প্রতিযোগিতার সুফল ও সংকট বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “প্রতিযোগিতার সুফল ও সংকট” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিযোগিতার সুফল ও সংকট বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Bangla prabandha Rachana Class-10
প্রতিযোগিতার সুফল ও সংকট
উচ্চতর জীবনের আকাঙ্ক্ষা :
আমরা সকলেই উন্নতি চাই। চাই উন্নততর জীবন। আমরা কেউ চাই ডাক্তার হতে, কেউ চাই ইঞ্জিনিয়ার হতে; আবার দাপুটে আইনজীবী হয়ে সফল জীবনও আমরা চাই। এইভাবে আমরা অনেকে হতে ইচ্ছুক সফল প্রকাশক। বড়ো ব্যবসায়ী হবার আকাঙ্ক্ষাও রয়েছে আমাদের মনে। চাই ডাকসাইটে অভিনেতার পেশাতে প্রবেশ করতে। ভালো এক ফুটবল খেলোয়াড় কিংবা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো ক্রিকেট খেলোয়াড় হতে কে না চায়। উন্নততর জীবন এইভাবেই প্রতিনিয়ত আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
প্রস্তুতি :
কিন্তু কেবল চাইলেই তো হয় না, এইসব সফল জীবনে পৌঁছাতে হলে প্রয়োজন হয় প্রস্তুতির। দরকার হয় কঠোর পরিশ্রম এবং অনুশীলনের। যেমন উন্নততর জীবন চাইছি, ঠিক সেই ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে ছাত্রজীবন থেকেই। এই প্রস্তুতি কখনও কোনো ফাঁকিকে বরদাস্ত করে না-এরপর রয়েছে প্রতিযোগিতা।
প্রতিযোগিতার প্রয়োজন :
উন্নততর জীবন আরও অনেকে চায়। সকলেরই লক্ষ্য সফলতার শীর্ষের দিকে। সফলতার শীর্ষে যে জায়গা রয়েছে, তা একই সঙ্গে বহু লোককে ঠাঁই দেয় না। প্রতিভাবান এবং কেবল সেরা ছাত্রদেরই সেখানে জায়গা হয়। সুতরাং নিজেকে সেরা এবং উপযুক্ত প্রমাণ করার জন্য প্রতিযোগিতায় নামতে হয়। কেননা, প্রার্থী যে অনেক।
প্রতিযোগিতা সর্বত্র :
এই প্রতিযোগিতা দেখা যায় সর্বত্র। ডাক্তার হতে গেলে হাঁটতে হবে প্রতিযোগিতার পথে। ইঞ্জিনিয়ার হতে গেলেও অথবা ওকালতি করতে হলেও নিজেকে সেরা প্রমাণিত করতে হবে এই কঠোর প্রতিযোগিতার ভেতর দিয়েই। সুতরাং কোনোভাবেই আমরা প্রতিযোগিতাকে এড়িয়ে যেতে পারি না, প্রতিযোগিতাই আমাদের কাছে এনে দেয় সুফল।
টিকে থাকার লড়াই :
ডারউইন সাহেব ছিলেন একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী। তিনি 'এভোলিউসন' তত্ত্বের আবিষ্কারক। তিনি এই তত্ত্বের ভেতর দিয়ে দেখিয়েছেন যে জীবজগতে প্রতিনিয়ত টিকে থাকবার জন্য চলছে প্রতিযোগিতা। শুধু টিকে থাকবার প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতার নাম 'Struggle for existance'; যারা প্রতিযোগিতায় সফল হয়, তারাই টিকে থাকে। তবে দেখা যায় যা, তা হল 'Survival of the fittest'। যারা প্রতিযেগিতায় দাঁড়াতে পারে না, তারা জীবজগৎ থেকে লুপ্ত হয়ে যায়। তাদের বিয়োগ ঠেকানো যায় না। তাহলে দেখা যাচ্ছে, প্রতিযোগিতার ব্যর্থতা ভারি সংকটজনক।
ব্যর্থতা :
উন্নততর জীবনের জন্য আমরা যেভাবে প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতায় শামিল হচ্ছি, এখানেও সাফল্যের সঙ্গে রয়েছে ব্যর্থতা। প্রতিযোগিতায় যারা এঁটে উঠতে পারে না, তাদের দিকে আমরা তাকিয়ে দেখি না তারা যে সংকটে পড়ে। সেই সংকটকে যতখানি সহানুভূতির সঙ্গে দেখা দরকার, তা আমরা দেখি না। পিছিয়ে পড়া লোকদের দিকে কে তাকিয়ে দেখে? প্রতিযোগিতার সুফল যারা লাভ করে, তাদের বিজয়মালা পরিয়ে দিয়ে আমরা গর্ব অনুভব করি। বলা বাহুল্য, ব্যর্থ মানুষদের প্রতি এই ব্যবহার কিন্তু সমর্থনযোগ্য নয়।
ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে :
প্রতিযোগিতায় ব্যর্থ মানুষরা কিন্তু সবদিক থেকে বিফল হতে পারে না। তাদের ব্যর্থতা ও সংকট কাটাবার জন্য জীবনের আরও অনেক পথ খুলে দেওয়া যেতে পারে। যে ডাক্তার হতে পারল না, সে পরে একজন কৃষক হতে পারে। যে মানুষটি সফল আইনজীবী হতে পারল না, সে পারে একজন দক্ষ শ্রমিকের সফলতা লাভ করতে। সবাই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো ক্রিকেট খেলোয়াড় হতে পারে না, কিন্তু তার সফল এক দোকানি হতে অসুবিধা কোথায়? অর্থাৎ 'জীবনের ধন কোথাও যায় না ফেলা'।
উপসংহার :
প্রতিযোগিতার সুফলে যেমন রাশি রাশি পুষ্পস্তবক লাভ করা যায়, তেমনি প্রতিযোগিতার সংকট কাটিয়ে সুস্থ জীবন পেলে ফুলবাগিচায় অহেতুক ফুল ফোটানো যায় এই উদাহরণ অনেক। তাই উপসংহারে বলা যায়, ব্যর্থতাকে অনিবার্য পরিণাম না ভেবে বারবার চেষ্টা করে ব্যর্থতার সংকট কাটিয়ে পৌঁছাতে হবে সফল জীবনে।
আরও পড়ুন-