জাদুকহিনি
অজিতকৃষ্ণ বসু
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী,
আজ আমার সপ্তম শ্রেণীর বাংলা বই থেকে জাদুকাহিনি থেকে প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে এসেছি। লেখক অজিতকৃষ্ণ বসু লেখা জাদুকাহিনি এই গল্প থেকে কিছু প্রশ্নপত্র রয়েছে তার সমাধান আমরা এখানে করে দিলাম। এবং তোমাদের পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে। আশা করি এই প্রশ্ন উত্তর তোমাদের ভালো লাগবে।
সপ্তম শ্রেণীর বাংলা || জাদুকাহিনি (অজিতকৃষ্ণ বসু) প্রশ্ন ও উত্তর || Jadukahini Questions And Answers
১) "...তার আগে আপনাকে ছাড়ছিনে।”- কীসের আগে?
উত্তর: জোয়ান চেহারার একটি লোক তার টুপিটি শিলিং দিয়ে ভরে দেওয়ার আগে জাদুকর ডেভান্টকে ছাড়বেনা বলেছিল।
২) 'কৃপণের স্বপ্ন' খেলাটির অন্য নাম কী ছিল?
উত্তর: 'হাওয়াই টাঁকশাল' ছিল 'কৃপণের স্বপ্ন' খেলাটির অন্য নাম।
৩) ডেভান্ট তাঁর পথ আটকানো লোকটিকে দেখে কী বুঝেছিলেন?
উত্তর: ডেভান্ট বুঝেছিলেন যে, লোকটি গুন্ডা, গোঁয়ার অথবা পাগল।
৪) 'চোখের সামনে দেখছেন অর্থাভাবে শুকিয়ে মরছি'-কার উত্তি?
উত্তর: জনবিরল পথে জাদুকর ডেভান্টের পথ আটকেছিল যে লোকটি, উক্তিটি তার।
৫) ডেডাল্টের পক্ষে হাওয়া থেকে ছয় শিলিং-এর বেশি ধরা সম্ভব ছিল না কেন?
উত্তর: ডেভান্টের পক্ষে হাওয়া থেকে ছয় শিলিং-এর বেশি ধরা সম্ভব ছিল না কারণ তার পকেটে ছয় শিলিং-ই ছিল।
৬) যে লোকটি ডেভান্টের পথ আটকেছিল সে আসলে কীরকম লোক ছিল?
উত্তর: লোকটি মানসিকভাবে অপ্রকৃতিস্থ ছিল।
৭) ডেভান্টের প্রসঙ্গে ছোটোবেলার কোন্ জাদুকরের কথা লেখকের মনে পড়ে গিয়েছিল?
উত্তর: ডেভান্টের প্রসঙ্গে লেখকের মনে পড়ে গিয়েছিল ছোটোবেলায় দেখা চাঁদ মিয়া নামে এক জাদুকরের কথা।
৮)"সুতরাং লোকটিকে চটানো চলবে না।”-কোন্ লোকটিকে কেন চট্টানো চলবে না?
উত্তর: ইংল্যান্ডের বিখ্যাত জাদুকর ডেভিড ডেভান্ট-কে যে লোকটি পথ আটকে তার টুপিতে শিলিং ভরার কথা বলেছিল, এখানে তার কথা বলা হয়েছে। ডেভান্ট বুঝেছিলেন যে, পালানোর চেষ্টা করে কোনো লাভ হবে না, দৌড়ে বা কুস্তিতে তিনি তার সঙ্গে পারবেন না। সন্ধ্যার নির্জন পথে চিৎকার করে ডাকলেও কেউ সাড়া দেবে না। তাই লোকটিকে চটালে তাঁরই ক্ষতির সম্ভাবনা আছে।
৯)'হাওয়াই টাঁকশাল'-জাদুর খেলার রহস্যটা কী?
উত্তর: 'হাওয়াই টাঁকশাল' খেলাটিতে জাদুকর বারবার খালি হাত দেখিয়ে হাওয়া থেকে টাকা ধরে পাত্র ভরে ফেলেন। টাকাগুলো অবশ্যই হাওয়া থেকে আসে না। হাতের তালু অথবা, গুপ্তস্থানে লুকিয়ে রাখা জায়গা থেকে টাকা নেওয়ার কৌশলের ওপরেই এই খেলার সার্থকতা নির্ভর করে।
১০) "লোকটি খেপে উঠে বললে..."-লোকটি খেপে উঠে কী বলেছিলেন?
উত্তর: হাওয়া থেকে টাকা ধরার বিষয়টি যে একটি কৌশল, তা ডেভান্ট তার পথ আটকানো লোকটিকে বোঝাতে চাইলে সে ডেভান্টকে বেয়াড়া, বেআক্কেল এবং বেদরদি বলে। সে আরও বলে, চোখের সামনে তাকে অর্থাভাবে শুকিয়ে মরতে দেখেও ডেভান্ট হাত বাড়িয়ে আঙুলের ডগায় টাকা আনার মেহনতটুকুও করতে চান না। এ জন্য ডেভান্টকে সে সতর্ক করে দেয়।
১১)"ডেভান্ট হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন।"-কেন ডেভান্ট হাঁফ ছেড়েছিলেন?
উত্তর: নিজের পকেটে থাকা ছ-টি শিলিং-এর পাঁচটি দিয়ে ডেভান্ট যখন টাকার জন্য পথ আটকানো লোকটিকে সামলানোর চেষ্টা করছেন, আর তার হাতে রয়েছে মার এক শিলিং, উদ্বেগের সেই মুহূর্তে ঈশ্বর প্রেরিত হয়েই যেন চার-পাঁচজন লোক এসে হাজির হয়। মাথাখারাপ লোকটির সন্ধানেই তাদের আগমন। দুঃখপ্রকাশ করে লোকটিকে নিয়ে তারা চলে গেলে ডেডান্ট হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন।
১২) "আমার পকেটখানা তল্লাশি করে যা পাও সব নিয়ে যাও।”-কে কাকে এবং কখন মন্তব্যটি করেছিলেন?
উত্তর: 'জাদুকাহিনি' গল্পে জাদুকর ডেভান্ট তাঁর পথ আগলে দাঁড়ানো লোকটিকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্নোদ্ভূত মন্তব্যটি করেছিলেন। সন্ধ্যাবেলায় জনবিরল পথ দিয়ে বাড়ি ফেরার সময় জোয়ান চেহারার লোকটি ডেভান্টের পথ আটকে দাঁড়ায় এবং বলে যে, অনেকদিন বাদে সে তাঁকে পেয়েছে। ডেভান্টই টাকা বানানো লোকটি কি না সে বিষয়ে সে নিশ্চিত হতে চায়। ডেভান্ট অস্বীকারের চেষ্টা করলে লোকটি বলে যে, সে মোটেও ভুল করেনি, ডেভান্ট যেন তার টুপিটি শিলিং দিয়ে ভরে দিয়ে যায়, না হলে সে তাকে ছাড়বে না। ডেভান্ট বুঝতে পারেন যে, দৌড়ে বা কুস্তিতে তিনি এই লোকটির সঙ্গে পারবেন না। তাই তাকে না চটিয়ে ঠান্ডা মাথায় সামলানোর জন্য ডেভান্ট লোকটিকে উদ্দেশ্য করে উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেন।
১৩) "বিপদ শুরু হবে তারপরই"-কোন্ ঘটনা প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে? কীভাবে এই বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়েছিল?
উত্তর: উদ্ধৃতাংশটি অজিতকৃন্ন বসুর 'জাদুকাহিনি' রচনাংশ থেকে গৃহীত হয়েছে। জাদুকর ডেভান্টকে সন্ধ্যাবেলা পথ আটকে একটি লোক বলেছিল তার টুপি শিলিং দিয়ে ভরে দিতে হবে। জাদুকর তাকে বিষয়টি যে জাদুর খেলা ছাড়া আর কিছুই নয়, সে-কথা বোঝাতে চাইলেও কোনো কাজ হয় না। নাছোড় লোকটিকে ঠেকানোর জন্য ডেভান্ড জাদুকরের ভঙ্গিতে হাত চালিয়ে একটা শিলিং হাওয়া থেকে ধরে টুপিতে রাখেন। লোকটিও খুশি হয়। ডেভান্ট জানতেন যে তাঁর কাছে আছে মাত্র ছয় শিলিং। তার বেশি শিলিং ধরা তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে না এবং বিপদ শুরু হবে তার পরেই।
ডেভান্টের ভাগ্য ভালো ছিল যে, যখন তিনি পঞ্চম শিলিং ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখনই চার-পাঁচজন লোক এসে হাজির হয়। তারাই জানায়, লোকটির মাথা খারাপ। ডেভান্টের কাছে দুঃখপ্রকাশ করে তারা তাদের 'হারানিধি'কে নিয়ে চলে যায়। এর ফলে ডেভান্ট ওই লোকটির হাত থেকে রক্ষা পান ও বিপন্মুক্ত হন।
১৪) লেখকের বর্ণিত অখ্যাত জাদুকর চাঁদ মিয়া যখন খেলা দেখিয়েছিলেন সেটি কত সালের কথা?
উত্তর: সেটি ছিল ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের কথা।
১৫) হাওয়া থেকে টাকা ধরে চাঁদ মিয়া কীসে ভরেছিলেন?
উত্তর: চাঁদ মিয়া হাওয়া থেকে টাকা ধরে টিনের কৌটোয় ভরেছিলেন।
১৬) চাঁদ মিয়ার খেলার জন্য কিছু চাঁদা দিয়েছিলেন কে?
উত্তর: চাঁদ মিয়ার খেলার জন্য প্রধান শিক্ষকমশাই কিছু চাঁদা দিয়েছিলেন।
১৭) স্কুল থেকে চাঁদ মিয়া কত টাকা পেয়েছিলেন?
উত্তর: স্কুল থেকে চাঁদ মিয়া দশ টাকার মতো পেয়েছিলেন।
১৮) "হাওয়াই জাদুর টাকা ভোগে লাগাতে নেই।" -ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: চাঁদ মিয়া হাওয়া থেকে জাদুর সাহায্যে টাকা ধরেন। সেই মানুষটিকে মাত্র দশ টাকা দক্ষিণা পেয়ে খুশি হতে দেখে সকলে যখন বিস্মিত, তখনই চাঁদ মিয়া মন্তব্যটি করেন। তাঁর কথা ছিল হাওয়াই জাদুর টাকা হাওয়াতেই ফেরত দিতে হয়, ব্যবহার করতে নেই। এর মাধ্যমে তিনি আসলে বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, জাদু-কে বাস্তবে পরিণত করা কখনোই সম্ভব নয়।
১৯)"চাঁদ মিয়া নামে একজন জাদুকর স্কুলের বড়ো হলে আমাদের জাদুর খেলা দেখালেন।"-কোন্ স্কুলে? খেলাটা কী ছিল? খেলার পরে কোন্ ঘটনা তাঁদের বিস্মিত করেছিল?
উত্তর: লেখক অজিতকৃয় বসু এখানে তাঁর ছোটোবেলার স্কুল ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের কথা বলেছেন।
চাঁদ মিয়া নামক জাদুকর স্কুলে ঘণ্টাখানেক খেলা দেখিয়েছিলেন। তাঁর খেলার পুঁজি বেশি ছিল না। কিন্তু সেই কিশোর বয়সে লেখক ও তাঁর বন্ধুদের সেই জাদুকরের খেলা মন্দ লাগেনি। হাওয়া থেকে এক-একটি করে টাকা ধরে টিনের কৌটোয় ভরতি করাই ছিল চাঁদ মিয়ার জাদুর খেলা যা দেখে সকলেই বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলেন।
খেলার শেষে প্রধান শিক্ষকমশাইয়ের দেওয়া আর টিকিট বিক্রি থেকে পাওয়া টাকা মিলিয়ে মোট দশ টাকা চাঁদ মিয়াকে দেওয়া হয়। তিনি তখন অত্যন্ত খুশি হন। তাঁকে দেখে মনে হয়, তিনি এর চেয়ে কম টাকা পেলেও খুশি হতেন। যে জাদুকরের হাওয়া থেকে ইচ্ছামতো টাকা ধরার সুযোগ আছে, তাঁর শালা টাকা পাওয়ার আনন্দষ্টিই লেখকের কাছে বিশ্বস্ময়কর লেগেছিল।
২০) "সঙ্গে-সঙ্গে আমাদের কয়েকজনের মনে একটু খটকাণ্ড লেগেছিল"-কাদের মনে কেন খটকা লেগেছিল?
উত্তর: এখানে 'আমাদের কয়েকজনের মনে' বলতে লেখক অজিতকৃন্ন বস্তু এবং তাঁর স্কুলের সহপাঠীদের কথা বোঝানো হয়েছে।
লেখক অজিতকৃষ্ণ বসু ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে যখন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র, সেই সময় চাঁদ মিয়া নামক এক অখ্যাত জাদুকর এক ঘণ্টা ধরে স্কুলের ছেলেদের জাদুর খেলা দেখিয়েছিলেন। জাদুকর চাঁদ মিয়া যে খেলা সেদিন দেখিয়েছিলেন তা হল, কীভাবে হাওয়া থেকে খুশিমতো টাকা ধরা যায়। এই ধরনের খেলা 'কৃপণের স্বপ্ন' বা 'হাওয়াই টাঁকশাল' নামে খ্যাত।
খেলা দেখিয়ে ছাত্রদের মনোরঞ্জনের জন্য সেদিন জাদুকরকে প্রায় দশ টাকা পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া হয়েছিল। সেই দশ টাকা পেয়ে জাদুকর যারপরনাই খুশি হওয়ায় লেখক খানিকটা অবাক হয়ে যান। তাঁর মনে হয়, যিনি হাওয়া থেকে নিজের মর্জিমাফিক টাকা ধরতে পারেন, দশ টাকা পাওয়ার পরে তাঁর এত আনন্দ কীভাবে আসে? একারণেই লেখক ও তাঁর বন্ধুদের মনে খটকা লাগে।
আরও পড়ো-