পারমাণবিক বিস্ফোরণ ও বিশ্বশান্তি বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “ পারমাণবিক বিস্ফোরণ ও বিশ্বশান্তি” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
পারমাণবিক বিস্ফোরণ ও বিশ্বশান্তি বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Bengali Gummar Class-12
পারমাণবিক বিস্ফোরণ ও বিশ্বশান্তি
"পারমাণবিক শক্তি নিয়ে-
বন্ধ হোক্ খেলা,
এই পৃথিবী ধ্বংস হলে-
মি কি জ্বালা?”
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও পারমাণবিক বোমা :
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় বিজ্ঞানীরা পরমাণুর ভেতরে লুকানো বিপুল এক শক্তি আবিষ্কার করেন। পৃথিবীতে প্রথম পরমাণু বোমা তৈরি করল আমেরিকা। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ জুলাই আমেরিকা প্রথম পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটায়।
বোমার ভয়াবহতা :
পরমাণু বোমার প্রথম প্রয়োগকারী হল আমেরিকা। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ৬ আগস্ট সোমবার জাপানের ক্রোসিমা শহরে প্রথম পারমাণবিক অস্ত্রটি বর্ষিত হয়। বিস্ফোরণে সৃষ্ট ভয়াবহ তাপে ঝলসে গিয়েছিল লক্ষ লক্ষ মানুষের মীর। আলফা, বিটা আর গামা রশ্মিতে হিরোসিমার আকাশ ছেয়ে গিয়েছিল। মারা গেল দু'লক্ষ মানুষ। আবার ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট আক্রান্ত হল ২.৭ লক্ষ লোক অধ্যুষিত নাগাশাকি শহর। কিন্তু ওই বিভীষিকা সত্ত্বেও থেমে থাকেনি পরমাণু অস্ত্রের প্রারসজ্জা। এরপরেও আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, চিন এবং ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে ভারত-সহ বিভিন্ন দেশ, সব মিলিয়ে দু'হাজারেরও বেশ বার পরীক্ষামূলক পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে পৃথিবীর বুকে।
পিরমাণু বোমা ও ভারত :
ভারতে পরমাণু গবেষণার পথিকৃৎ হলেন ডঃ হোমি জাহাঙ্গির ভাবা। পরে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের বংলস চেষ্টায় ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে গড়ে ওঠে পারমাণবিক চুল্লি, যার থেকে পাওয়া যায় পরমাণু অস্ত্র নির্মাণের উপাদান প্লুটোনিয়াম এবং ভারী জল। এই গবেষণা ধারার ফলশ্রুতিতে ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে ১৮ মে ভারত প্রথম পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটায় রাজস্থানের গোখরানে। এর চব্বিশ বছর পরে ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে ১১ মে রাজস্থানের পোখরানে ভারত আবার এই অস্ত্রের পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটায়। এর দু'দিন পরে ১৩ মে ঘটানো হল আরও দুটি বিস্ফোরণ।
ভারতের বোমা: দেশে দেশে আলোড়ন :
ভারতের এই পরমাণু বিস্ফোরণ দেশে এবং বিদেশে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করল। পরবর্তীকালে বহু বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষের প্রতিবাদে জেনিভায় বিশ্বের একষট্টিটি দেশ রাষ্ট্রপুঞ্জের ব্যবস্থাপনায় এন্ত্র পরীক্ষা বন্ধের জন্য একটি চুক্তি করে। এই চুক্তিটির নাম 'কমপ্রিহেন্সিভ টেস্ট ব্যান ট্রিটি' বা সংক্ষেপে 'সিটিবিটি' (CTBT) এবং এর উদ্দেশ্য বিশ্বব্যাপী পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ। এর উদ্দেশ্য পৃথিবীকে আণবিক অস্ত্রমুক্ত করে শান্তি প্রতিষ্ঠা। বিশ্বব্যাপী পরমাণু অস্ত্রের বিরোধিতার পটভূমিতে ভারতের সাম্প্রতিক বিস্ফোরণে একটি তীব্র আলোড়ন দেখা গেল।
বোমা নয়, শান্তি চায় :
মহাযুদ্ধোত্তর কালে আবার দেখা দিল পৃথিবীতে অশান্তির কালো ছায়া। 'হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী,/নিত্য নিঠুর দ্বন্দ্ব,/ঘোর কুটিল পন্থ তার,/লোভ জটিল বন্ধ।' উন্মত্ত পৃথিবীর ভয়ংকর রূপটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তাঁর কল্পনানেত্রে দেখেছিলেন। আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, চিন-বিশ্বের পাঁচটি পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন রাষ্ট্রের খাসদখল নিউক্লিয়ার ক্লাবে শেষে নাম লেখাল ভারত ও পাকিস্তান। এই পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতার যুগে যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়, তা হলে পৃথিবী থেকে মানবজাতি এবং মানবসভ্যতা একেবারেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
মানব-দরদি লেখক গ্যাব্রিয়েল মার্কোয়েজ বলেছেন, "একটি বোমার কালান্তক বিস্ফোরণের মূহূর্তকালের মধ্যেই বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন। সভ্যতার সকল স্বাক্ষর লুপ্ত করে এ জগৎ ফিরে যাবে তার সৃষ্টিকালের আদিম জামট বরফের যুগে।" বিশ্ববিশ্রুত বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইন বলেছিলেন, "তৃতীয় মহাযুদ্ধ যদি বাধে, তার ধ্বংসের ভয়াবহতা এমন হবে যে, চতুর্থ মহাযুদ্ধে মানুষকে লড়াই করতে হবে আদিমতম অস্ত্র-পাথর এবং গাছের ডালের সাহায্যে।"
মানবতার প্রতি আবেদন :
বহুযুগ আগে ক্রৌঞ্চ দম্পতিকে আঘাত করতে উদ্যত এক অস্ত্রধারী নিষাদকে কবি বাল্মীকি নিষেধ করেছিলেন, 'মা নিষাদ (না, ব্যাধ না)। হত্যা নয়।' তেমনি পরমাণু অস্ত্র-উদ্যত জাতিগুলির দিকে তাকিয়ে আধুনিক এক কবি আহ্বান জানিয়েছেন, ওই আদি কবির বাণীকে এবং হয়তো সমগ্র মানবতাকেও-
'অস্ত্র মাটিতে, অস্ত্র আকাশগামী,
দিগন্তরাঙা অস্ত্রের মহিমায়
রাঙা অস্ত্রের কিরণ পড়েছে জলে
গ্রন্থসাহেব নদী জলে ভেসে যায়...
এসো কবি, এসো, বাধা দাও, মা নিষাদ
বলে ওঠো তুমি, ভেঙে যাক উই ঢিপি।'
আরও পড়ুন-