আধুনিক জীবন ও বিজ্ঞান বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “ আধুনিক জীবন ও বিজ্ঞান ”প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আধুনিক জীবন ও বিজ্ঞান বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Adhunika Jibone O Bigyan Class-10
আধুনিক জীবন ও বিজ্ঞান
ভূমিকা :
আধুনিক সভ্যতা বা আধুনিক জীবন মানুষের বহু শতাব্দীর ধারাবাহিক স্বপ্ন ও সাধনার ফসল। সভ্যতার এই তিলোত্তমা মূর্তি তৈরি করতে গিয়ে মানুষ তিল তিল করে দান করেছে তার প্রাণশক্তি। আর বিজ্ঞান, সে তো মানুষের নিরলস সাধনার ফসল। আদিম অরণ্যচারী অসহায় মানুষগুলো প্রকৃতির কাছে কত না অসহায় ছিল। তারা চাকার আবিষ্কার করেই সভ্যতার বিজয়রথের পথচলা শুরু করেছিল। ক্রমান্বয়ে, আগুন, লোহা, তামা, ব্রোঞ্জ ইত্যাদি যুগ পেরিয়ে মানুষ বিজ্ঞানকে তার সভ্যতার বিজয়রথের বাহন করে আজ এসে পৌঁছেছে আধুনিক জীবনের দ্বারপ্রান্তে। বিজ্ঞান আজ মানুষের কাছে আলাদীনের প্রদীপের মতো। বিজ্ঞানের ছোঁয়াতেই মানুষ আজ প্রভূত শক্তি ও সম্পদের অধিকারী।
মানব সভ্যতা ও বিজ্ঞান :
সভ্যতা একটি বহমান নদীর মতো, সভ্যতা সময়ের মতো চলমান, সে থেমে থাকে না-তাই তো আদিম, অরণ্যচারী মানুষগুলো বিবর্তনের পথ ধরে একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে এসে হাতে স্মার্ট ফোন নিয়েছে, সুপার সোনিক বিমানে চড়ছে, যে ঝড়-জল ভুকম্পের কাছে মানুষ অসহায় ছিল তার আগাম খবর সে জেনে নিচ্ছে। এসবই সম্ভব হয়েছে বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য। এককথায় বলা যায় আধুনিক জীবন ও বিজ্ঞান একই সত্তায় পরিণত হয়েছে।
বিজ্ঞানের সর্বত্রগামিতা :
আধুনিক যুগ বিজ্ঞানের যুগ, তাই সভ্য সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিজ্ঞান তার মঙ্গলময় হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষ বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে তার জীবনকে উপভোগ করছে, দৈনন্দিন জীবনকে আমরা কয়েকটি ভাগ করে নিই এবং সেই ক্ষেত্রগুলিতে বিজ্ঞানের অপরিহার্যতা বিচার করি তবে ব্যাপারটা সম্বন্ধে আলোচনার পথটা অনেক সহজ ও বোধগম্য হবে।
গৃহস্থালিতে বিজ্ঞান :
বর্তমানে গৃহস্থালিতে আধুনিক জিনিসপত্র ব্যবহারে রীতিমতো বিপ্লব এসেছে। বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে মানুষ তার জীবনযাত্রাকে যেমন একদিকে আরামপ্রদ করে তুলেছে তেমনি ব্যস্ত জীবনের সাথে তালমিলিয়ে চলতেও পারছে। খাবার বানানো থেকে খাবারকে সংরক্ষিত করে রাখা, প্রচন্ড গরম ও প্রচণ্ড শীত থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য যথাক্রমে ফ্রিজ, বাতানুকূল মেশিন, গিজার, রুম হিটারের ব্যবহার তো আজ ধনীর গৃহ থেকে মধ্যবিত্তের আঙিনাতেও পা রেখেছে। এ ছাড়া মাইক্রোওভেন ইত্যাদির মতো বহু আধুনিক সরঞ্জাম এই তালিকায় আছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান :
'বিজ্ঞান' মনে হয় আধুনিক জীবনের শিক্ষাক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে তার কল্যাণময় অবদানকে ছড়িয়ে দিয়েছে। পুঁথি পড়া, অনুমানের উপর জ্ঞান নির্ভরতা কাটিয়ে আজকের ছাত্র ইন্টারনেট, আধুনিক শিক্ষা উপকরণের উপর ভর করে সঠিক তথ্যনির্ভর জ্ঞানার্জনের পথে পা বাড়িয়েছে। কম্পিউটার, ক্যালকুলেটর, ইন্টারনেট ইত্যাদি ছাড়া আজকের পড়াশোনা প্রায় ভাবাই যায় না।
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিজ্ঞান :
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্যলাভ করেছে বিজ্ঞান। বর্তমানে কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপন থেকে শুরু করে বিভিন্ন রোগ নির্ণয় ইত্যাদির ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান তর্কাতীত। শল্যচিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর নির্ভর করে সাফল্যলাভ করেছে দারুণভাবে। এইট্স, ক্যানসার ইত্যাদির মতো ক্ষেত্রেও যথেষ্ট সফলতা এসেছে। জিন মানচিত্র বিজ্ঞানের আর এক অভিনব অবদান।
কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে :
বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে মানুষ যেমন শিল্পে বিপ্লব এনেছে তেমনি কৃষিক্ষেত্রেও মানুষই এনেছে 'সবুজ বিপ্লব'। ক্রমবর্ধমান মানুষের জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রে আধুনিক বিজ্ঞানের প্রয়োেগ অবশ্যম্ভাবী।
কুফল
অতিরিক্ত বিজ্ঞান নির্ভরতা ও বিজ্ঞানের প্রয়োগ কিন্তু মানুষকে যান্ত্রিক করে তুলছে এবং মানুষকে বিপথে ঠেলে দিচ্ছে। তাই মানুষকে সঠিকভাবে বিজ্ঞানমুখী করে তুলতে হবে। জনমানসে বিজ্ঞান চেতনার প্রসারে ছাত্রছাত্রীরা বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।
উপসংহার
আধুনিক জীবনে বিজ্ঞান অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে থাকলেও বিজ্ঞান এখনো কোথাও কোথাও তার উপস্থিতির প্রমাণ দিতে পারেনি। তাই তো সমাজে এখনো অনেক কুসংস্কার বিদ্যমান। বিজ্ঞানকে এখনো এগোতে হবে অনেক। আধুনিক জীবনে এখন আসছে অনেক আধুনিক রোগ, তাই তাদের মোকাবিলার জন্য বিজ্ঞানকেও আধুনিক হয়ে উঠতে হবে।
আরও পড়ুন-