জীববৈচিত্র্য বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "জীববৈচিত্র্য" প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
জীববৈচিত্র্য বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Bengali Grammar
জীববৈচিত্র্য বাংলা প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা :
একদিন আমাদের এই পৃথিবীটা ছিল 'ধনধান্যে পুষ্পে ভরা', সেদিন মাথার উপরের আকাশটা ছিল ঘন নীল, বারামে ছিল প্রাণবায়ুতে ভরা। পৃথিবীর সব জলই ছিল ঝরনার মতো কলুষতামুক্ত, মাটি ছিল উর্বর, সবুজ রুমালের মতো তৃণভূমি, অরগানি ছড়িয়ে ছিল চারিদিকে। তখন ঘুম ভাঙত পাখির কলতানে, পাখির কলকাকলি শুনতে শুনতে পরিশ্রান্ত মানুষ ঘরে ফিরত। পৃথিক সেই চেহারাটা আজ আর নেই। সভ্যতার গর্বে আমরা পৃথিবীর উত্তাপ বাড়িয়েছি। দুই মেরুতে জমাট বাঁধা বরফ গলিয়ে দিয়ে। প্লাবিত করেছি। অরণ্য ধ্বংস করে নাগরিক চাহিদা মিটিয়েছি। জলাভূমি ভরাট করে জীবজন্তু, পাখপাখালি, কীটপতঙ্গ পৃথিবীর প্রাঙ্গণ থেকে বিলুপ্ত করে চলেছি। আর এই দেখেই আঁতকে উঠেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা সতর্ক করে দিয়েছেন রাষ্ট্রনায়কদেরও। আর তারই ফলে ১৯৯২-তে ব্রাজিলের রিও-ডি-জেনেইরোতে আয়োজিত হয়েছিল জীববৈচিত্র্য সম্মেলন।
জীববৈচিত্র্য কী?
পৃথিবীর আনাচেকানাচে এমনকি ধুলোবালিতে পর্যন্ত নানা ধরনের জীব ছড়িয়ে রয়েছে। আছে নান পশুপাখি, গাছপালা, অণুজীব। অণুজীব বলতে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদিকে বোঝায়। এদের সবাইকে একসঙ্গে বোঝাত্রে বৈজ্ঞানিকরা যার নাম দিয়েছেন জীববৈচিত্র্য। জীববৈচিত্র্যের দুটি ভাগ-প্রথমত; বন্য জীবনবৈচিত্র্য, দ্বিতীয়ত, গৃহপালিত জীববৈচিত্র। বন্য জীববৈচিত্র্য হল সেইসব উদ্ভিদ ও প্রাণী যাদের প্রকৃতিতে পাওয়া যায় প্রাকৃতিকভাবে। উদ্ভিদের মধ্যে ফার্ন, অর্কিড, কা উৎপাদনকারী বৃক্ষ, অসংখ্য গুল্মলতা, বনৌষধি ইত্যাদি। প্রাণীর মধ্যে বাঘ, সিংহ, সাপ, ব্যাং, কীটপতঙ্গ, শামুক ইত্যাদি। যেসব উদ্ভিদ বা প্রাণীর বিস্তার বা প্রজনন মানুষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তাদের গৃহপালিত জীববৈচিত্র্য বলে। যেমন: ধান, গম, আলু লাউ, কুমড়ো ইত্যাদি উদ্ভিদ এবং নানা গবাদি পশু, হাঁস, মুরগি, ভেড়া, পুকুরে চাষ করা মাছ ইত্যাদি।
জীববৈচিত্র্যের প্রয়োজন কেন?
পৃথিবীর প্রতিটি জীবই প্রতিটি জীবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। এমনকি পৃথিবীর জীবনধার রক্ষায় অণুজীবদেরও একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। মানুষ এই জগতে এসেছে অন্য সব জীব বা উদ্ভিদের আসবার পরে। কাজেই অন্য জীব বা উদ্ভিদ পৃথিবীতে মানুষ ছাড়াও বাঁচতে পারবে কিন্তু মানবসভ্যতা সম্পূর্ণতই দাঁড়িয়ে আছে অন্য জীবের অস্তিত্বের উপর। পৃথিবী জীববৈচিত্র্যের উপর নির্ভরশীল। তা ছাড়া জীববৈচিত্র্য আছে বলেই বায়োটেকনোলজি এবং জেনেটিক প্রযুক্তিবিনা নানা জিন ব্যবহার করতে পারছে। নতুন শস্য, ওষুধ প্রভৃতি আবিষ্কারের জন্য জীববৈচিত্র্য থেকে জাতীয় আয় বাড়াবার সুযোগও রয়েছে। তা ছাড়া জীববৈচিত্র্য ঠিকঠাক থাকলে নানা পরিবেশগত ব্যাধি থেকে মানুষ মুক্তি পেতে পারে।
ভারতে জীববৈচিত্র্য :
ভারতে ৪৫ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে, ৩৪০ রকমের স্তন্যপায়ী প্রজাতি রয়েছে। সরীসৃপ ৪২০ প্রজাতির, উভচর ২ হাজার প্রজাতির, ১ হাজার ২০০ প্রজাতির মাছ, ৬৭ হাজার প্রজাতির কীট-পতঙ্গ এখানে দেখা যায়। পশ্চিমবঙ্গ এদিক থেকে সমৃদ্ধ। ভারতের সবকটি 'বায়োজিয়োগ্রাফি জোন'-এর নমুনা ভূখণ্ড রয়েছে আমাদের এই পশ্চিমবঙ্গে। তবে অজ্ঞতা আর উদাসীনতার ফলে এই সম্পদ এখানে নষ্ট হতে বসেছে।
জীববৈচিত্র্যের সংকট :
জীববৈচিত্র্যে সংকট ঘনিয়ে আসে দুটি কারণে-প্রথমত, প্রাকৃতিক কারণ; দ্বিতীয়ত, মানুষের সর্বনাশা কার্যকলাপ। প্রাকৃতিক কারণগুলি হল আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিকম্প, আবহাওয়ার পরিবর্তন, খরা, বন্যা, সুনামি প্রভৃতি। প্রাকৃতিক কারণে জীবনবৈচিত্র্য বিপন্ন বা বিলুপ্ত হলে প্রকৃতি নিজেই তার ক্ষতিপূরণ করে নিতে পারে, কিন্তু মানুষের কার্যকলাপে বিপন্ন বা বিলুপ্ত জীব বা প্রজাতির ক্ষতিপূরণ হওয়া প্রায় অসম্ভব।
এই ক্ষতি নানা ভাবে মানুষ করে থাকে। যেমন জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এলাকায় উন্নয়নের নামে ধ্বংসলীলা চালায়। ফলে জীবের বসতি নষ্ট হয়, জমির চরিত্র প্রয়োজন অনুযায়ী বদলে দেয় মানুষ। যেমন চাষের জমি, জঙ্গল, জলাভূমিতে বাসভূমি গড়ে তোলায় জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়। লাভজনক কোনে প্রাণী বা উদ্ভিদকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে অন্য প্রজাতি হ্রাস পায়। আবহাওয়ায় রাসায়নিক কীটনাশকের বিস্তারও জীববৈচিত্র্যে সংকট তৈরি করে। সংকট এতটাই তীব্র যে বৈজ্ঞানিকেরা অনুমান করছেন ২০২৫ সালের মধ্যে ২০-২৫ শতাংশ উদ্ভিদ ও প্রাণী পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
উপসংহার :
এই সংকট মুক্তির কথা ভেবেই ১৯৯২ সালে পৃথিবীর ১৩০টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা অংশ নিয়েছিলেন বসুন্ধরা সম্মেলনে। সম্মেলনের মঞ্চ থেকে তিনটি বার্তা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়া হল। প্রথমত, জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ; দ্বিতীয়ত, জীববৈচিত্র্যের সুনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার; তৃতীয়ত, তার থেকে প্রাপ্ত লাভের সুষম বণ্টন। এই উদ্যোগে শামিল হয়ে ২০০২ সালে প্রণয়ন করা হয়েছে জীববৈচিত্র্য আইন। এই অনুযায়ী ২০০৪ সালে জীববৈচিত্র্য নিয়মাবলিও তৈরি করা হয়েছে। বায়োডায়ভার্সিটি রেজিস্টার তৈরির মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে সঠিক তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে পৌরসভা বা পঞ্চায়েত স্তরেও।
আরও পড়ুন-