একটি শহরের আত্মকথা বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।
এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "একটি শহরের আত্মকথা" প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
একটি শহরের আত্মকথা বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Ekti Sohorer Attokotha Bangla Prabandha Rachana
একটি শহরের আত্মকথা
"শহর আমি, বলছি শোনো, আমার মনের কথা,
আমার বুকে জমে আছে, অনেক দিনের ব্যথা।"
ভূমিকা ও অতীত কথা :
পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত আমি। আমি একটি শহর। আমার নাম, আসানসোল। আমার এই নামটি কে রেখেছে, তা আমি জানি না। আমার নামের অর্থ যে কী, তাও আমার জানা নেই। এটি একটি অনার্য নাম। শুকনো কাঁকুড়ে মাটি, বিস্তর ঝোপজঙ্গল আর উঁচু-নীচু অসমতল ভূমি দিয়ে আমার সর্বাঙ্গ তৈরি। অহল্যা পাষাণ হয়ে বহুদিন নিঃসঙ্গ কাটিয়েছিলাম আমি। অনাদৃত হয়ে পড়েছিলাম বছরের পর বছর। যেন গভীর ঘুমে ঘুমিয়েছিলাম।
শহরের জন্ম :
ঘুম ভাঙল গাঁইতি দিয়ে খোঁড়াখুঁড়ির শব্দে এবং বাষ্পীয় রেল ইঞ্জিনের ভোঁ-শুনে। সে প্রায় দেড়শো বছর আগেকার কথা। শোনা গেল, রানিগঞ্জে পাওয়া গেছে কয়লার খনি। সে খনির বিস্তার আমার ধারে-কাছে এবং আশপাশে সর্বত্র। এই কয়লা হল আধুনিক যন্ত্রসভ্যতার প্রাণভোমরা। দূরদূরান্ত থেকে এসে গেল লোভী বণিকের দল। কয়লা নামক কালো হিরে সংগ্রহের জন্য তখন সকলে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ওই কয়লা জ্বালানো হবে নতুন নতুন শিল্পকে গড়ে তুলতে। রাজধানী কলকাতা থেকে পাতা হয়ে গেল রেললাইন। আমার বুকে একটি রেলওয়ে ডিভিশন। রেলকর্মীদের জন্য তৈরি হল কয়েক হাজার কোয়ার্টার, অফিস, সেই সঙ্গে এক বিরাট জনবসতিও গড়ে উঠল।
শহর হিসেবে বৃদ্ধি :
ওই রেলের ভোঁ শুনেই আমার শহর জীবনের জন্ম। ভোঁ নয়, ওটি হল আমার জন্ম মুহূর্তের শঙ্খধ্বনি। ভারতের ইতিহাসে আমার আসানসোল নামটি চিরকালের মতো নথিভুক্ত হয়ে গেল। এরপর থেকে আর আমাকে কখনও পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। কেবল রেলযোগে নয়, আমার বুক চিরে একটি নদীর মতো চলে গেছে শেরশাহের সেই ইতিহাস-বিশ্রুত গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড, এটি এখন অন্যতম প্রধান জাতীয় সড়ক।
শিল্পনগরী :
সুকুমার রায়ের 'হযবরল'-এর সেই বিখ্যাত বাক্যটি এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে যায়। ছিলাম বুমাল, হয়ে গেলাম বেড়াল। ছিলাম কাঠ-ফাটা রোদে পোড়া রুক্ষ পতিত জমি, হয়ে গেলাম এক জনবসতি পূর্ণ কোলাহল মুখর বিরাট শহর। আবার যেমন-তেমন শহর নয়, একেবারে শিল্পনগরী।
জনবসতি ও সহাবস্থান :
শোনা যায়, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অবক্ষয় বাড়ে। আমার বেলায় কিন্তু তা বলা যায় না। আমাকে ঘিরে আজও নতুন নতুন কলকারখানার সৃষ্টি হচ্ছে, তৈরি হচ্ছে শিল্প। রানিগঞ্জ থেকে বার্নপুর, কুলটি সবই আমাকে ঘিরে আবর্তিত। আমাকে ঘিরে শত শত কারখানা। কাগজ তৈরি, সাইকেল নির্মাণ, ওয়াগন তৈরি, গ্লাস ফ্যাক্টরি, ইস্পাত তৈরি এবং এই সঙ্গে খনি থেকে কয়লা উত্তোলন, ওষুধ তৈরি ইত্যাদি অজস্র কাজে লক্ষ লক্ষ লোক এখানে এসে জীবিকানির্বাহ করছে। এখানে সর্বধর্ম, ভাষা, প্রদেশ মিশে একাকার হয়ে গেছে। বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষের সহাবস্থানে এখানে এক মিশ্র সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। মন্দির, মসজিদ সঙ্গে রয়েছে গির্জাও।
শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসার :
আমার বুকে গড়ে উঠেছে বিস্তর স্কুল। ইংরেজি-বাংলা-হিন্দি-উর্দু ইত্যাদি ভাষা-শিক্ষার ব্যবস্থাও এখানে রয়েছে। রয়েছে একটি মহিলা কলেজসহ আরও দুটি ডিগ্রি কলেজ। কেবল লেখাপড়া নয়, স্বাস্থ্য-পরিসেবাও আমার এখানে সহজলভ্য। বড়ো বড়ো হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে এই শিল্পনগরী ঠাসা। সব শ্রেণির মানুষের চিকিৎসার সুব্যবস্থা আছে।
উপসংহার :
শহর কলকাতা থেকে দূরে পড়ে আছি বলে, আমাকে কখনও যেন অনুন্নত এবং উপেক্ষিত ভাবা না হয়। আমি আসানসোল, পশ্চিমবঙ্গে প্রথম শিল্পনগরী রূপে আমাকে সবাই ভালোবাসে।