ভূমিকম্প বিধ্বস্ত নেপাল বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “ভূমিকম্প বিধ্বস্ত নেপাল” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ভূমিকম্প বিধ্বস্ত নেপাল বাংলা প্রবন্ধ রচনা|| Bengali Bengali Grammar Class-x
ভূমিকম্প বিধ্বস্ত নেপাল
ভূমিকা :
প্রকৃতি যেমন শুভদা, তেমনই সে ভয়দাও। অর্থাৎ এই বিশ্বপ্রকৃতির কল্যাণীরূপের মহিমায় বসুন্ধরা যেমন সুজলা-সুফলা-শ্যামলিমায় ভরে ওঠে, তেমনি তার সংহারক রুদ্রাণীরূপের প্রচণ্ডতায় নেমে আসে ধ্বংস-প্রলয় ও বিভীষিকা। প্রতি মুহূর্তে সুন্দর আর ভয় পাশাপাশি বাস করে এখানে। এমনই এক ভয়ের উৎস ভূমিকম্প। যে গোলাকার শান্ত পৃথিবীর ছবি আমরা বইয়ে দেখি, বাস্তবে সে অত শান্ত নয়, অত নিরাপদও নয়। এই প্রাকৃতিক ধ্বংসলীলা পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকেই তার নিত্য সহচর।
ভূমিকম্প এমনই এক প্রাকৃতিক ভয়াবহতা যা এক লহমায় মানুষের তৈরি সভ্যতার বনেদকে সম্পূর্ণ ওলট-পালট করে দেয়। এমনই এক ভয়ংকর ভূমিকম্পের সাক্ষী হল সারা পৃথিবী, গত ২৫ এপ্রিল দুপুরবেলা। তারপর টানা কয়েক দিন ধরে চলল তার আফটার শক। এই ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ভারতের প্রতিবেশী দেশ নেপাল। সেখানে ৭-৮ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিল মাত্র মিনিট খানেকের এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়। রেহাই পায়নি লাগোয়া দেশ ভারতও। নেপালের বিরাট মাপের ভূকম্পনে ভারতেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম নয়।
ভূমিকম্পের তীব্রতা ও ভয়াবহতা :
ভূকম্পনের তাণ্ডবে প্রায় তছনছ হয়ে যায় হিমালয় দুহিতা নেপাল। স্থানীয় সময় বেলা দেশ ১১টা ৫৬ মিনিট। প্রচন্ড ঝাঁকুনিতে কেঁপে ওঠে গোটা দেশ। এরপরেও বেশ কয়েক দিন ধরে বার কয়েক কেঁপে ওঠে গোটা দেশ। কম্পনের উৎসস্থল কাঠমাণ্ডু থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে লামজুং। ভূমিকম্পের আঁচ পড়ে প্রতিবেশী পাঁচটি দেশ-ভারত-সহ পাকিস্তান, বাংলাদেশ, চিন ও ভুটানে। কম্পনের জেরে নেপালের বিস্তীর্ণ এলাকা মুহূর্তে পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় যোগাযোগ ব্যবস্থা। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঘন বসতিপূর্ণ কাঠমাণ্ডু শহর। রাজধানীর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়। শতাব্দীপ্রাচীন মন্দির, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা পাওয়া কাঠমান্ডুর বসন্তপুরে দরবার স্কোয়ার সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
শহরের মুখ্য আকর্ষণ ৬০ মিটার উঁচু ধারার মিনারটিও সম্পূর্ণ মিশে যায়। এই মিনারের ন'তলায় ছিল একটি ঝুলবারান্দা। ২১৩টি সিঁড়ি বেয়ে এখান থেকে গোটা শহরকে দেখা যেত সুন্দরভাবে। স্বাভাবিকভাবেই এটি ছিল পর্যটকদের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু, এদিন কম্পনের জেরে গোটা মিনারটি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে, সেই সঙ্গে ভেঙে পড়ে শহরের প্রচুর বাড়ি। বেশ কিছু রাস্তা ও প্রাচীরে দেখা দেয় চওড়া গভীর ফাটল। কম্পন তীব্র হতেই আতঙ্কে মানুষ বাড়ি ছেড়ে নেমে আসে রাস্তায়। নেপালের বহু অঞ্চল থেকে ধ্বংস আর মৃত্যুর খবর আসতে থাকে। খোলা হয় বহু ত্রাণশিবির।
ত্রাণকার্য ও সমস্যার উৎসমুখ :
প্রথম দিনই ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ভারতীয় বায়ুসেনার সি-১৩০ সুপার হারকিউলিস কাঠমান্ডুতে পৌঁছায়। পরে অবশ্য আরও ত্রাণ পাঠানো হয়। পাঠানো হয় চিকিৎসার সামগ্রী, ওষুধপত্র। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ত্রাণসামগ্রী পাঠাতে শুরু করে। বহু দেশ থেকে স্বেচ্ছাসেবকরা এসে দুর্গতদের সাহায্যার্থে ঝাঁপিয়ে পড়েন। নেপালের মানুষরা প্রিয়জনদের হারানোর বিয়োগব্যথা বুকে নিয়েও ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকা মানুষদের উদ্ধার কাজে যোগ দেয়। অথচ হিমালয়ের কোল ঘেঁষে বিস্তীর্ণ এলাকা যে ভূমিকম্পপ্রবণ, তা কিন্তু বিজ্ঞানীরা অনেক দিন ধরেই বলে আসছেন।
কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই অধ্যাপক রজার বিলহাম এবং পিটার মোলনার আর বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের বিজ্ঞানী ভি. কে. গৌড় এই এলাকার ভূস্তর এবং বিপদের আশঙ্কা নিয়ে বহুকাল ধরে গবেষণা করছেন। এই বিপদের সম্ভাবনার কথা জানা সত্ত্বেও এই অঞ্চলের মানুষ তা নিয়ে কতটা উদাসীন, সে কথাও এই বিজ্ঞানীরা তাঁদের গবেষণাপত্রে স্পষ্টভাবে বলেছেন। তবে শুধু মানুষকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। দোষ দিতে হলে সে দেশের সরকারকেও দিতে হয়। তবে এটাও ঠিক, মাত্র কয়েক বছর হল রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে প্রবেশ করা এই ছোট্ট দেশের সরকার এ সব নিয়ে ভাবার খুব একটা সময়ও পায়নি।
উপসংহার :
বিজ্ঞানীরা বলেন কাঠমান্ডুর ৭০ কিমি উত্তর-পশ্চিমে ভারতীয় প্লেটের সঙ্গে ইউরেশীয় প্লেটের সংঘর্ষই হল ভূমিকম্পের প্রথম কারণ। ধাক্কার শক্তি ভূকম্পন মাপার রিখটার স্কেলে ৭.৯। বিজ্ঞানীরা বলেন, ভূকম্পপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করা গেলেও, কবে, কখন, কোথায় ভূমিকম্প হবে তা কখনোই আগাম বলা সম্ভব নয়। ভূমিকম্প থেকে রক্ষা পাওয়ার একটাই পথ। তা হল, ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার নির্মাণ কাজ যত দূর সম্ভব বিজ্ঞানসম্মতভাবে করা। তা হলে এই যে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু একটা ভূমিকম্পে হয়, সেই সংখ্যাটা অনেকটাই কমিয়ে ফেলা সম্ভব। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সরকারি ঔদাসীন্য, অতিরিক্ত লোভ এবং অজ্ঞতা, এই কাজে প্রধান বাধা হয়ে ওঠে। তাই এই ব্যাপারে শুধু সরকার সচেতন হলে হবে না, সাধারণ মানুকেও সচেতন হতে হবে।
আরও পড়ুন-