জনসাধারণের মধ্যে বিজ্ঞানচেতনার প্রসার প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “জনসাধারণের মধ্যে বিজ্ঞানচেতনার প্রসার” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
জনসাধারণের মধ্যে বিজ্ঞানচেতনার প্রসার প্রবন্ধ রচনা || Bengali Class-10 Bengali Grammar
জনসাধারণের মধ্যে বিজ্ঞানচেতনার প্রসার প্রবন্ধ রচনা
"বিজ্ঞান চায় সবার মাঝে প্রাণের কথা বলতে, অন্ধ আবেগ সরিয়ে দিয়ে আলোর পথে চলতে।”
ভূমিকা :
একটি আলোক শিখা যেমন অন্ধকার কক্ষকে আলোকিত করে, ঠিক তেমন জীবনকে আলোকিত করে তোলে বিজ্ঞানের আলোক শিখা। এই আলোক শিখাই হল বিজ্ঞানচেতনা যা মানুষকে করেছে যুক্তিবাদী, জীবনকে করেছে বাস্তবমুখী। এ-যুগে বিজ্ঞান অন্ধজনে দিয়েছে আলো, মৃতজনে দিয়েছে প্রাণ।
জীবনে নানা ধরনের অসুখ বিজ্ঞানচেতনার অভাব :
অজ্ঞতা, অশিক্ষা, কুসংস্কারের অন্ধত্ব আমাদের জীবনকে যে কতভাবে বঞ্চিত করেছে তার উদাহরণ অনেক। আমাদের জীবনের পদে পদে রয়েছে নানা ধরনের অসুখবিসুখ-কলেরা, বসন্ত, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, কালাজ্বর ইত্যাদি। গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যেত এইসব অসুখে। আমাদের অজ্ঞতা ও বিজ্ঞানচেতনার মি থেকে বাঁচামরা এগুলিকে ভগবানের রুদ্র থেকে বাঁচতে পুজো দিতাম 'ওলাবিবির'। বসন্তের হাত থেকে রেহাই পেতে 'মা শীতলার' শরণ নিতাম।
দুরারোগ্য অসুখ সারানোর জন্য ব্যবহার করতাম কবচ, তাবিজ, ফকিরের জল-পড়া, পিরের শিরনি এবং মা কালীর কাছে মানত করতাম পাঁঠা বলিদানের। দৌড়াতাম ঠাকুরের কাছে একটুখানি চরণামৃতের জন্য। সাপের কামড় থেকে বাঁচতে 'মা মনসা'র কাছে গিয়ে ধরনা দিতাম। শনি ঠাকুরেরও আমরা শরণ নিতাম গ্রহশান্তির জন্য। কিন্তু পরে যখন বিজ্ঞানের ক্রমোন্নতিতে চিকিৎসাশাস্ত্রের উন্নতি হল, তখন দেখা গেল এসবই ভ্রান্ত ধারণা। রোগের প্রতিকার ওষুধে হয়, ওসবে নয়।
ভয় ও কুসংস্কার থেকে রেহাই পেতে হলে :
বিজ্ঞানচেতনা আমাদের কেবল শারীরিক অসুখ থেকে বাঁচায় না, নানারকম মানসিক রোগেরও নিরাময় ঘটিয়ে থাকে। আমাদের মনে জাঁকিয়ে বসে আছে নানাধরনের অলৌকিক বিশ্বাস, কুসংস্কার। আমাদের অনেকেই ভূতপ্রেত বিশ্বাস করে। এখনও ডাইনি-তন্ত্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আমাদের দেশে মন্ত্রতন্ত্র, ঝাড়ফুঁকে আজও অনেকে বিশ্বাস করেন। বিশ্বাস করেন মারণ-উচাটন ইত্যাদি প্রক্রিয়ায়। কালো বিড়াল, হাঁচি-টিকটিকি, নবজাত শিশুকে পেঁচোয় পাওয়া ইত্যাদিকে আমরা অশুভ ব্যাপার বলে চিহ্নিত করে থাকি।
হাই উঠলে তুড়ি দিই, বা ক্রশ আঁকা হয়, যাতে শয়তান না মুখের ভেতর ঢুকে পড়ে। বাঘের হাতে মৃত্যুকে এড়াবার জন্য আজও সুন্দরবন অঞ্চলে 'বনবিবি'র পুজো দেওয়া হয়। এগুলি সব কুসংস্কার। 'It is the undefined source of fear and hope which is the genesis of superstition'। এইসব কুসংস্কার থেকে মুক্তির জন্য চাই বিজ্ঞানসচেতনতা অর্থাৎ যুক্তিবাদী বিচারবোধ। বিজ্ঞানচেতনা হল যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে সত্যের প্রতিষ্ঠা। যা মানছি, করছি, বিশ্বাস করছি-সে সবের পিছনে কোনো যুক্তিসংগত সত্য আছে কিনা তা বুঝতে হবে। যুক্তির বহির্ভূত কোনো কিছুকে মেনে নেওয়া মানে অন্ধবিশ্বাসের শিকার হওয়া এ কথা বুঝতে হবে।
বিজ্ঞানচেতনা ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার :
বিজ্ঞানচেতনা আমাদের শিক্ষাকে কতখানি পরিপূর্ণতা এনে দিতে পারে, তার প্রমাণ বিশেষভাবে পাওয়া যায় চিকিৎসা বিজ্ঞানে, মহাকাশ গবেষণায়, শস্য উৎপাদনে, কৃষিপণ্য সংরক্ষণে, সমুদ্র-গবেষণায়, নতুন নতুন যানবাহনের উৎপাদনে। চিকিৎসা এখন সর্বৈব বিজ্ঞান-নির্ভর। মানবদেহের সবরকম জটিল ব্যাধিকে যন্ত্র মুহূর্তে উদ্ঘাটিত করে চিকিৎসার পথ বাতলে দিচ্ছে। মহাকাশ এখন আমাদের কাছে অনেকটাই রহস্যমুক্ত। কৃষি ও শস্য উৎপাদনে আমাদের বিজ্ঞানচেতনা বিপ্লব এনে দিয়েছে। গভীর সমুদ্র আর এখন আমাদের কাছে অতখানি গভীর নয়। আমাদের বিজ্ঞানচেতনায় সপ্তাত শিক্ষা গোটা পৃথিবীটাকেই এনে দিয়েছে হাতের মুঠোর ভেতর। টেলিফোন, টেলিভিশন, ইন্টারনেট এবং নতুন নতুন যানবাহনের আবিষ্কার এই বিশাল পৃথিবীটাকে খুবই ছোটো করে নিয়ে এসেছে। বিজ্ঞানচেতনা একই সঙ্গে আমাদের সংস্কার ভেঙেছে এবং শিক্ষার উৎকর্ষ সাধিত করেছে।
উপসংহার :
বিজ্ঞানচেতনা আমাদের মানবসভ্যতা বিকাশের চাবিকাঠি। কুসংস্কার, অজ্ঞতা, ভয় এবং নানা ধরনের অলৌকিক নির্ভরতা আমাদের নানাভাবে ক্ষতি করে থাকে। বিজ্ঞানচেতনা থাকলে এইসব ব্যাপারগুলি মুহূর্তে কেটে যায়। আগুনের আবিষ্কার যেমন একদিন মানুষকে বন্যপশুর হাত থেকে বাঁচিয়েছিল, শিখিয়েছিল অন্ধকারকে দূর করতে, শিখিয়েছিল লোহা-পিটিয়ে অস্ত্র বানাতে, তেমনি এই বিজ্ঞানচেতনা প্রতি মুহূর্তে অন্ধত্ব ও অজ্ঞতার অবসান ঘটিয়েছে।