একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি বিজ্ঞানী বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি বিজ্ঞানী”প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি বিজ্ঞানী বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Bengali Bengali Grammar Class-10
একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি বিজ্ঞানী
ভূমিকা :
যে সমস্ত প্রবাদপ্রতিম বৈজ্ঞানিক ভারতবর্ষকে জগৎ সভ্যতায় শ্রেষ্ঠ আসন এনে দিয়েছেন, যাঁদের গৌরবোজ্জ্বল কীর্তিতে আজও আমরা গর্বিত বোধ করি তাঁদেরই একজন হলেন বাঙালি বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু। গাছেরা উত্তেজনায় সাড়া দেয় এই বৈজ্ঞানিক সত্য আবিষ্কার করে তিনি যখন সারা বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলেন, তখন গোটা পশ্চিমি দুনিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। জগদীশচন্দ্রের মনীষার স্পর্শে বাঙালির বৈজ্ঞানিক মনন পেয়েছিল সার্বিক স্বীকৃতি।
জন্ম ও শিক্ষা :
জগদীশচন্দ্র বসুর জন্ম ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ৩০ নভেম্বর। জন্মস্থান ময়মনসিংহ হলেও, তাঁর আদি বাড়ি ঢাকা জেলার রাড়িখাল গ্রাম। পিতা ভগবানচন্দ্র বসু ছিলেন ডেপুটি কালেক্টর। ফরিদপুর শহরের ঈশান বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করে তিনি কলকাতায় এসে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভরতি হন। এরপর এখান থেকেই ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। মেধাবী ছাত্র জগদীশচন্দ্র কেমব্রিজ থেকে বিএ এবং লন্ডন থেকে বিএসসি পাস করেন। এরপর দেশে ফিরে ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু কর্মরত অবস্থায় তিনি তিন বছর বেতন গ্রহণ করেননি। ভারতীয় এবং শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে বেতন কাঠামোগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে এই ছিল তাঁর আশ্চর্য প্রতিবাদ।
আবিষ্কার :
জগদীশচন্দ্র বসুর সমগ্র গবেষণা ধারাকে তিনটি পর্যায়ে বিন্যস্ত করা যায়। প্রথম- বিদ্যুৎ, দ্বিতীয়- চুম্বক তরঙ্গ সংক্রান্ত গবেষণা, তৃতীয়-উদ্ভিদ ও প্রাণীর পেশির মধ্যে তুলনামূলক শারীরবিদ্যা বিষয়ক গবেষণা। প্রাথমিকভাবে জগদীশচন্দ্রই বিনা তারে বার্তা প্রেরণের উপায় আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি এক মাইল দূরত্বের মধ্যে বেতার বার্তা পাঠানোর পরীক্ষানিরীক্ষায় সফল হয়েছিলেন, কিন্তু পৃথিবীতে ইতালির বিজ্ঞানি মার্কনি বেতার যন্ত্রের আবিষ্কারক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন। কারণ জগদীশচন্দ্র ইউরোপে গিয়ে নিজের আবিষ্কার সর্বসমক্ষে দেখানোর আগেই মার্কনি দু-মাইল দূরে বিনা তারে সংবাদ পাঠানোর উপায় উদ্ভাবন করেন। তাই এই আবিষ্কারের সঙ্গে তাঁর নাম যুক্ত হতে পারল না।
১৯০৫ থেকে ১৯২৮ সালে পর্যন্ত সময়কাল জগদীশচন্দ্রের জীবনে বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। তিনি অধ্যাপনা থেকে অবসর নিয়ে ১৯১৭ সালের ৩০ নভেম্বর বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২০ সালে তিনি ইংল্যান্ডের রয়্যাল সোসাইটির সদস্য হন। ১৯২৬ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত লিগ অফ নেশন্সের ইন্টেলেকচুয়াল কো-অপারেশন কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯২৭ সালে তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের সভাপতি এবং ১৯২৮ সালে ভিয়েনার অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স-এর বৈদেশিক - সদস্য নির্বাচিত হন। এ ছাড়া সেই সময় তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদেরও সভাপতি ছিলেন।
সাহিত্য প্রীতি :
বিজ্ঞান গবেষণার সঙ্গে জগদীশচন্দ্র বসু সাহিত্য সৃষ্টিতেও অসামান্য কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ও জগদীশচন্দ্রের পারস্পরিক চিঠিগুলি বিজ্ঞানসাধক ও এক সাহিত্যসাধকের নিবিড় বন্ধুত্বের সম্পর্ক যেমন প্রকাশ করে, তেমনি জগদীশচন্দ্রের সাহিত্যপ্রীতির দিকটিও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। 'অব্যক্ত' গ্রন্থে সাহিত্যস্রষ্টা জগদীশচন্দ্রের লেখকমনের পরিচয় মেলে। তাঁর লেখা ভ্রমণকাহিনিগুলিতে অন্য এক জগদীশচন্দ্রের পরিচয় পাঠকের সামনে এসে উপস্থিত হয়।
উপসংহার :
বর্তমানে বাংলা ভাষায় যে উন্নততর জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার প্রবণতা দেখা দিয়েছে, আচার্য জগদীশচন্দ্রের বিজ্ঞান গবেষণার মধ্যেই তাঁর প্রকৃত সূত্রপাত ঘটেছিল। তিনি এক অব্যক্ত জগতের প্রাণের বাণী সমগ্র পৃথিবীর সামনে উন্মোচন করেছিলেন।
আরও পড়ুন-