প্রযুক্তির জয়গান বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “ প্রযুক্তির জয়গান ” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
প্রযুক্তির জয়গান বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Bengali Bengali Grammar Class-10
প্রযুক্তির জয়গান বাংলা প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা :
আমরা যাকে বলি 'প্রযুক্তি' তার ইংরেজি শব্দটি হল 'টেকনোলজি'। 'টেকনোলজি' শব্দটি আমরা ইদানীং প্রায়শই শুনতে পাই। এর সঙ্গে 'সায়েন্স' অর্থাৎ 'বিজ্ঞান' শব্দটি জুড়ে আছে। পুরোপুরি শব্দটি হল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। এ দুটি হল পরিপুরক শব্দ এবং কাজের দিক থেকেও পরিপূরক। একটিকে বাদ দিলে, অপরটি অকেজো।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি :
পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার মাধ্যমে আহরিত সুসংবদ্ধ বিদ্যা বা জ্ঞানকে আমরা বলি 'বিজ্ঞান'। অজানাকে জানা এবং বিশ্বের তাবৎ বিষয়ে কৌতূহল প্রকাশ করে তাকে জেনে নেওয়া হল বিজ্ঞানের কাজ। আর বিজ্ঞানের কার্যকরী প্রয়োগবিদ্যা হল প্রযুক্তি। আইজ্যাক নিউটনের চোখের সামনে একটি আপেল গাছ থেকে খসে মাটিতে পড়ল।
ফলটি মাটিতে পড়ল কেন, আকাশে উড়ে গেল না কেন?-নিউটনের মনের এই জিজ্ঞাসা ও কৌতূহল থেকে আবিষ্কৃত হল পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি। এই মাধ্যাকর্ষণের ফলে সবকিছু মাটিতে নেমে আসে, কিন্তু পাখি আকাশে ওড়ে। কিন্তু তা কী করে? আবিষ্কৃত হয় আকাশে উড়ে চলার তত্ত্ব এবং বিজ্ঞানের এই তত্ত্বটি আবিষ্কৃত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বাস্তবে রূপায়ণ করে দেখিয়ে দেয় প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির কল্যাণে আকাশে বেলুন ওড়ে, ওড়ে বিমান। শুরু হয় প্রযুক্তির জয়যাত্রা।
প্রযুক্তি ও মানবসভ্যতার উন্নয়ন :
মানবসভ্যতার যে অভাবিত উন্নয়ন ও অগ্রগতি, তা প্রযুক্তি ছাড়া সম্ভব হত না। প্রযুক্তির দৌলতেই নানান ধরনের যন্ত্রের আবিষ্কার। জল-স্থল-অন্তরীক্ষে মানুষের অভিযান সম্ভব হয়েছে এই প্রযুক্তির জন্য।
প্রযুক্তির নানাদিক :
আকাশে যে উড়োজাহাজ উড়তে দেখছি, তা হল প্রযুক্তির দান। এই উড়োজাহাজের কল্যাণে পৃথিবী আজ আমাদের হাতের মুঠোয়। আকাশ ছাড়িয়ে আমরা যে মহাকাশে পাড়ি দিচ্ছি, তাও এই প্রযুক্তির দান। প্রযুক্তির ওপর ভর করে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে চলেছি আমরা। প্রযুক্তির বলে মহাকাশ স্টেশন তৈরি হয়েছে, সেখান থেকে গ্রহে-গ্রহান্তরে পাড়ি জমাচ্ছে উন্নততর মহাকাশযান। প্রযুক্তির সৃষ্টি উপগ্রহগুলি মহাকাশে থেকে পৃথিবী ও মহাকাশের নানা সংবাদ দিয়ে চলেছে। টেলি-যোগাযোগ, দূরদর্শন সম্প্রচার প্রভৃতিও সম্ভব হচ্ছে প্রযুক্তি-নির্ভর উপগ্রহের মাধ্যমে।
ব্যবহারিক প্রয়োেগ :
বড়ো বড়ো জাহাজ বানিয়ে আমরা যে সমুদ্রপথে দেশদেশান্তরে পাড়ি দিচ্ছি, তাও হল এই প্রযুক্তির জন্য। এখন জাহাজ চলে পেট্রোল-ডিজেলে। প্রযুক্তিবিদরা আণবিক শক্তিকেও জাহাজ চালানোর কাজে লাগাচ্ছেন। ট্রেন, মোটরগাড়ি, বাস ইত্যাদি যন্ত্রচালিত যান প্রযুক্তিবিদ্যার দান।
প্রযুক্তির জয়যাত্রা :
বিজ্ঞানকে অবলম্বন করে প্রযুক্তিবিদরা তৈরি করেছেন প্রশস্ত রাস্তা, নতুন ধরনের নগর, নতুন ধরনের আকাশ-ছোঁয়া বাড়ি। ভূগর্ভ দিয়েও রাস্তা ও রেলপথ বানানো হচ্ছে। এর মূলে রয়েছে প্রযুক্তি।
কম্পিউটার প্রযুক্তি :
টেলিফোন-টেলিগ্রাফ ইত্যাদিকে ছাড়িয়ে বর্তমানে আমাদের হাতে এসে গেছে 'মোবাইল ফোন'। এসে গেছে কম্পিউটার। এই কম্পিউটার টেকনোলোজির মাধ্যমে আমরা মহাকাশেও বার্তা পাঠাচ্ছি এবং মহাকাশ-যানের প্রতিটি ইতিকর্তব্য নিয়ন্ত্রণ করছি। প্রযুক্তির কল্যাণে এইসব অসম্ভব কাজ সম্ভব হচ্ছে।
চিকিৎসায় প্রযুক্তি :
চিকিৎসা জগতেও বিপ্লব এনেছে এইসব প্রযুক্তি। এক্সরে দিয়ে যার শুরু হয়েছিল, এখন তাকে ছাড়িয়ে আমরা অনেক দূর চলে এসেছি। যন্ত্রের সাহায্যে এখন চলেছে চোখ, ফুসফুস, লিভার,কিডনি প্রভৃতির অপারেশনও। চলছে অবিশ্বাস্য সব কাণ্ড।
উপসংহার :
বিজ্ঞান চলছে আগে আগে, প্রযুক্তি চলছে তার পিছু পিছু। আমাদের এই পৃথিবীতে এমন কিছু নেই, যেখানে প্রযুক্তির হাত নেই। তাকে বাদ দিয়ে যেন কিছুই ভাবা যায় না।
আরও পড়ুন-