বায়ুমণ্ডলের আকস্মিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশ সংকট রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “বায়ুমণ্ডলের আকস্মিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশ সংকট ”প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বায়ুমণ্ডলের আকস্মিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশ সংকট রচনা || Bengali Gummar Class-12 Bengali
বায়ুমণ্ডলের আকস্মিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশ সংকট
ভূমিকা :
পৃথিবীর সামনে আজ ঘোর বিপদ। পৃথিবী আজ ভালো নেই। বিশ্ব পরিবেশ আজ গভীর সংকটের মুখে। আমাদের এই প্রিয় পৃথিবীটি আমাদের সকলকে নিয়ে যুগযুগান্তর ধরে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে পরম শান্তিতে চলছিল। সেই পৃথিবী আজ পড়ে গেছে ভয়ংকর এক সংকটের মুখে। এর কারণ পৃথিবীর উন্নতা বাড়ছে।
উষ্ণায়নের পরিমাণ :
বিশ্ব উন্নায়ন নিয়ে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা উদ্বিগ্ন। তাঁরা দেখছেন, গত শতাব্দীতে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছিল ০.৭৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই শতাব্দীতে আরও ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৬.৬৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা। বিজ্ঞানীরা হিসেব কষে দেখেছেন ১.৫ থেকে ২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়লেই পৃথিবীর ২০ থেকে ৩০ শতাংশ প্রজাতির জীবন বিপন্ন হবে। মেরু অঞ্চলে বরফ গলবে এবং পাহাড়ে পাহাড়ে যে হিমবাহ গলতে শুরু করেছে, তা গলতেই থাকবে।
বিষাক্ত গ্যাস ও তার পরিণাম :
পৃথিবীর এই উয়তা বৃদ্ধির কারণ কিন্তু আমরাই। আমাদের আধুনিক বিজ্ঞানের যথেচ্ছ বিধ্বংসী আবিষ্কার আমাদের পৃথিবীর 'গ্রিন হাউস' গ্যাসকে বাড়িয়ে তুলে পৃথিবীর শ্বাসরোধ করে তুলেছে। এই গ্রিন হাউস গ্যাসে রয়েছে কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, মিথেন, বিভিন্ন ক্লোরোফ্লুরোকার্বন ইত্যাদি গ্যাস। এরা পৃথিবীর ওপর বিকীর্ণ তাপরশ্মিকে শোষণ করে নেয়, তাদের বেরোতে দেয় না, ফলে ভয়ংকর এক বুদ্ধশ্বাস অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
গ্লোবল ওয়ার্মিং :
ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ, শিল্পায়ন, অরণ্য নিধন-সহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন গ্রিন হাউস গ্যাসের প্রভাবে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের আকস্মিক উন্নতা বৃদ্ধি ঘটছে, যা পরিবেশে সংকট সৃষ্টি করছে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের এই উন্নতা বৃদ্ধিই গ্লোবাল ওয়ার্মিং নামে পরিচিত।
বায়ুমণ্ডলের উষ্মতা বৃদ্ধির চরম ক্ষতিকর প্রভাব :
পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের আকস্মিক উন্নতা বৃদ্ধির ফলে মেরু প্রদেশের বেশ কিছু অংশের বরফ গলে গিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সমুদ্রে জলস্ফীতি ঘটবে। বিজ্ঞানীদের মতে, এক মিটার সামুদ্রিক জলস্ফীতিতে ভারতের উপকূল অঞ্চলের প্রায় ১,৭০০ বর্গ কিলোমিটার কৃষিক্ষেত্র জলমগ্ন হবে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের আকস্মিক উন্নতা বৃদ্ধির ফলে মধ্য আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া এবং আমেরিকা মহাদেশের বেশ কিছু অঞ্চলে অনাবৃষ্টির জন্য দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা আছে।
গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফলে ২০৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রায় ১,১০০ প্রজাতির প্রাণীর চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে এবং বর্তমান শতাব্দী শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই বিশ্বের ৭০% পানীয় জলের উৎস প্রায় কোনো তুষার হিমবাহই আর অবশিষ্ট থাকবে না। শুধু তাই নয়, গ্লোবাল ওয়ার্মিয়ের ফলে মেরু প্রদেশের বরফ গলার ফলে বাংলাদেশ, নেদারল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এবং গোটা সুন্দরবন-সহ ভারতের বেশ কিছু সমুদ্রোপকূল অঞ্চল এবং সম্পূর্ণ মালদ্বীপ সমুদ্রের জলের তলায় চলে যাবে, যার ফলে উদ্বাস্তু হবে পৃথিবীর প্রায় ১০০ কোটি মানুষ।
প্রতিকারের উপায় :
মোট কথা, এই উন্নায়ন নিয়ে বিজ্ঞানীরা খুবই চিন্তিত। নানারকম ভাবনাচিন্তা করে এই বিজ্ঞানীরা পৃথিবীকে এই সংকট থেকে বাঁচাতে কয়েকটি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দেশে দেশে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের 'বসুন্ধরা' সম্মেলনে তা গৃহীতও হয়েছে। গাছপালা লাগিয়ে গ্রিন হাউস গ্যাস নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে, ওজোন স্তরের ছিদ্র মেরামত করতে হবে, কলকারখানা থেকে বিষাক্ত ধোঁয়া ছাড়া যাবে না।
কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড ইত্যাদি বাতাস দূষিত করতে না-পারে, তা দেখতে হবে। এইভাবে সংযত হতে পারলে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধিকে অনেকাংশে রোধ করা যাবে। খানিকটা কমতে পারে। এ ছাড়া বিশ্ব সংকটের হাত থেকে আমাদের রেহাই নেই।
আরও পড়ুন-