ভারততীর্থ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী,
আজ আমরা তোমাদের সপ্তম শ্রেণীর বাংলা বই থেকে ভারততীর্থ কবিতাটি নিয়েছি,তাই তার সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন দেওয়া হলো আমাদের শেয়ার করা নিচে পোস্টে। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা কবিতা ভারততীর্থ এই কবিতাটি গীতাঞ্জলি কাব্যগ্র্ন্থের থেকে নেওয়া। আশা করি এই প্রশ্ন ও উত্তর তোমাদের পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সপ্তম শ্রেণীর বাংলা || ভারততীর্থ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) প্রশ্ন ও উত্তর || Bharatatirtha Questions And Answers
১) 'ভারততীর্থ' কবিতায় 'মহামানবের সাগরতীরে' বলতে কবি কাঁ বুঝিয়েছেন?
উত্তর: 'ভারততীর্থ' কবিতায় কবি 'মহামানবের সাগরতীরে' বলতে অসংখ্য মহাপুরুষের জন্মভূমি ভারতবর্ষকে বুঝিয়েছেন।
২)'ভারততীর্থ' কবিতায় ভারতভূমিকে 'পুণ্য তীর্থ' বলা হয়েছে কেন?
উত্তর: অসংখ্য মহামানবের জন্মস্থান হওয়ায় এই ভারতভূমিকে 'পুণ্য তীর্থ' বলা হয়েছে।
৩) কবি কীভাবে 'নরদেবতা'-র বন্দনা করেছেন?
উত্তর: কবি উদার ছন্দে পরমানন্দে নরদেবতার বন্দনা করেছেন।
৪) 'মহামানবের সাগরতীরে' কবি নিত্য কী দেখতে বলেছিলেন?
উত্তর: এই ভারতে 'মহামানবের সাগরতীরে' কবি নিত্য পবিত্র ধরিত্রীকে দেখতে বলেছিলেন।
৫) "..সেথা হতে সবে আনে উপহার।"-কোথা থেকে উপহার আনা হয়?
উত্তর: পাশ্চাত্য অর্থাৎ পশ্চিম দেশ থেকে উপহার আনা হয়।
৬) 'ভারততীর্থ' কবিতাটি কোন্ শ্রেণির কবিতা?
উত্তর: 'ভারততীর্থ' কবিতাটি একটি দেশাত্মবোধক কবিতা, এটিকে স্তোত্রমূলক কবিতাও বলা যায়।
৭)"ধ্যানগম্ভীর এই যে ভূধর"-এখানে কোন্ ভূধরের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: এখানে 'ভূধর' বলতে দেবতাত্মা হিমালয়ের কথা বলা হয়েছে।
৮)"হে মোর চিত্ত, পুণ্য তীর্থে জাগো রে ধীরে"-এই জাগরণের প্রয়োজন কী?
উত্তর: কবি 'মহামানবের সাগরতীর' ভারতবর্ষে মানুষের সঙ্গে মানুষের মিলনের জন্য এই জাগরণ চেয়েছেন। এখানে দাঁড়িয়ে দু-হাত বাড়িয়ে কবি নর রূপী দেবতাকে নমস্কার করতে চেয়েছেন। 'উদার ছন্দে পরমানন্দে' অর্থাৎ স্বতঃস্ফূর্ত ও আন্তরিকভাবে মানুষকে বন্দনা করতে চেয়েছেন বলেই কবি জাগরণের কথা বলেছেন।
৯) "হেথায় দাঁড়ায়ে দু বাহু বাড়ায়ে নমি নরদেবতারে।" -এ কথার মধ্য দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: ভারতবর্ষ মানবাত্মার অবাধ বিচরণভূমি। এখানে ধর্ম-বর্ণ-ভাষা নির্বিশেষে মানুষ নিজেদের জায়গা করে নেয়। মানবাত্মার সেই বিকাশ দেখেই কবি নরদেবতাকে প্রণাম করতে চেয়েছেন।
১০) "দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে, যাবে না ফিরে"- কবি এই মিলনের কী পরিচয় দিয়েছেন?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ উল্লেখ করেছেন যে, যুগে যুগে 'মহামানবের সাগরতীর' ভারতবর্ষে অজস্র মানুষের আবির্ভাব ঘটেছে। আর্য-অনার্য, দ্রাবিড়-চিন, শক-তুন, পাঠান-মোগল এই ভারতাত্মার সঙ্গে একাত্ম হয়েছে। উন্নত পশ্চিমি দুনিয়াও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে। এভাবেই পারস্পরিক ভাববিনিময়ের মাধ্যমে ভারত ও বাকি পৃথিবীর যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে।
১১) 'ভারততীর্থ' কবিতায় কবি ভারতভূমিকে 'পুণ্যতীর্থ' বলেছেন কেন? ভারতে বিদেশি শক্তিগুলির পরিণতি কী হয়েছিল?
উত্তর: প্রথম অংশের জন্য 'হাতে কলমে' অংশের ১নং প্রশ্নের উত্তর দ্যাখো।
বহু প্রাচীনকাল থেকে বহু বিদেশি শক্তি ভারতে এসেছে কিন্তু আর্য অনার্য, শক-কুন-পাঠান-মোগল সমস্ত বিদেশি শক্তিই ভারতাত্মার সঙ্গে একাত্ম হয়েছে। যুদ্ধের উন্মাদনা নিয়ে, নিজেদের জয়গান গেয়ে যারা মরুপথ কিংবা গিরিপর্বত পেরিয়ে এদেশে এসেছিল, ভারতবর্ষ তাদেরও আপন করে নিয়েছে। 'মহামানবের সাগরতীর' ভারতবর্ষের সংস্কৃতি-ইতিহাস এবং জনজীবনের সঙ্গে তারাও নিজেদের মিশিয়ে দিয়েছে।
১২) "হেথায় নিত্য হেরো পবিত্র ধরিত্রীরে।"-কোথায় এবং কেন এই 'পবিত্র ধরিত্রী'-কে দেখতে পাওয়া যায়?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'ভারততীর্থ' কবিতায় এই ভারতবর্ষেই 'পবিত্র ধরিত্রী'-কে প্রত্যক্ষ করার কথা বলেছেন।
কবির মতে ভারতবর্ষ 'পুণ্য তীর্থ'। ধ্যানগম্ভীর পর্বতমালা, জপমালার মতো প্রবাহী নদী যেন এখানে সাধনার আদর্শ রূপকল্প তৈরি করেছে। মানুষকে এখানে দেবতার মর্যাদা দেওয়া হয়। অজস্র বিদেশি শক্তি এই দেশ আক্রমণ করলে ভারতবর্ষ অপূর্ব উদারতা এবং আত্মিক শক্তিতে তাদের আপন করে নিয়েছে। যে মহা-ওৎকারধধ্বনি এই ভারতবর্ষ একদিন উচ্চারণ করেছিল তার - মধ্যে ছিল ঐক্য এবং মিলনের আহবান। বহু জাতির মিলনের মধ্য দিয়েই এভাবে এই দেশ যেন 'পবিত্র ধরিত্রী' হয়ে উঠেছে। তাই কবি ভারতবর্ষেই ।। 'পবিত্র ধরিত্রী' প্রত্যক্ষ করেছেন।
১৩) "তারা মোের মাঝে সবাই বিরাজে"-কাদের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: মরুপথ গিরিপর্বত অতিক্রম করে নিজেদের জয়গান গাইতে গাইতে যে যুদ্ধবাজরা ভারতবর্ষে এসেছিল এখানে তাদের কথা বলা হয়েছে।
১৪) "তারাও আসিবে..."-কাদের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: যারা ভারতভূমিকে ঘৃণা করে এখনও তার সংস্কৃতির সঙ্গে একীভূত হতে পারেনি তারাও তাদের দ্বিধা ত্যাগ করে এই সংস্কৃতির মধ্যে নিজেদের মিলিয়ে দিতে পারবে।
১৫) "আছে সে ভাগ্যে লিখা"-ভাগ্যে কী লেখা আছে?
উত্তর: দুঃখের রক্তশিখা মর্মকে দহন করলেও তা সহ্য করতে হবে একথাই ভাগ্যে লেখা আছে।
১৬) "শোনো রে একের ডাক ..." -এই একের ডাক শুনতে গেলে কী করতে হবে?
উত্তর: একের ডাক শুনতে গেলে সমস্ত লজ্জা ভয়কে জয় করতে হবে এবং অপমানকে দূর করতে হবে।
১৭) "জন্ম লভিবে কী বিশাল প্রাণ"-কীভাবে প্রাণ জন্ম নেবে?
উত্তর: সমস্ত দুঃসহ ব্যথার অবসান হয়ে বিশাল প্রাণ জন্ম নেবে।
১৮) "এসো হে পতিত।"-পতিতের জন্য কবির কী প্রার্থনা?
উত্তর: কবি প্রার্থনা করেছেন যেন পতিত শ্রেণির সমস্ত অপমানভার দূর হয়।
১৯) "যত লাজ ভয় করো করো জয়, অপমান দূরে যাক।" -এ মধ্যে দিয়ে কবি কী বলতে চেয়েছেন?
উত্তর: কবি চেয়েছেন দেশের প্রতিটি মানুষ তার নিজের শক্তিতে উঠে দাঁড়াক। উচ্চনীচ, ধনীদরিদ্রের ব্যবধান ঘুচিয়ে মানুষ দেশের সঙ্গে একাত্ম হোক, দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করুক। দেশের সব মানুষ যদি লজ্জা, ভয়, অপমানকে দূরে সরিয়ে এগিয়ে আসে এবং সকলেই সমান-এই ভাবনায় উদ্বুদ্ধ হতে পারে তাহলেই ভারতনির্মাণ সার্থক হবে।
২০) "দুঃসহ ব্যথা হয়ে অবসান জন্ম লভিবে কী বিশাল প্রাণ'-এখানে 'বিশাল প্রাণ' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: যুগ যুগ ধরে বহু জাতির আগমনে ভারতবর্ষ মিলনক্ষেত্রে পরিপত হয়েছে। পারস্পরিক সংঘাত, মতপার্থক্য ভুলে সকলেই ভারতাত্মার অংশীদার হয়ে উঠেছে। বিভেদের মধ্যে ঐক্যের যে ধারণা গড়ে উঠেছে তার মধ্য দিয়েই জাতীয়তার ধারণা পুষ্ট হয়েছে এবং এক 'বিশাল প্রাণ' গড়ে উঠেছে।
২১) "শোনো রে একের ডাক" -এই 'একের ডাক' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন কবিতা অবলম্বনে লেখো।
উত্তর: 'মহামানবের সাগরতীর' এই ভারতবর্ষ মহামিলনের মন্ত্রকে ধারণ করেছে। বহু বিদেশি শক্তি এই দেশ আক্রমণ করেছে, কিন্তু কালের নিয়মে তারা ভারতাত্মার অংশ হয়ে গেছে। দেওয়া-নেওয়ার মধ্য দিয়ে আসলে সমৃদ্ধ হয়েছে এই দেশ। বিভেদকে দূরে সরিয়ে ঐক্যের মন্ত্র উচ্চারণই এ দেশের ঐতিহ্য। আজও সেই আদর্শকেই মেনে চলতে হবে। আর্য-অনার্য, হিন্দু- মুসলমান, ব্রাহ্মণ-পতিত সকলকেই সকলের হাত ধরতে হবে। ঐক্যবদ্ধ ভারতের এই আহ্বানকেই 'একের ডাক' বলা হয়েছে।
আরও পড়ো-