প্রাত্যহিক জীবনে বিদ্যুৎ প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “ প্রাত্যহিক জীবনে বিদ্যুৎ ” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাত্যহিক জীবনে বিদ্যুৎ প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা :
গ্রিক পুরাণে বর্ণিত আছে, টাইটান প্রোমিথিউস্ স্বর্গ থেকে আগুনকে চুরি করে এনে মানুষকে দিয়েছিল। সেই আগুনের কল্যাণেই মানবসভ্যতার বিকাশ সম্ভব হয়েছে। তাই মানুষের ইতিহাসে প্রোমিথিউস্ এবং আগুন চিরস্মরণীয়। তবে এর থেকেও আর কিছুকে যদি আমাদের সভ্যতার বিকাশে বিশেষভাবে মনে রাখতে হয়, তা হল 'বিদ্যুৎ'।
একালের ইতিহাসে বিদ্যুৎ এবং মানবসভ্যতা সমার্থক। এই বিদ্যুৎ একদা ছিল আকাশচারী। মেঘে মেঘে ঘর্ষণে তা ভয়াল আকারে আকাশ বিদীর্ণ করে ঝলসে উঠত। এই ভয়ংকর বিদ্যুৎকে মাটিতে নামিয়ে আনার জন্য প্রয়োজন হয়নি কোনো প্রোমিথিউস্-এর। মানুষই হঠাৎ একদিন বিদ্যুৎ আবিষ্কার করে বসল। তারপর নতুন যুগের সূচনা হল।
বিদ্যুৎ যখন গৃহভৃত্য :
বস্তু ও গতির মধ্যকার শক্তিপুঞ্জকে মানুষ ধীরে ধীরে গৃহপালিত পশুর মতো বেঁধে ফেলেছে কিংবা তাকে একান্তভাবে সমাজ-ভৃত্য বা গৃহভৃত্যে পরিণত করেছে। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে আজ এই সেবক ভৃত্যকে সর্বদাই প্রয়োজন। বন্দি বিদ্যুৎ আমাদের প্রতিনিয়তই সেবা করে চলেছে।
আলো, পাখা :
আমাদের প্রতিদিনকার জীবনে বিদ্যুৎ নানাভাবে সেবা করে চলেছে। আমরা সকালবেলা বিছানা থেকে উঠে ঘরের যে সুইচ্ দুটি 'অফ্' করি, সে দুটি হল, বিদ্যুৎচালিত আলো এবং পাখার। রাতে মৃদু আলো জ্বলে ঘরে। এই আলো জ্বালায় বিদ্যুৎ। শয়নকক্ষটি যাতে গরমে দুঃসহ না হয়, তার জন্য চলে বৈদ্যুতিক পাখা। আজকাল বিদ্যুৎ ছাড়া বিনোদন হয় না-টিভি, রেডিয়ো, সিনথেসাইজার প্রভৃতি বিদ্যুৎ ছাড়া চলে না।
সারাদিনই বিদ্যুতের ব্যবহার, টেলিফোন ইত্যাদি :
প্রতিদিন সকালে ছাদের ওপর জলের যে ট্যাঙ্ক রয়েছে, এই ট্যাঙ্ক ভরতি করা হয় যে পাম্প এবং মোটর ব্যবহার করে, তাও বিদ্যুৎ-চালিত। আমরা অনেকেই সকালবেলা প্রাতরাশের টেবিলে যে খাবার খাই, তা আসে 'ইলেকট্রিক ওভেন' থেকে। বাড়িতে অতিথি আসে 'কলিং বেল' বাজিয়ে। বলা বাহুল্য, বিদ্যুৎই ওই বেলকে বাজায়।
টেলিফোনের মাধ্যমে আমরা যে যোগাযোগ রক্ষা করি, তা সম্ভব হয় ইলেকট্রিককে ব্যবহার করে। প্রভাতী সংবাদপত্রগুলি আমাদের কাছে যে এসে হাজির হয়, তা সম্ভব হয় বিদ্যুৎ-চালিত মুদ্রণ যন্ত্রের সাহায্যে। আধুনিক জীবনযাত্রায় ফ্রিজকে বাদ দিয়ে চলা অসম্ভব। বিদ্যুতের সাহায্যেই সে সবরকম সবজি এবং খাবারকে রক্ষা করে।
বিদ্যুতের অপরিহার্যতা :
ঠান্ডা মাথায় একটুখানি ভাবলেই দেখা যায়, বাতাস এবং জল যেমন আমাদের জীবনে অপরিহার্য, তেমনি অপরিহার্য হল এই বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ নীরবে চালিয়ে যাচ্ছে বড়ো বড়ো কলকারখানা, বড়ো বড়ো শিল্প। ইদানীংকালে যে কম্পিউটার এবং ইলেকট্রনিক্স নিয়ে আমাদের গর্ব, মুহূর্তে তা অচল হয়ে যায়, যদি না বিদ্যুৎ থাকে, বিদ্যুৎ ছাড়া অচল হয়ে যায় পরিবহণ ব্যবস্থাও। ট্রেন, ট্রাম চলে না বিদ্যুৎ ব্যতিরেকে। গবেষণাগারগুলিও বিদ্যুৎ ছাড়া অচল। অচল জল সরবরাহ ব্যবস্থাও। বিদ্যুৎকে বাদ দিয়ে আধুনিক জীবনযাত্রা অচল এবং কতখানি অচল, মাঝে মাঝে লোডশেডিং-এর উৎপাত তা আমাদের জানিয়ে দেয়।
উপসংহার :
আধুনিক জীবনে বিদ্যুৎশক্তি এক অপরিহার্য উপাদান। বিদ্যুৎশক্তি মানুষের জীবন ও জীবিকার সর্বস্তরে প্রভাব বিস্তার করে। বিদ্যুৎ ব্যতিরেকে আধুনিক সভ্যতার গতিময়তা থমকে দাঁড়াবে।
আরও পড়ুন-