কুতুব মিনারের কথা
(সৈয়দ মুজতবা আলি)
প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা এই আর্টিকেলে আমরা Class 7 এর কুতুব মিনারের কথা থেকে প্রশ্ন উত্তর নিয়ে এসেছি। তোমাদের সপ্তম শ্রেনীর পাঠ্যবইতে লেখক সৈয়দ মুজতবা আলি এর লেখা কুতুব মিনারের কথা রয়েছে। তাই এই কাহিনী থেকে কিছু প্রশ্নপত্র নিচে রয়েছে তার সমাধান আমরা এখানে করে দিলাম। আশা করি সবার ভালো লাগবে। এবং তোমাদের পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সপ্তম শ্রেণীর বাংলা || কুতুব মিনারের কথা (সৈয়দ মুজতবা আলি) প্রশ্ন ও উত্তর || Kutuba Minarera Katha Theke Questions And Answers
১) কোন্ সম্রাট 'অশোক স্তম্ভ'কে দিল্লি নিয়ে এসেছিলেন?
উত্তর: সুলতান ফিরোজ তুঘলক অশোক স্তম্ভকে দিল্লি নিয়ে এসেছিলেন।
২) কুতুব মিনার নামটি কার নামানুসারে রাখা হয়েছে এবং কেন?
উত্তর: সুলতান কুতুবুদ্দিন আইবকের নাম অনুসারে সম্ভবত কুতুব মিনারের নামকরণ করা হয়েছে কারণ এই মিনারের তিনিই গোড়াপত্তন করেন। অনেকের মতে সুফী সাধক খাজা কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকির স্মৃতি রক্ষার জন্য কুতুবুদ্দিন আইবক এটি নির্মাণ করেন।
৩) কুতুবের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য আর কে মিনার গড়তে চেষ্টা করেছিলেন?
উত্তর: কুতুবের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া জন্য আলাউদ্দিন খিলজি মিনার গড়তে চেষ্টা করেছিলেন। আলাউদ্দিনের বাসনা ছিল তাঁর মিনারটি যেন কুতুবের দ্বিপুণ উঁচু হয়।
৪) মিনারেট বা মিনারিকা কী? মিনারের সঙ্গে এর পার্থক্য কোথায়?
উত্তর: মিনার হল ভক্তবিশেষ। অন্যদিকে মসজিদ, সমাধি কিংবা অন্য কোনো ইমারতের অঙ্গ হিসেবে যে মিনার থাকে, তার নাম 'মিনারেট' বা 'মিনারিকা'।
'মিনারেট' সাধারণভাবে উচ্চতায় 'মিনার'-এর চেয়ে অনেক ছোটো হয়।
৫) আহমদাবাদ শহরটি কোন্ রাজার নামানুসারে হয়েছে? এই শহরটি কোন্ রাজ্যের রাজধানী?
উত্তর: সুলতান আহমেদের নামানুসারে তাঁর রাজধানীর নাম হয়েছিল 'আহমদাবাদ'। আহমেদাবাদ গুজরাতের রাজধানী ছিল।
৬) "কুতুব মিনার পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মিনার"-এই উদ্ধৃতিটির আলোকে মিনারটির পাঁচটি বিশিষ্টতা উল্লেখ করো।
উত্তর: কুতুব মিনার যে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মিনার-এই কথা ইংরেজ পর্যন্ত স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। কারণ-
(১)পাঁচতলাবিশিষ্ট কুতুব মিনারের প্রথম তলাতে আছে 'বাঁশি' ও 'কোপ'- এর পরপর সাজানো নকশা।
(২) মিনারটির দ্বিতীয় তলাতে আছে শুধু বাঁশি, আর তৃতীয় তলাতে শুধু কোপ। দুর্ভাগ্যের বিষয়, বজ্রাঘাতে চতুর্থ ও পঞ্চমতলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেই দুটি তলার শিল্পকর্ম সম্পর্কে জানার কোনো উপায় আর এখন নেই।
(৩)কুতুব মিনারের শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম প্রধান কারণ মিনার তৈরিতে স্থপতির মুনশিয়ানা। তিনি অত্যন্ত দক্ষ শিল্পী ছিলেন বলেই মিনারটিকে কয়েকটি তলাতে বিভক্ত করে, সামঞ্জস্য রেখে প্রতিটি খেয়ে নীচতলা থেকে উপরতলায় তাকে একটু ছোটো করে, তার সঙ্গে গুটিকতক ব্যালকনি বা বারান্দা লাগিয়ে দিয়ে মিনারটির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছিলেন।
(৪) মিনারটি তৈরির ক্ষেত্রে শিল্পীর সিনারচ্ছিন্ন প্রপর্শন' বা সামঞ্জস্য সম্বন্ধে যথার্থ ধারণা ছিল।
(৫) এই মিনারটিতে আছে হিন্দু ও মুসলিম সংস্কৃতির যথার্থ সমন্বয়। মিনারের গায়ের কারুকার্য, লতাপাতা, ফুলের মালা বা চক্রের নকশা যেখানে হিন্দু সংস্কৃতির পরিচায়ক, সেখানে মিনারটির পরিকল্পনা করেছিলেন মুসলিমরা এবং মিনারটিতে পাওয়া যায় 'আরবি লেখার সার', যা মুসলিম সংস্কৃতির অভিজ্ঞান।
মূলত, এই পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের জনাই কুতুব মিনার পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মিনার।
৭) মিনারটির গঠনে হিন্দু-মুসলিম সাংস্কৃতিক মিলনের চেহারাটি কীভাবে ধরা পড়েছে, তা লেখো।
উত্তর: কুতুব মিনারের গঠনে হিন্দু ও মুসলমান-এই দুই ধর্মেরই সংস্কৃতির ছাপ স্পষ্ট। মিনারটির গায়ের কারুকার্য খুব বিস্ময়কর। বাঁশি ও কোণের ওপর দিয়ে সমস্ত মিনারটিকে কোমরবন্ধের মতো বেষ্টন করে আছে সারি সারি লতাপাতা, ফুলের মালা, চক্রের নকশা, যা হিন্দু সংস্কৃতির স্মারক। আবার এর সঙ্গেঙ্গ মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে এক সারি অন্তর অন্তর আরবি লেখার সার-যা মুসলমান সংস্কৃতির পরিচায়ক। মিনারটির সর্বত্র খোদাইয়ের কাজ করেছিলেন হিন্দুরা, অর্থাৎ যাবতীয় কারুশিল্পের দায়িত্বে ছিলেন হিন্দুরা। কিন্তু, গোটা মিনারটির পরিকল্পনা মুসলমানের। এইভাবেই মিনারটির গঠনে হিন্দু-মুসলমান উভয় সংস্কৃতির ছাপই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
৮) কুতুব মিনারের শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলতে গিয়ে লেখক আর কোন্ কোন্ স্থাপত্যকীর্তির প্রসঙ্গ এনেছেন?
উত্তর: কুতুবের সঙ্গে পাল্লা দিতে আলাউদ্দিন খিলজি ছাড়া আর কেউ কখনও মিনার খাড়া করার কথা ভাবেননি। আলাউদ্দিন গোড়াপত্তন করেছিলেন বটে, কিন্তু কুতুবের দুপুণ ঘেরবিশিষ্ট এবং দ্বিগুণ উচ্চতাবিশিষ্ট মিনার গড়ার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। মোগলরা মিনার গড়তে চেষ্টা করেননি। তাজমহলে রয়েছে অত্যন্ত সাদামাটা মিনারিকা। হুমায়ুনের সমাধিতে মিনারিকা সম্পূর্ণ বর্জিত হয়েছে। আহমেদাবাদের বেগম রানি সিপ্রির মসজিদে সুন্দর একটি মিনারিকা দেখা গেছে, মিনার নয়। ইংরেজরা দিল্লিতে সেক্রেটারিয়েট, রাজভবন, কলকাতায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল তৈরি করলেও কুতুব মিনারের সঙ্গে কখনোই পাল্লা দেয়নি।
৯) আলাউদ্দিন খিলজি চেষ্টা করেও কুতুব মিনারের চেয়ে মহত্তর স্থাপত্য গড়তে পারেননি কেন?
উত্তর: আলাউদ্দিন খিলজি মহত্তর স্থাপত্যকীর্তি হিসেবে একটা মিনার গড়তে চেয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন কুতুবের দ্বিগুণ ঘেরবিশিষ্ট আর দ্বিগুণ উঁচু একটা মিনার গড়তে। কিন্তু গোড়ার কাঠামোর কিছুটা শেষ হতে না হতেই তিনি পরপারে চলে যান, অর্থাৎ তাঁর মৃত্যু হয়। তাই তাঁর চেষ্টায়ও ইতি পড়ে যায়।
১০) কুতুব মিনার কে নির্মাণ করেন? এটি কত তলার?
উত্তর: কুতুব মিনার নির্মাণ করেন প্রাথমিকভাবে কুতুবউদ্দিন আইবক। এটি পাঁচতলার মিনার।
১১) কুতুব মিনারের প্রথম তলায় কী ছিল?
উত্তর: কুতুব মিনারের প্রথম তলায় ছিল 'বাঁশি' ও 'কোণ'-এর পরপর সাজানো নকশা।
১২) ফিরোজ তুঘলক কুতুব মিনারের কোন্ কার্যের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?
উত্তর: ফিরোজ তুঘলক কুতুব মিনারের চতুর্থ ও পঞ্চম তলা বজ্রাঘাতে ভেঙে যাওয়ায় সেগুলি মেরামত করে দিয়েছিলেন।ফিরোজ তুঘলক কুতুব মিনারের চতুর্থ এবং পঞ্চম তলা মার্বেল দিয়ে মেরামত করে দিয়েছিলেন। পঞ্চমটির মেরামতিতে সিকান্দার লোদিরও ভূমিকা আছে বলে অনেকের ধারণা।
১৩)"... অনেক ভেবে-চিন্তেও এর কোনো উত্তর দিতে পারেননি।"-কীসের উত্তর না দিতে পারার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মিনার কুতুব তৈরির সাহস স্থপতি কোথা থেকে পেল, এ কথাই কানিংহাম, ফার্গুসন, কার স্টিফেন কিংবা স্যার সৈয়দ আহমেদের মতো স্থপতিরা অনেক ভেবেও উত্তর দিতে পারেননি।
১৪) "ইমারত তৈরি করা কত সোজা!"-লেখকের এ কথা বলার কারণ কী?
উত্তর: ইমারত তৈরিতে কারিগর গম্বুজ, থাম, আর্চ, ছত্রি, মিনারেট, ছজ্জা, কার্নিস, ব্র্যাকেট ইত্যাদি ব্যবহারের সুযোগ পান। অন্যদিকে মিনারের ক্ষেত্রে একটা সোজা খাড়া স্তম্ভে সৌন্দর্য সৃষ্টি করা বেশ শক্ত কাজ। তাই লেখক এ কথা বলেছেন।
১৫) "দিল্লির অতি অল্প রাজাতেই এই দ্বিতীয় গুণটি পাওয়া যায়।”-কোন্ গুণের কথা এখানে বলা হয়েছে?
উত্তর: ফিরোজ তুঘলক যেমন নিজের ইমারত উৎসাহের সঙ্গে তৈরি করতেন ঠিক তেমনই অন্যের তৈরি ইমারত বা মিনার ভেঙে গেলে সেগুলো মেরামত করে দিতেন। ফিরোজ তুঘলকের এই গুণের কথাই এখানে বলা হয়েছে।
১৬) কুতুব মিনারে মুসলিম রীতি কীভাবে প্রকাশ পেয়েছে?
উত্তর: কুতুব মিনারের গায়ে এক সারি অন্তর আরবি লেখার সারের মাধ্যমে মুসলিম রীতি প্রকাশ পেয়েছে।
১৭) "এ সাহস কেউ দেখাননি।"-কোন্ সাহসের কথা এখানে বলা হয়েছে?
উত্তর: কুতুব মিনারের থেকে ভালো মিনার গড়ার সাহস দেখানোর কথা এখানে বলা হয়েছে।
১৮)"একমাত্র তিনিই চেয়েছিলেন কুতুবের সঙ্গে পাল্লা দিতে।"-'তিনি' বলতে এখানে কার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: 'তিনি' বলতে এখানে আলাউদ্দিন খিলজির কথা বলা হয়েছে।
১৯) "সে-মিলন পরবর্তী যুগে কখনো ভঙ্গ হয়নি,..."-এখানে কীসের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: কুতুব মিনাবের নকশায় ছিল হিন্দু রীতি আর আরবি লেখাতে ছিল মুসলিম রীতি। এর পরিকল্পনাতে মুসলমানরা ছিলেন আর খোদাই-এর কাজ করেছিলেন হিন্দু শিল্পী। এই সমন্বয়ের কথাই এখানে বলা হয়েছে।
২০)“সর্বকলাতেই এ সূত্র প্রযোজ্য, কিন্তু স্থাপত্যের বেলা এটা অন্যতম মূলসূত্র"-সূত্রটি কী?
উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত সূত্রটি হল এই যে, প্রত্যেক ইমারতেরই একটি 'অপটিমাম সাইজ' (সর্বাধিক কাম্য আকৃতি) আছে। তার চেয়ে বড়ো কিংবা ছোটো হলে ইমারত ভালো দেখতে হয় না।
২১) 'মিনারেট'-এর বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর: 'মিনারেট' সব সময়েই মসজিদ, সমাধি বা অন্য স্থাপত্যের অংশ হিসেবে গড়ে ওঠে।
২২) আহমেদাবাদ শহরে কার নামে মসজিদ আছে?
উত্তর: আহমেদাবাদ শহরে বেগম রানি সিপ্রির নামে মসজিদ আছে।
২৩) হুমায়ুনের সমাধি নির্মাতাকে লেখক 'ঘোড়েল' বলেছেন কেন?
উত্তর: হুমায়ুনের সমাধি নির্মাতাকে লেখক 'ঘোড়েল' বলেছেন কারণ তিনি মিনারিকা ছাড়াই ইমারতটি গড়েছেন।
২৪) 'মিনার' ও 'মিনারিকা' কী লেখো।
উত্তর: নিজস্ব মহিমায় যে স্তম্ভ মাথা উচু করে দাঁড়ায় তাকে বলে 'মিনার'। অন্যদিকে মসজিদ, সমাধি বা অন্য কোনো ইমারতের অংশ হিসেবে যদি কোনো মিনার থাকে, তাকে বলে 'মিনারেট' বা 'মিনারিকা'।
২৫) তাজের নির্মাতা কীভাবে কুতুবের শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিয়েছেন?
উত্তর: কুতুব মিনারের শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিয়েছিলেন বলেই তাজমহলের নির্মাতা মিনারিকা নির্মাণ করেছিলেন এমন সাদামাটাভাবে যাতে কুতুবের সঙ্গে তার তুলনা করাই না হয়।
২৬) রানি সিপ্রির মসজিদের মিনারিকার নিজস্ব মূল্য কেন আছে বলে লেখক মনে করেন?
উত্তর: গুজরাত ও রাজপুতানার মেয়েদের হাতের মণিবন্ধে যে বিচিত্র আকারের, বিচিত্র দর্শনের অসংখ্য বালা ও চুড়ি থাকে তার মতো অভিনব গঠনশৈলীতে রানি সিপ্রির মসজিদের মিনারিকাটি গড়ে তোলা হয়েছে। তাই লেখক মনে করেন রানি সিপ্রির মসজিদের মিনারিকার নিজস্ব মূল্য আছে।
আরও পড়ো-