Ads Area


অসহযোগ আন্দোলনের পটভূমি ও পরিণতি আলোচনা করো

অসহযোগ আন্দোলনের পটভূমি ও পরিণতি আলোচনা করো

সুপ্রিয় পাঠকগন আমাদের এই নতুন পোষ্টে স্বাগতম, এই পর্বটিতে অসহযোগ আন্দোলনের পটভূমি ও পরিণতি সম্পর্কে নিঁখুত ভাবে আলোচনা করেছি, যা আপনাদের জন‍্য খুবই হেল্পফুল হবে।

অসহযোগ আন্দোলনের পটভূমি ও পরিণতি আলোচনা করো

অসহযোগ আন্দোলনের পটভূমি ও পরিণতি সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ লিখ। (Write an essay on the background and development of the Non- co-operation movement)

উত্তর-

 প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানে ভারতের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে। স্বায়ত্তশাসনের প্রতি ব্রিটিশ সরকারের অনীহা ভারতবাসীর নিকট অসহ্য মনে হয়। চিন, রাশিয়া, মিশর, আয়ারল্যান্ড প্রভৃতি দেশের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের নতুন প্রেরণা দান করে। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার সমগ্র পরিস্থিতিকে দমনমূলক মানসিকতা দ্বারা বিচার করতে থাকে। সরকার রাওলাট 'আইন' নামক দমনমূলক আইন জারি করে ভারতবাসীর কণ্ঠরোধ করতে উদ্যত হয়।

এই আইন দ্বারা ভারতবাসীর ন্যায়বিচার লাভের অধিকার এবং ব্যক্তিস্বাধীনতাও কেড়ে নেওয়া হয়। এই আইনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন ভারতের জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ।

জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড:


এইরূপ জাতীয় পরিস্থিতিতে ভারতীয় রাজনীতিতে আবির্ভূত হন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী (১৮৬৮-১৯৪৮ খ্রিঃ)। ভারতবাসীর ক্ষোভকে গণ-আন্দোলনে পরিণত করার প্রধান কৃতিত্ব তাঁরই। ন্যায্য অধিকার লাভ করার অস্ত্র হিসেবে তিনি শান্তিপূর্ণ নৈতিক প্রতিরোধ বা সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রতি ভারতবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। রাওলাট আইন' প্রত্যাহার করার জন্য তিনি সরকারকে আবেদন জানান। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার আইন প্রত্যাহারের পরিবর্তে শুরু করে নিপীড়ন।

অমৃতসরের 'জালিয়ানওয়ালাবাগ' নামক স্থানে কয়েক হাজার নিরস্ত্র মানুষ রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে এক শান্তিপূর্ণ সমাবেশে উপস্থিত হলে কুখ্যাত ইংরেজ জেনারেল ও’ডায়ার আকস্মিক গুলিবর্ষণ করে হত্যা করেন শিশু, বৃদ্ধ, নারীসহ কয়েক হাজার মানুষকে। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ধিক্কার ওঠে দেশে-বিদেশে সর্বত্র। সারাদেশে নেমে আসে গভীর শোকের ছায়া। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঘৃণায় প্রত্যাখ্যান করেন 'স্যার' উপাধি। সমস্ত ঘটনা ভারতবাসীকে ক্রমশ আন্দোলনের দিকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে।

খিলাফৎ আন্দোলন:


ইতিমধ্যে তুরস্কের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতবর্ষের মুসলমানদের মধ্যে দারুণ উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বিশ্বযুদ্ধে জয়লাভ করার পরে ইংল্যান্ডসহ মিত্রপক্ষীয় দেশগুলির নির্দেশে তুরস্কের সুলতান সিংহাসনচ্যুত ও ক্ষমতাচ্যুত হলে বিশ্বের মুসলমান সমাজ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। কারণ তুর্কি-সুলতানই 'খলিফা' হিসেবে ছিলেন সমগ্র মুসলিম সমাজের প্রধান ধর্মীয় নেতা। খলিফাকে স্বমর্যাদায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে এবং তুরস্কের প্রতি ব্রিটিশ সরকারের নীতি পরিবর্তনের দাবিতে যে ব্যাপক বিক্ষোভ-আন্দোলন শুরু হয়, তা 'খিলাফৎ আন্দোলন' নামে পরিচিত। ভারতবর্ষেও মহম্মদ আলি ও সৌকত আলির নেতৃত্বে খিলাফৎ আন্দোলন' ব্যাপক আকার লাভ করেছিল।

আন্দোলনের সূচনা:


গান্ধীজি খিলাফৎ আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। কলকাতায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের অধিবেশনে কংগ্রেস খিলাফৎ আন্দোলনকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেয়। গান্ধীজি কংগ্রেসের অসহযোগ আন্দোলনের সাথে খিলাফৎ আন্দোলনকে সংযুক্ত করে এক বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে গান্ধীজি ঐক্যবদ্ধ গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য অহিংস অসহযোগ (Non-violent Non-co-operation) নীতি ঘোষণা করেন। নাগপুরে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের বাৎসরিক অধিবেশনে বিপুল উৎসাহের সঙ্গে এবং সর্বসম্মতিক্রমে অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি রূপায়ণের প্রস্তাব গৃহীত হয়।

অসহযোগ আন্দোলনের লক্ষ্য ও কর্মসূচি : অসহযোগ আন্দোলনের লক্ষ্য বর্ণনা করতে গিয়ে গান্ধীজি বলেন যে, পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তিবিধান এবং খিলাফৎ প্রশ্নের সম্মানজনক সমাধান ছাড়াও এই আন্দোলনের অন্যতম লক্ষ্য হল ভারতবাসীর স্বায়ত্তশাসন অধিকার আদায় করা। তিনি দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেন, “ভারতবাসীর সম্মান ও ন্যায্য দাবির প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন হৃদয়হীন বিদেশি সরকারের সঙ্গে কোনোরকম সহযোগিতা করা পাপ" ("Co-operation in any shape or form with this Satanic Government is sinful. ")।

অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচির মধ্যে ছিল সরকারি খেতাব প্রত্যাখ্যান, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন সংস্থাগুলি। থেকে সরকার মনোনীত সদস্যদের পদত্যাগ, সর্বপ্রকার সরকারি অনুষ্ঠান বর্জন, সরকার পরিচালিত স্কুল-কলেজ বয়কট, ব্যবহারজীবী (উকিল, মোক্তার ইত্যাদি) ও বিচারপ্রার্থীদের ব্রিটিশ আদালত বর্জন, আইনসভার নির্বাচন বর্জন, মেসোপটেমিয়ায় ব্রিটিশ সামরিক চাকুরি প্রত্যাখ্যান, স্বদেশি দ্রব্য উৎপাদন ও ক্রয়, অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ ইত্যাদি।

শ্রমিক ও কৃষক আন্দোলন:


প্রবল জলোচ্ছ্বাসের মতো অসহযোগ আন্দোলন সমগ্র ভারতবর্ষে ব্যাপ্ত হয়ে পড়ে। ছাত্র-যুবা, হিন্দু-মুসলমান, স্ত্রী-পুরুষনির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাস নাগাদ। অসহযোগ আন্দোলন জনমানসে এক অভূতপূর্ব আলোড়ন সৃষ্টি করে। শুধুমাত্র ছাত্র- যুবা বা সাধারণ বৃত্তিজীবী মানুষ নয়, শ্রমিক ও কৃষক শ্রেণিও এই আন্দোলনে ব্যাপক হারে অংশগ্রহণ করে। মাদ্রাজের কৃষক সম্প্রদায় ও অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুর জেলার ভূমিহীন কৃষকশ্রেণি অসহযোগ আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১৯২১ খ্রিস্টাব্দে প্রায় ৪০টি শিল্প শ্রমিক ধর্মঘট অনুষ্ঠিত হয়। এই সময়ের দুটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল 'অসম-বেঙ্গল রেলপথে ধর্মঘট এবং মেদিনীপুরে 'খাজনা-বন্ধ' আন্দোলন। আসামের চা-বাগানের শ্রমিকদের ওপর ইংরেজ প্রভুদের অকথ্য শোষণ ও অত্যাচারের প্রতিবাদে ‘রেল ধর্মঘট' পালিত হত। অন্যদিকে বীরেন্দ্রনাথ শাসমলের নেতৃত্বে মেদিনীপুরের গ্রামাঞ্চলের জনগণ ইউনিয়ন বোর্ডের ধার্য কর দিতে অস্বীকার করে।

সরকারি দমনপীড়ন:


অসহযোগ আন্দোলনের ব্যাপ্তি দেখে সরকারও বিচলিত হয়ে পড়ে এবং ক্রমশ দমনপীড়নের মাত্রা বৃদ্ধি করতে শুরু করে। কংগ্রেস সেবাদল সংগঠন ও খিলাফৎ কমিটি বেআইনি ঘোষিত হয়। অধিকাংশ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। চিত্তরঞ্জন দাশ ক্ষোভের সঙ্গে মন্তব্য করেছিলেন, “সমস্ত ভারতবর্ষই পরিণত হয়েছে কারাগারে। সুতরাং কী এসে যায় যদি আজকে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয় অথবা বাড়িতে থাকি।"

চৌরিচৌরা ঘটনা:


১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে আহমেদাবাদ অধিবেশনে কংগ্রেস ব্যক্তিগত ও গণ-আইন অমান্য আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করে। আন্দোলনের সর্বাধিনায়ক গান্ধীজি গুজরাটের বরদলৈ জেলাকে গণ আইন অমান্যের কেন্দ্র হিসেবে বেছে নেন। গান্ধীজির সিদ্ধান্ত সারাদেশে বিপুল উৎসাহ ও উত্তেজনা সৃষ্টি করে। কিন্তু এই আন্দোলন শুরু করার মুহূর্তে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলার অন্তর্গত চৌরিচৌরা গ্রামের এক কৃষক সমাবেশের ওপর পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে উত্তেজিত জনতা থানা আক্রমণ করে এবং অগ্নিসংযোগ করে। এই ঘটনায় ২২ জন পুলিশকর্মীর মৃত্যু ঘটে। এই ঘটনায় গান্ধীজি প্রচণ্ড মর্মাহত হন এবং তাঁর পরামর্শক্রমে কংগ্রেস অসহযোগ ও আইন অমান্য আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।

আন্দোলনের সমাপ্তি:


এত বড়ো আন্দোলনের আকস্মিক স্থগিতের সিদ্ধান্ত সারাদেশে সৃষ্টি করে ভীর হতাশার। সুভাষচন্দ্র এই সিদ্ধান্তকে 'nothing short of national calamity বলে বর্ণনা করেন। নেহরু বলেন, “কন্যাকুমারীর একটা অঞ্চলের ভুলের জন্য হিমালয়ের পাদদেশে আন্দোলন বন্ধ করা হবে কেন?" লালা লাজপত রায়, মতিলাল নেহরু প্রমুখও গান্ধীজিকে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য পত্র লেখেন। কিন্তু গান্ধীজি এই ঘটনাকে 'bitterest humiliation' বলে নিন্দা করেন এবং নিজ সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। এইভাবে ভারতবাসীর একটি সুগঠিত গণ-আন্দোলনের করুণ পরিসমাপ্তি ঘটে।

ব্যর্থতার কারণ:


আপাতবিচারে অসহযোগ আন্দোলন লক্ষ্যপূরণে সমর্থ হয়নি। খিলাফৎ সমস্যা বা পাঞ্জাব অত্যাচারের সমাধান হয়নি কিংবা ভারতবাসী স্বরাজন অর্জন করেনি। এত ব্যাপক একটা আন্দোলনের ব্যর্থতার জন্য ইতিহাসবিদগণ অনেকগুলি কারণের উল্লেখ করেছেন। প্রথমত, অসহযোগ আন্দোলন এককভাবে গান্ধীজির নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্ব দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল।

ব্যক্তিকেন্দ্রিক যে-কোনো আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। গান্ধীজির গ্রেপ্তারের সঙ্গে সঙ্গে তাই এই আন্দোলন স্তব্ধ হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, ডি. রদারমন্ড-এর মতে, খিলাফৎ আন্দোলনের সাথে অসহযোগ আন্দোলনকে যুক্ত করে কোনো লাভই হয়নি, পরন্তু এর ফলে আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তুরস্কের জনগণ ইসলামিক রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি আস্থাশীল ছিল না। তাই তারা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র- ব্যবস্থার প্রবর্তন করে খিলাফৎ আন্দোলনের ভিত্তিভূমিকে নড়িয়ে দিতে দ্বিধা করেনি।

সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় মুসলমানদের অনেকেই জাতীয় সংহতির পরিবর্তে সাম্প্রদায়িক স্বার্থপূরণের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। তৃতীয়ত, জুডিথ ব্রাউন-এর মনে অসহযোগ আন্দোলন কংগ্রেস রাজনীতির কোনো মৌলিক পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি। অবশ্য এ বক্তব্য অনেকে মানেন না। কারণ এই আন্দোলন দ্বারা কংগ্রেস একটি গণ-সাংগঠনিক চরিত্র অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল।

মূল্যায়ন:

প্রত্যক্ষ ফললাভে ব্যর্থ হলেও অসহযোগ আন্দোলন পরোক্ষ ফলে সমৃদ্ধ ছিল। ঐতিহাসিক তারাচাঁদ অসহযোগ আন্দোলনকে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম 'নিরস্ত্র বিদ্রোহ' বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর মতে, এই আন্দোলনের অন্যতম সুফল হল ভারতবাসীর নৈতিক জয়। বিফল হলেও এই আন্দোলন সুদূর গ্রামাঞ্চলে গণ- চেতনার সৃষ্টি করেছিল। স্বরাজ অর্জনের জন্য যে ত্যাগ ও তিতিক্ষার প্রয়োজন, তা পাওয়া গিয়েছিল এই আন্দোলন থেকে। অসহযোগ আন্দোলন ভারতবাসীর ভয় ও হতাশা দূর করতে সাহায্য করেছিল। ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার মনে করেন, এই আন্দোলনে ভারতবাসী এক অগ্নিপরীক্ষা দ্বারা নতুন মন্ত্রে দীক্ষা নিয়েছিল এবং আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়েছিল।

তিনি লিখেছেন : "The movement served as a baptism of fire which initiated the people to a new faith and new hope and inspired them with a new confidence in their power to fight freedom, " দ্বিতীয়ত, এই আন্দোলনের মাধ্যমে কংগ্রেসের মর্যাদা ও প্রতিপত্তি যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছিল। শুধু শিক্ষিত ও শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণি মুখপাত্র রূপে নয়, গ্রামীণ সাধারণ মানুষে বিশ্বস্ত গণ-প্রতিষ্ঠান রূপেও কংগ্রেস প্রতিভাত হয়েছিল। তৃতীয়ত, অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতবাসীর জাতীয়তাবাদী আন্দোলন প্রথম গণমুখী চরিত্র অর্জন করে। শহরের ক্ষুদ্র গণ্ডি থেকে আন্দোলনের তাপ ছড়িয়ে পড়ে সুদূর গ্রামে-গঞ্জে। আর কুপল্যান্ড-এর ভাষায় : তিলক যা করতে পারেননি, গান্ধীজি তা করেছেন।

তিনি জাতীয় সংগ্রামকে বিপ্লবমুখী করে তুলতে পেরেছেন।” চতুর্থত, এই আন্দোলন ইংরেজ শাসকদেরও বিচলিত করে তুলেছিল। মাদ্রাজের গভর্নর ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিবকে এক পত্রে লিখেছিলেন, “এই আন্দোলন সাধারণ জনগণের মনে রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি করেছে এবং আমাদের শান্তি বিঘ্নিত হয়েছে।” বড়োলাটও লন্ডনে প্রেরিত তারবার্তায় একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। পঞ্চমত, দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিকাশের বিশেষ সহায়ক হয়েছিল অসহযোগ আন্দোলন। দেশীয় শিল্পের বিকাশ ও অস্পৃশ্যতা বর্জন প্রভৃতি অর্থনীতি ও সমাজকে পুষ্ট করেছিল। অবশ্য আন্দোলনের কয়েকটি সীমাবদ্ধতার দিকেও আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়।

যেমন অসহযোগ আন্দোলনের মুহূর্তে দেশের বিভিন্ন অংশে কৃষকসমাজ আন্দোলনে লিপ্ত হলেও, জাতীয় কংগ্রেস সেই আন্দোলনকে যথার্থভাবে সাহায্য করেনি। কারণ কংগ্রেস মনে করত যে, কৃষক আন্দোলনকে মদত দিলে কংগ্রেসের শুভানুধ্যায়ী জমিদারশ্রেণি কষ্ট পাবে। তা ছাড়া কংগ্রেসের বহু সদস্য ছিলেন জোতদার। তাঁরাও কৃষকদের অর্থনৈতিক শোষণমুক্তির আন্দোলনের বিরোধী ছিলেন। এই আন্দোলনের সামগ্রস্য ও ব্যর্থতাকে সমন্বিত করে ড. মজুমদার যথার্থই বলেছেন, “Perhaps the correct view would be that it was neither a complete success nor a complete failure, a d'nt the truth. as often happens, lies between the two.


আরও পড়ুন-
Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area