নোবেলজয়ী কৈলাস সত্যার্থী ও মালালা ইউসুফজাই বাংলা রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “নোবেলজয়ী কৈলাস সত্যার্থী ও মালালা ইউসুফজাই ” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
নোবেলজয়ী কৈলাস সত্যার্থী ও মালালা ইউসুফজাই বাংলা রচনা || Bangla Rachana Class-X
নোবেলজয়ী কৈলাস সত্যার্থী ও মালালা ইউসুফজাই
ভূমিকা :
যে সমস্ত কাজ বা কৃতিত্ব স্বীকৃতির যোগ্য, তা পুরস্কৃত হলে প্রাপক যেমন গৌরবান্বিত হন, তেমনই তাঁর মনে সঞ্চারিত হয় আরও মহৎ কাজের প্রেরণা, উদ্দীপনা ও উৎসাহ। বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিগুলির মধ্যে আজ 'নোবেল' পুরস্কার অন্যতম। বর্তমানে সাহিত্য, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়গুলি ছাড়াও সামাজিক কল্যাণের সঙ্গে যুক্ত বিশ্বশান্তির স্মারক-স্বরূপ যে নোবেল পুরস্কারটি দেওয়া হয়, তা বিশ্বজুড়ে মানবধর্মের ও মানবকল্যাণের বার্তাবহ।
এ-দেশ থেকে ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে মাদার টেরেসা প্রথম বিশ্বশান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তার ঠিক ৩৫ বছর পর মাদারের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে ভারতীয় নাগরিক কৈলাস সত্যার্থী এবার শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন। তবে তাঁর সঙ্গে যুগ্মভাবে নোবেল পেয়েছেন সাহসিনী মালালা ইউসুফজাই। তিনি পাকিস্তানের নাগরিক। কৈলাস ও মালালা এঁরা দুজনেই অজ্ঞানতার অন্ধকারকে দূরে সরিয়ে আলোর পথে হেঁটেছেন এবং এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করেছেন গোটা বিশ্বকে।
কৈলাস সত্যার্থীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় :
১৯৫৪ সালে মধ্যপ্রদেশের বিদিশায় কৈলাস সত্যার্থীর জন্ম। তিনি পেশায় ছিলেন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। বর্তমানে দিল্লির বাসিন্দা এই মানুষটি নিতান্ত কিশোর বয়স থেকেই দরদি আর সহমর্মী মন ও মননের অধিকারী। ছাত্র জীবনেই তিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ১৯৯০ সাল থেকে তিনি শিশুশ্রম প্রথা বিরোধী আন্দোলন আরম্ভ করেন। 'বুক ব্যাংক' তৈরি করে গরিব শিশুদের মধ্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করা তাঁর এক অন্যতম কীর্তি। 'বচপন (শৈশব) বাঁচাও' আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি ৮০,০০০ শিশুশ্রমিককে ফিরিয়ে এনেছেন শিক্ষার মূলস্রোতে ও স্বাভাবিক জীবনে। শিশুদের অধিকার সংক্রান্ত জাতীয় আন্তর্জাতিক আইন ও সনদ প্রণয়নেও তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছেন।
গোটা বিশ্বজুড়েই শিশুশ্রমপ্রথা এক ভয়াবহ সমস্যা। ভারতও তার ব্যাতিক্রম নয়। কৈলাস সত্যার্থী তাঁর নিরন্তর প্রচেষ্টার মাধ্যমে শিশুশ্রম প্রথার বিলোপসাধনে সক্রিয়। তিনি গান্ধিজির আন্দোলনের অনুকরণে বিশ্বাসী। তাই যাবতীয় হিংসা এবং বিদ্বেষকে দূরে সরিয়ে রেখে মানবাত্মার অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি দৃঢ় সংকল্প। বিশ্বে ১৭ কোটি শিশুশ্রমিকের মধ্যে প্রায় ১৪ কোটির বাস এদেশে। তাই তাঁর নোবেল প্রাপ্তির মধ্যে দিয়ে প্রতিফলিত হয় কোটি কোটি শিশুর মুক্তির আহ্বান ধ্বনি।
শান্তি নোবেল ২০১৪-এর তাৎপর্য :
কিশোরী মালালা পাকিস্তানের বাসিন্দা। ১৯৪৭ সালে অখণ্ড ভারত ভেঙে পাকিস্তানের জন্ম। আজও এই দুটি দেশ বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলির মধ্যে অন্যতম। আজও এই দুটি দেশের প্রধান সমস্যা নিরক্ষরতা, অপুষ্টি, সন্ত্রাসবাদ এবং উগ্রপন্থী কার্যকলাপ। কৈলাস সত্যার্থী লড়াই করেছেন শিশুশ্রম প্রথার বিরুদ্ধে। আর মালালা লড়াই করেছেন এক অনমনীয় নারী হিসেবে সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে। নারী শিক্ষার প্রসারে মালালা নিরন্তর সংগ্রামে বিশ্বাসী। মাত্র ১৭ বছর বয়সে নোবেল পুরস্কার লাভ করে তিনি সমগ্র বিশ্বে অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন। অকুতোভয় মালালা সারা পৃথিবীর বিপন্ন মহিলাদের কাছে আলোর দিশারী। বিশ্বশান্তির পক্ষে উভয়ের কর্মপন্থাই দৃষ্টান্তস্বরূপ। তাই 'হিংসায় উন্মত্ত' বর্তমান পৃথিবীতে এঁদের দু'জনের নোবেলপ্রাপ্তি এক বিশেষ তাৎপর্যবাহী ঘটনা।
উপসংহার :
ভারত চিরকালই শান্তির পূজারি। সর্বপ্রকার হিংসামুক্ত পৃথিবী গড়ার অন্যতম কারিগর ও আহ্বায়ক আমাদের দেশ ভারতবর্ষ। সত্যার্থীর নোবেলপ্রাপ্তি প্রমাণ করে ভারতের অতীত ঐতিহ্য এখনও বিনষ্ট হয়নি। অহিংসা ও শান্তির সনাতন মানবতার প্রতীক কৈলাস সত্যার্থী এবং মালালা ইউসুফজাই যেন প্রজ্ঞার সেই প্রকৃত স্বরূপকেই জগৎবাসীর কাছে নতুন করে তুলে ধরে।
আরও পড়ুন-