই রাগে জহ্নুমনি আমাকে পান করে ফেলেন। তা শেষপর্যন্ত জানু চিরে তিনি আমাকে আবার বের করে দেন। তখন থেকে আমার নাম হয় 'জাহ্নবী'।

তীরে তীরে নগর, ঘাট, নদীবন্দনা, যমুনার সঙ্গে সংগম :

সারা ভারত জুড়ে আমার তীরে তীরে গড়ে উঠেছে অনেক স্নানের ঘাট। তীরে তীরে দেখা যায় অনেক গাছপালা, অরণ্য, তীর্থস্থান। ওই সব তীর্থস্থানগুলির ভেতর বিশেষ উল্লেখ্য হল হৃষীকেশ, হরিদ্বার, বারাণসী, প্রয়াগ। হরিদ্বারের 'হর-কা-পৌরি' খুবই বিখাত। প্রতিদিন সন্ধ্যায় এখানে দীপালোকে এবং গানে আমার আরতি হয়। বারাণসীর তীরে অজস্র ঘাট। সেখানে 'দশাশ্বমেধ ঘাটে'র চত্বরে প্রতি সন্ধ্যায় আমার আরতি হয়। 'প্রয়াগ' তীর্থেও আমার প্রশস্তি পাঠ হয়, এখানে 'যমুনা'র সঙ্গে আমার মিলন হয়েছে। আমাদের 'মিলন সংগমে' পুণ্যার্থীরা স্নান করে। ত্রিবেণী হল বড়ো তীর্থস্থান।

নদীতীরে শ্মশান :

আমার গতিপথের তীরে তীরে রয়েছে অনেক শ্মশান। ওইসব শ্মশানে মানুষের মৃতদেহ দাহ করা হয়। গঙ্গার তীরে মৃতদেহ দাহ করলে তার আত্মার সদ্গতি হয়। কাশীধামের মণি-কর্ণিকার শ্মশানে স্বয়ং মহাদেব মৃতের কানে কানে মন্ত্র পাঠ করে দেন, এই রকমই প্রবাদ।

তীরে চাষবাস, জলযান ইত্যাদি :

আমার তীরে তীরে যেসব জমি রয়েছে, তা খুবই উর্বর। এইসব জমিতে প্রচুর ফসল ফলে। প্রচুর ধান, গম এবং আখ হয়। আমার যে প্রবহমান জলরাশি, তার ওপর দিয়ে যাতায়াতের জন্য নৌকা এবং বজরা ব্যবহার করে মানব সমাজ। যখন এদেশে রেল আসেনি তখন সকলে নৌকো-বজরাতেই যাতায়াত করত এবং এখনও তা করে। তবে এখনকার মোটরচালিত লঞ্চগুলি অনেক দ্রুতগামী।

সামরিক দুর্গ :

আমার তীরে তীরে বহু সমৃদ্ধ নগরী গড়ে উঠেছে। হরিদ্বার, বারাণসী, এলাহাবাদ, পাটনা, কলকাতা হল এই ধরনের সমৃদ্ধ নগর। ওইসব নগরীর সঙ্গে গড়ে উঠেছে অনেক সামরিক দুর্গও। এলাহাবাদ, পাটনা ও কলকাতায় 'ফোর্ট উইলিয়াম' হল এই ধরনের দুর্গ।

গঙ্গা দূষণ :

 আমার দীর্ঘ যাত্রাপথে অনেক ছোটো ছোটো নদী এসে মিশেছে আমার সঙ্গে। তবে আমার দুঃখ কিছু রয়েছে। ইদানীংকালে আধুনিক কলকারখানার নোংরা জল এবং নগর-নগরীর নর্দমার মলিন জল এসে মিশেছে আমার প্রবাহে। তাতে দূষিত হচ্ছে আমার জল। এটি একটি বিরাট সমস্যা। এই সমস্যা দূর করার জন্য তৈরি হয়েছে 'গঙ্গা দূষণ' পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনাকে স্বাগত জানাই। আমি পতিতকে উদ্ধার করি তাই আমার নাম পতিতপাবনী। আমাকে অপবিত্র করা কি ঠিক? ভারতবাসী এসব জানে এটাই ভরসা।

আরও পড়ুন- একটি বটগাছের আত্মকথা বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area