সামাজিক জীবনে মেলার প্রয়োজনীয়তা বাংলা রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।
এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "সামাজিক জীবনে মেলার প্রয়োজনীয়তা" প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সামাজিক জীবনে মেলার প্রয়োজনীয়তা বাংলা রচনা ||Samajika Jibone Melar Prayojaniyata
সামাজিক জীবনে মেলার প্রয়োজনীয়তা
ভূমিকা :
'মেলা' কথাটির অর্থ মিলন। বিশেষ উপলক্ষে যেখানে অনেক মানুষের সমাগম ঘটে, নানা জিনিসপত্রের প্রদর্শনী হয়, তাকে মেলা বলা হয়। মেলার পিছনে কোনো না কোনো সামাজিক উৎসব, পূজা, সাংস্কৃতিক বা ধর্মীয় প্রথা বা বিশ্বাস থাকে।
মেলার উপলক্ষ্য :
নানা উৎসব উপলক্ষ্যে মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হল দুর্গোৎসব। দুর্গাপুজো শুধুমাত্র পুজো নয়, এটি এখন একটি জাঁকজমকপূর্ণ জাতীয় সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে।
দুর্গোৎসব ছাড়া রথযাত্রা, লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো, সরস্বতী পুজো প্রভৃতি উৎসবগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এইসব পুজোকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অঞ্চলে মেলা, প্রদর্শনী প্রভৃতিরও আয়োজন হয়। মুসলমানদের উৎসবগুলির মধ্যে মহরম, ইদ, বকরি ইদ, সবেবরাত, সবেমেরাজ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। খ্রিস্টানদের সবথেকে বড়ো উৎসব হল বড়োদিন। এ ছাড়া বৌদ্ধগণ বুদ্ধপূর্ণিমা, জৈনগণ পরেশনাথের জন্মদিন এবং বৈয়বগণ চৈতন্যদেবের আবির্ভাব তিথি সাড়ম্বরে পালন করেন। ধর্মোৎসবগুলির মধ্যে সামাজিকতার থেকে বড়ো হয়ে দেখা দেয় ধর্মীয় অনুরাগ।
সামাজিক ও পারিবারিক উৎসব :
সামাজিক ও পারিবারিক উৎসবগুলির মধ্যে জন্মদিন পালন, বিবাহ, নববর্ষ, উপনয়ন, অন্নপ্রাশন, ভ্রাতৃদ্বিতীয়া, জামাইষষ্ঠী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এই উৎসবগুলি মূলত পারিবারিক, কিন্তু বহু মানুষের উপস্থিতির ফলে ওইগুলি মিলনোৎসবে পরিণত হয়। এ ছাড়া 'অম্বুবাচি', 'নবান্ন', 'পৌষসংক্রান্তি' প্রভৃতি উৎসবগুলি মূলত কৃষিভিত্তিক। নববর্ষ, বৃক্ষরোপণ, বর্ষামঙ্গল, হলকর্ষণ, শারদোৎসব, বসন্তোৎসব প্রভৃতি ঋতু উৎসবেও মেলা বসে।
লৌকিক উৎসব :
বাংলার উৎসবানুষ্ঠানে বৈচিত্র্য ও বৈশিষ্ট্য দুই-ই বিদ্যমান। নিতান্ত স্থানীয় পরিবেশ, লৌকিক প্রয়োজনে বা সমসাময়িক প্রভাবে বাংলার নিজস্ব উৎসবগুলির সৃষ্টি। চড়ক পূজা, গাজন উৎসব। শীতলা, সত্যনারায়ণ প্রভৃতি পুজো উপলক্ষ্যও মেলা বসে। এগুলি একান্তভাবে গ্রামীণ মেলা।
উৎসবের আনন্দ :
"আমার আনন্দে সকলের আনন্দ হোক, আমার শুভে শুভ হোক, আমি যাহা পাই তাহা পাঁচজনের সহিত মিলিত হইয়া উপভোগ করি-এই কল্যাণী ইচ্ছাই উৎসবের প্রাণ।" তাই উৎসবের দিনটি ধনী-নির্ধন, জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকলের মিলনের, প্রীতি বিনিময়ের এবং ভাবের আদান-প্রদানের পবিত্র মুহূর্ত। মেলায় মিলনটাই বড়ো কথা। দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমি কাটাবার জন্য মেলার প্রয়োজন অনেকখানি। মেলার অর্থনৈতিক গুরুত্ব কম নয়। মেলায় ধর্ম, বর্ণ, ভাষার ভেদরেখা মুছে গিয়ে সবাই আনন্দে মেতে ওঠে।
উপসংহার :
মেলা মানবজীবনে আরও বেশি মাত্রায় প্রকাশ পেলে মানুষের মনের প্রসার বাড়বে। যেসব উৎসব উপলক্ষে মেলা বসে সেইসব উৎসবের সঙ্গে যে মেলা অনুষ্ঠিত হয় তা আরও সমৃদ্ধ করার দিকে মনোনিবেশ করা দরকার। লোকসংস্কৃতির ধারক এই মেলা মানবজীবনকে আরও সমুন্নত ও সমৃদ্ধ করুক-এই কামনা আমাদের সকলের।