দুটি গানের জন্মকথা প্রশ্ন ও উত্তর
আজ আমরা নতুন পোস্ট শেয়ার করতে চলেছি সপ্তম শ্রেণীর বাংলা বই থেকে দুটি গানের জন্ম কথা থেকে কিছু প্রশ্ন দিয়েছি,কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা গান সম্পর্কে এই প্রশ্ন ও উত্তর ,তোমাদের পরীক্ষার জন্য কাজে লাগবে,আশা করি তোমাদের প্রশ্নপত্র গুলি ভালো লাগবে।
সপ্তম শ্রেণীর বাংলা || দুটি গানের জন্মকথা প্রশ্ন ও উত্তর || Duti ganera janmakatha Questions And Answers
১) ভারতবর্ষের জাতীয় সংগীতটি কোন্ উপলক্ষ্যে প্রথম গাওয়া হয়েছিল?
উত্তর: ভারতবর্ষের জাতীয় সংগীত 'জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে' ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের ২৭ ডিসেম্বর কলকাতায় অনুষ্ঠিত 'ভারতের জাতীয় কংগ্রেস'- এর ২৬ তম বার্ষিক অধিবেশনে প্রথম জনসমক্ষে সমবেতকণ্ঠে গাওয়া হয়েছিল।
২)'তত্ত্ববোধিনী' পত্রিকায় ভারতবর্ষের জাতীয় সংগীতটির কোন্ পরিচয় দেওয়া হয়েছিল?
উত্তর: 'তত্ত্ববোধিনী' পত্রিকায় (মাঘ ১৩১৮) 'জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে' গানটিকে 'ব্রহ্মসংগীত' বলে পরিচয় দেওয়া হয়েছিল।
৩) রবীন্দ্রনাথ 'জনগণমন'র যে ইংরেজি নামকরণ করেন সেটি লেখো।
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর রচিত 'জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে' গানটির ইংরেজি নামকরণ করেন 'The Morning Song of India' |
৪) ভারতবর্ষের জাতীয় মন্ত্রটি কী? সেটি কার রচনা?
উত্তর: ভারতবর্ষের জাতীয় মন্ত্রটি হল 'বন্দেমাতরম্'। সেটি সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা।
৫) জাতীয় মন্ত্রের প্রথম চারটি পত্তি শিক্ষকের থেকে জেনে খাতায় লেখো।
উত্তর: বন্দে মাতরম্।
সুজলাং সুফলাং মলয়জশীতলাম্
শস্যশ্যামলাং মাতরম্।
শুভ্র-জ্যোৎস্না-পুলকিত-যামিনিম্
ফুল্লকুসুমিত দুমদলশোভিনীম্,
সুহাসিনীং সুমধুরভাষিণীম্
সুখদাং বরদাং মাতরম্ ।।
৬) টীকা লেখো: জাতীয় সংগীত, মাঘোৎসব, বিশ্বভারতী, পুলিনবিহারী সেন, ডা. নীলরতন সরকার।
উত্তর: 1)জাতীয় সংগীত: যে সংগীতের মধ্য দিয়ে জাতীয় ভাবধারার সার্থক প্রকাশ ঘটে, তাকেই জাতীয় সংগীত বলা হয়। সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রই এই জাতীয় সংগীত নির্ধারণ করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে' গানটি ভারতবর্ষের জাতীয় সংগীত।
2) মাঘোৎসব: মাঘ মাসে অনুষ্ঠিত ব্রাহ্মধর্মাবলম্বীদের অনুষ্ঠান-বিশেষ মাঘোৎসব নামে পরিচিত। শান্তিনিকেতনের শ্রীনিকেতনে মাঘোৎসব অত্যন্ত সমারোহের মধ্যে দিয়ে পালিত হয়ে থাকে। এই সময় শ্রীনিকেতনের মেলার মাঠে ৩ দিন ব্যাপী কৃষি ও গ্রামীণ শিল্পের প্রদর্শনীর সঙ্গে নানাবিধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। মাঘোৎসব ছাড়াও শান্তিনিকেতনের, গৌষমেলা, বসন্তোৎসব, বর্ষশেষ, নববর্ষ, খ্রিস্টোৎসব, হলকর্ষণ, বৃক্ষরোপণ উৎসব প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর 'জীবনস্মৃর্তি গ্রন্থের 'ঘর ও বাহির' অধ্যায়ে মাঘোৎসবের কথা স্মরণ করেছেন।
3)বিশ্বভারতী: ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রায়পুরের জমিদার এস পি সিনহার কাছ থেকে সিকডাঙায় ২০ বিঘা জমি কিনে নিয়ে পরের বছর সেখানে শান্তির নীড় গড়ে তোলেন। নাম রাখেন শান্তিনিকেতন। কাল ক্রমে সমগ্র অঞ্চলটিই 'শান্তিনিকেতন' নামে পরিচিত হয়। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর (৭ পৌষ) রবীন্দ্রনাথ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের গড়ে তোলা আশ্রমটিতে মাত্র ৫ জন ছাত্র নিয়ে 'ব্রহ্মচর্যাশ্রম' গড়ে তোলেন। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ১৬ মে 'বিশ্বভারতী' বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠে। দেশ-বিদেশ থেকে পড়ুয়ারা এখানে জ্ঞানার্জনের লক্ষ্যে উপস্থিত হয়। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের ১৪ মে তারিখে বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি অর্জন করে।
4) পুলিনবিহারী সেন: ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ আগস্ট পুলিনবিহারী সেন (১১.৮.১৯০৮-১৪.১০.১৯৮৪) ময়মনসিংহের এক ব্রাহ্মপরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। খ্যাতনামা রবীন্দ্রবিশারদ পুলিনবিহারী সেনের পিতা ছিলেন দেশকর্মী ও দরিদ্র-বান্ধব চিকিৎসক বিপিনবিহারী সেন। পুলিনবিহারী ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে শন্তিনিকেতনে আশ্রম বিদ্যালয়ে ভরতি হন। তিনি শান্তিনিকেতন থেকে আইএ, স্কটিশচার্চ কলেজ থেকে বিএ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ পাস করেন। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে 'প্রবাসী' পত্রিকায় তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগে যোগ দেন। বিস্মৃতপ্রায় রবীন্দ্র রচনাসমূহ সন্ধানের পাশাপাশি তিনি রবীন্দ্র রচনাবলিতে গ্রন্থপরিচয় প্রকাশ করেন।
5) ডা. নীলরতন সরকার: প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা. নীলরতন সরকার (১.১০.১৮৬১-১৮.৫.১৯৪৩) চবিবশ পরগনার নেত্রায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম নন্দলাল সরকার। ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে জয়নগর থেকে এন্ট্রান্স এবং ক্যাম্বেল মেডিক্যাল স্কুল থেকে ডাক্তারি পাস করে তিনি সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জনের চাকরি পান। এরপর মেট্রোপলিটন কলেজ থেকে এফএ এবং বিএ পাস করে কিছুদিন চাতরা হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে মেডিকেল কলেজে ভরতি হয়ে ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে এমবি হন। ক্রমে তিনি এমএ এবং এমডি উপাধিও লাভ করেন। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে ডা. নীলরতন সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো এবং ক্রমে ফ্যাকাল্টি অব সায়েন্স এবং ফ্যাকাল্টি অব্ মেডিসিনের ডিন ও স্নাতকোত্তর কলা ও বিজ্ঞান শিক্ষা বিভাগের সভাপতি পদে নিযুক্ত হন। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে বেলগাছিয়া মেডিকেল কলেজ স্থাপনে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেন। ১৯১৯ থেকে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। যাদবপুর যক্ষ্মা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় তিনি সক্রিয় সহযোগিতা করেন। এ দেশে বৃত্তিগত প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন। ক্যাম্বেল মেডিক্যাল স্কুল পরবর্তীতে কলেজে রূপান্তরিত হয়ে তাঁরই নামাঙ্কিত হয়।
৭) 'জনগগমন'-কে জাতীয় সংগীতরূপে গ্রহণ করতে বিরোধিতা দেখা দিয়েছিল কেন? রবীন্দ্রনাথের ব্যাখ্যায় সেই বিরোধের অবসান কীভাবে ঘটেছিল?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'জনগণমন' গানটিকে ভারতের জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণের প্রস্তাব উঠলে রবীন্দ্র-বিরোধীরা প্রচার করেন যে, গানটি সম্রাট পঞ্চম জর্জের ভারতে আগমনের উপলক্ষ্যে রচিত।
সে সময়ে বিশ্বভারতীর প্রাক্তন ছাত্র পুলিনবিহারী সেন রবীন্দ্রনাথকে চিঠি লিখে গানটি রচনার উপলক্ষাটি জানতে চান। রবীন্দ্রনাথ ১৯৩৭ সালের ২০ নভেম্বর তাঁকে লেখেন ভারতসম্রাটের আগমনের আয়োজন উপলক্ষ্যে রবীন্দ্রনাথের কোনো এক রাজসরকারে প্রতিষ্ঠাবান বন্ধু কবিকে উত্ত সম্রাটের জয়গান রচনা করতে বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছিলেন। এই অদ্ভুত অনুরোধ শুনে কবি যে কেবল ব্যথিত হয়েছিলেন তাই-ই নয়, তাঁর মনে ক্ষোভের উত্তাপও সঞ্চারিত হয়েছিল।
এরই প্রবল প্রতিক্রিয়ায় তিনি 'জনগণমন-অধিনায়ক' গানটি রচনা করে সেই ভারত ভাগ্যবিধাতার জয় ঘোষণা করেন। পতন-অভ্যুদয়-বন্ধুর পন্থায় যুগ যুগ ধরে ধাবিত যাত্রীদের যিনি চিরসাথি, যিনি জনগণের অন্তর্যামী পথপরিচায়ক, যুগযুগান্তরের সেই মানবভাগ্যারথচালক যে পঞ্চম বা ষষ্ঠ কোনো জর্জই কোনোক্রমেই হতে পারেন না, সে কথা রাজভক্ত বন্ধুও সেদিন অনুভব করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের এই ব্যাখ্যার ফলে সেই বিরোধের অবসান ঘটে।
৮) 'রবীন্দ্রনাথ গানটিকে পরেও নানা উপলক্ষ্যে ব্যবহার করেছেন।' -১৯১১ খ্রিস্টাব্দের পরবর্তী সময়ে রবীন্দ্রনাথ কীভাবে এই গানটি ব্যবহার করেন?
উত্তর: 'জনগণমন' গানটি প্রথম জনসমক্ষে গাওয়া হয় ২৭ ডিসেম্বর, ১৯১১ তারিখে 'ভারতের জাতীয় কংগ্রেস'-এর ২৬ তম বার্ষিক অধিবেশনে, কলকাতায়। গানটিকে নিয়ে সেসময়ে নানারকম সাময়িক তিক্ততা ও ভুল বোঝাবুঝি হলেও রবীন্দ্রনাথ গানটিকে পরবর্তীকালে নানা উপলক্ষ্যে ব্যবহার করেছেন।
দক্ষিণ ভারত পরিক্রমায় বেরিয়ে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ মদনপল্লীতে উপনীত হন। সেখানকার 'থিয়সফিক্যাল কলেজ'-এর অধ্যক্ষ এবং রবীন্দ্রনাথের বন্ধু জেমস এইচ কাজিন্স তাঁর সম্মানে এক সভার আয়োজন করেন। সেই সভায় রবীন্দ্রনাথ 'জনগণমন' গানটি পরিবেশন করেন। তিনি গানটির নামকরণ করেন 'The Morning Song of India' |
এরপর ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে রবীন্দ্রনাথ জেনিভা থেকে সোভিয়েত রাশিয়ায় গেলে মস্কোয় 'পায়োনিয়ার্স কমিউন'-এ অনাথ বালক-বালিকারা তাঁকে অভ্যর্থনা জানায়। সেখানে প্রশ্নোত্তর পর্বের পর তারা কবিকে গান গাইতে অনুরোধ করলে তিনি তাদের 'জনগণমন' গানটি গেয়ে শোনান।
৯) ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের ২৬তম বার্ষিক অধিবেশন কবে হয়েছিল?
উত্তর: ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশন হয়েছিল ১৯১১ সালের ২৬ থেকে ২৮ ডিসেম্বর।
১০) 'জনগণমন' গানটির রিহার্সাল হয়েছিল কোথায়?
উত্তর: 'জনগণমন' গানটির রিহার্সাল হয়েছিল ডা. নীলরতন সরকারের হ্যারিসন রোডের বাড়িতে।
১১) 'জনগণমন' গানটি 'তত্ত্ববোধিনী' পত্রিকায় কী নামে অভিহিত করা হয়?
উত্তর: 'জনগণমন' গানটিকে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় 'ব্রহ্মসংগীত' নামে অভিহিত করা হয়।
১২) কোন্ বছরের 'মাঘোৎসবে' 'জনগণমন' গানটি 'ব্রহ্মসংগীত' হিসেবে গীত হয়?
উত্তর: ১৩১৮ বঙ্গাব্দে 'মাঘোৎসবে' 'জনগণমন' গানটি 'ব্রহ্মসংগীত' হিসেবে গীত হয়েছিল।
১৩) আমাদের দেশের জাতীয় সংগীতটি প্রথম জনসমক্ষে সমবেত কন্ঠে কবে কোথায় গাওয়া হয়?
উত্তর: আমাদের দেশের জাতীয় সংগীতটি প্রথম জনসমক্ষে সমবেত কন্ঠে গাওয়া হয়েছিল ১৯১১-র ২৬-২৮ ডিসেম্বর ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে।
১৪) মস্কোয় কাদের অনুরোধে রবীন্দ্রনাথ 'জনগণমন' গেয়েছিলেন?
উত্তর: 'পায়োনিয়ার্স কমিউন'-এর অনাথ বালক-বালিকাদের অনুরোধে কবি 'জনগণমন' গেয়েছিলেন।
১৫) মস্কোয় পায়োনিয়ার্স কমিউনে রবীন্দ্রনাথের কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল?
উত্তর: 'পায়োনিয়ার্স কমিউন'-এ অনাথ শিশুরা কবিকে অভ্যর্থনা জানায় এবং তাদের অনুরোধেই রবীন্দ্রনাথ 'জনগণমন' গেয়ে শুনিয়েছিল।
১৬)"জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে"-গানটির প্রথম পরিচয় কী ছিল? গানটি নিয়ে বিতর্ক দেখা দেওয়ায় কবি কী জবাব দিয়েছিলেন?
উত্তর: 'জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে' গানটির প্রথম প্রকাশের সময় তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় এটিকে ব্রহ্মসংগীত বলে পরিচয় দেওয়া হয়েছিল।
সম্রাট পঞ্চম জর্জের ভারতে আগমন উপলক্ষ্যে এই গানটি রচিত-এই প্রচারের জবাবে রবীন্দ্রনাথ বলেন যে, এরকম গান লেখার জন্য তাঁকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন তৎকালীন রাজসরকারে প্রতিষ্ঠাবান তাঁর এক বন্ধু। কবি এই প্রস্তাবে বিস্মিত ও হতবাক হয়ে প্রবল প্রতিক্রিয়া হিসেবে তিনি 'জনগণমন' গানটি রচনা করেন যার মাধ্যমে তিনি ভারত ভাগ্যবিধাতার জয় ঘোষণা করেছেন। পতন-অভ্যুদয়-বন্ধুর পন্থায় যুগ যুগ ধাবিত যাত্রীদের যিনি চিরসারথী তিনি যে পঞ্চম বা ষষ্ঠ কোনো জর্জই হতে পারেন না, রবীন্দ্রনাথ তাও স্পষ্ট করে দেন।
১৭)"... সেই বিস্ময়ের সঙ্গে মনে উত্তাপেরও সঞ্চার হয়েছিল।"-কে কেন একথা বলেছেন?
উত্তর: সম্রাট পঞ্চম জর্জের ভারতে আগমন উপলক্ষ্যে রবীন্দ্রনাথের বন্ধুস্থানীয় কোনো সরকারি কর্তাব্যক্তি তাঁকে সম্রাটের জয়গান রচনার জন্য বিশেষ অনুরোধ করেছিলেন। এরকম অপ্রত্যাশিত অনুরোেধ যে আসতে পারে তা ভাবতে পারেননি বলেই কবি বিস্মিত ও ক্রুদ্ধ হন। আর তারই প্রতিক্রিয়াস্বরূপ ভারত ভাগ্যবিধাতার জয় ঘোষণা করে কবি 'জনগণমন' গানটি রচনা করেন।
১৮) থিয়সফিক্যাল কলেজের কর্তৃপক্ষের জনগণমন গানটি শুনে কী উপলব্ধি হয়েছিল এবং তাঁরা কী করেছিলেন?
উত্তর: 'জনগণমন' গানটি শুনে কলেজের কর্তৃপক্ষ গানের সুর এবং অর্থগৌরবে অভিভূত হয়ে পড়েন। পরে তাঁরা এই গানটিকে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিদিনের অ্যাসেম্বলি সং বা বৈতালিকরূপে প্রচলিত করেন।
১৯)'আমার সোনার বাংলা' গানটি কবে প্রথম গাওয়া হয়?
উত্তর: ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ২৫ আগস্ট 'আমার সোনার বাংলা' গানটি প্রথম গাওয়া হয়।
২০)"প্রশান্ত কুমার পাল অনুমান করেছেন..." কোন্ অনুমানের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: প্রশান্ত কুমার পালের অনুমান হল যে, বঙ্গভঙ্গের তারিখটি জানতে পারার তাৎক্ষণিক আবেগের ফলেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 'আমার সোনার বাংলা' গানটি রচনা করেন।
২১) 'আমার সোনার বাংলা' গানটি রচনার কাহিনি যে গ্রন্থে পাওয়া যায় তার নাম কী?
উত্তর: সরলা দেবী তাঁর "জীবনের ঝরাপাতা" নামের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে এই গান রচনার কাহিনি বলেছেন।
২২) রবীন্দ্রনাথের গিরিডিতে রচিত গানগুলির তাৎপর্য কী ছিল?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথের গিরিডিতে রচিত গানগুলি বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময়ে বিপুল উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছিল।
২৩)'আমার সোনার বাংলা' কোন্ দেশের জাতীয় সংগীত?
উত্তর: 'আমার সোনার বাংলা' বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত।
২৪) "তাঁর মতো সমজদার আর কেউ ছিল না।"-কার কথা বলা হয়েছে? তাঁর সমঝদারিত্বের কী পরিচয় পাওয়া যায়?
উত্তর: সরলা দেবী তাঁর "জীবনের ঝরাপাতা” গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথের সমঝদারিত্বের কথা বলেছেন।
রবীন্দ্রনাথ চুঁচুড়ায় মাঝেমধ্যে থাকার ফলে সরলা দেবী বোটের মাঝির কাছ থেকে সংগ্রহ করা বাউল গান রবীন্দ্রনাথকে শোনাতেন। সমঝদার রবীন্দ্রনাথ সেই গান শোনামাত্র তার সুর ভেঙে, কথাগুলিকে কাছাকাছি রেখে নিজের মতো গান রচনা করতেন।
২৫) 'আমার সোনার বাংলা' গানটির সুরের বিষয়ে সরলা দেবী তাঁর 'জীবনের ঝরাপাতা'য় কী বলেছেন?
উত্তর: 'আমার সোনার বাংলা' গানটির সুরের বিষয়ে সরলা দেবী তাঁর 'জীবনের ঝরাপাতা' গ্রন্থে জানিয়েছেন, 'কর্তাদাদামহাশয়'-এর সঙ্গে চুঁচুড়ায় থাকার সময় তাঁর বোটের মাঝিদের থেকে তিনি অনেক বাউল আঙ্গিকের গান সংগ্রহ করেছিলেন। সেই গানগুলি তিনি শোনাতেন তাঁর রবিমামাকে। কারণ তাঁর মতে রবিমামার মতো গানের সমঝদার শ্রোতা আর কেউই সে সময় ছিলেন না। ওই সময়ই সরলা দেবীর সংগ্রহ করা কোনো একটি গানের সুর ভেঙেই রবীন্দ্রনাথ তাঁর বিখ্যাত এই গানটি রচনা করেন।
আরও পড়ো-