প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ. পি. জে. আব্দুল কালাম-এক অনন্য ব্যক্তিত্ব বাংলা রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ. পি. জে. আব্দুল কালাম-এক অনন্য ব্যক্তিত্ব” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ. পি. জে. আব্দুল কালাম-এক অনন্য ব্যক্তিত্ব বাংলা রচনা || Bengali Class-12
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ. পি. জে. আব্দুল কালাম-এক অনন্য ব্যক্তিত্ব
ভূমিকা :
এ মানবজীবন নশ্বর। কিন্তু মানবজীবনের মূল্য তাঁর আয়ুর পরিধিতে বিচার্য নয়। মানুষের কাজ ও কৃতিত্বের নিরিখেই তাঁর চিরজীবিতা নির্ভর করে। তাঁর ব্যক্তিত্ব, চিন্তাভাবনা ও কর্মকান্ডের অনন্যতাই সেই ব্যক্তিমানুষটিকে অবিস্মরণীয় এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় করে তোলে। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ.পি.জে আব্দুল কালাম এমনই একজন মানুষ। তিনি সদ্য প্রয়াত হলেও তাঁর উজ্জ্বল জীবন এবং আশ্চর্য প্রতিভা, তাঁকে ভারতবাসীর কাছে অম্লান ও মৃত্যুঞ্জয়ী করে তুলেছে।
জন্ম, বংশপরিচয় ও শিক্ষা :
তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে ১৯৩১ সালের ১৫ অক্টোবর এক সাধারণ মৎস্যজীবী পরিবারে কালামের জন্ম হয়। সম্পূর্ণ নাম আবুল পাকির জৈনুল আবেদিন আব্দুল কালাম। পিতা জৈনুল আবেদিন ও মাতা আসিয়াম্মা স্বপ্ন দেখতেন তাঁদের বাড়ির কাছে যে সমুদ্র, তাকেও ছাড়িয়ে যাবে তাঁদের ছেলের কীর্তি। ম্যাট্রিকুলেশনের রেজাল্টেই সকলকে চমকে দিলেন। কালাম যে ব্যতিক্রমী তা তখনই বোঝা গিয়েছিল। ১৯৫৪ সালে তিরুচিরাপল্লির সেন্ট জোসেফ কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক হয়ে তিনি ১৯৫৫ সালে চেন্নাই আসেন এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে। তখন তাঁর স্বপ্ন ছিল ভারতীয় বায়ুসেনার বিমান চালক হবেন। কিন্তু বিমান চালক না হয়ে কালক্রমে বিশ্বসেরা পরমাণু বিজ্ঞানীদের সমাসনে এসে দাঁড়ালেন।
প্রথম জীবনেই পেশা হিসেবে প্রথম জীবনে বেছে নিয়েছিলেন ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগকে। সেখানে তিনি বৈজ্ঞানিক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৯ সালে যোগ দেন ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন-এ। তবে মাঝে কিছুদিন প্রধানমন্ত্রীর বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টাও ছিলেন। কিন্তু তাঁর কর্মজীবনের সর্বোচ্চ খ্যাতি অগ্নি ও পৃথ্বী মিসাইল প্রকল্পে অংশগ্রহণ ও সফলতা লাভ। মহাকাশযান ও স্যাটেলাইট বহনকারী PSLV এবং SLV-III রকেট তৈরিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯৮ সালে ভারতের পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার জন্য 'পোখরান টু' প্রকল্পের প্রধান প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর নিযুক্ত হন। এরপর মেধাবী ও বিজ্ঞানমনস্ক এই কাজপাগল মানুষটি ২০০২ সালে থেকে ২০০৭ সালে পর্যন্ত ভারতের একাদশ রাষ্ট্রপতির গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিয়ে সমগ্র দেশবাসীর শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে ওঠেন।
সৃষ্টিসম্ভার :
তাঁকে কখনোই একটি বিশেষ গন্ডিতে আটকে রাখা যায়নি। তাই সারাজীবন বিভিন্ন ধরনের বিচিত্র কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তিনি নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন। এভাবেই বহু মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর আত্মজীবনী 'উইংস অফ ফায়ার' প্রকাশিত হয় ১৯৯৯ সালে। তাঁর উল্লেখযোগ্য অন্যান্য গ্রন্থগুলি হল 'ইন্ডিয়া টু থাউজেন্ড টুয়েন্টি' (১৯৯৮), 'ইগনাইটেট মাইন্ডস' (২০০২), 'মিশন ইন্ডিয়া' (২০০৫), 'ইনসপায়ারিং থট্স' (২০০৭) ইত্যাদি। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত নিয়মিত লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
পুরস্কার ও সম্মান :
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আব্দুল কালাম জীবদ্দশায় দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ভারত ও
ভারতের বাইরে চল্লিশটি বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডক্টরেট উপাধি প্রদান করেছে। এ ছাড়াও পেয়েছেন 'পদ্মভূষণ' (১৯৮১),'পদ্মবিভূষণ' (১৯৯০) এবং 'ভারতরত্ন' (১৯৯৭)। এর বাইরেও আরও অনেক পুরস্কার ও সম্মান তিনি পেয়েছিলেন।
উপসংহার :
২০১৫ সালে ২৭ জুলাই শিলং-এর এক বক্তৃতা মঞ্চে বক্তব্যরত অবস্থায় আচমকাই জ্ঞান হারিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন আব্দুল কালাম। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি দেশ ও দেশের মানুষের উন্নতির জন্য কাজ করে গেছেন। দেশ তাঁর কাছে ছিল মাতৃময়ী সাক্ষাৎ গর্ভধারিণী। কর্মযোগী ও মানবধর্মের এই পূজারি দেশের মানুষের জন্য যে স্বপ্ন, কাজ ও চিন্তা রেখে গেছেন, তা বাস্তবায়িত করতে পারলে ভারত আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করবে।
আরও পড়ুন-