বন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “বন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ”প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ রচনা || Bengali Gummar Class-12
বন,বন্যপ্রানী প্রাণী সংরক্ষণ রচনা
"অরণ্য পরম বন্ধু, পৃথিবীর প্রাণ,
আকাশে বাতাসে ভাসে অরণ্যের গান।"
ভূমিকা :
ভারতের প্রথম নভশ্চর ক্যাপ্টেন রাকেশ শর্মা মহাকাশ থেকে পৃথিবীর বর্ণনা দিয়ে বলেছিলেন যে, নিকষ কালো মহাকাশে পৃথিবীর মতো এমন সুন্দর গ্রহ আর তিনি একটিও দেখতে পাচ্ছেন না। সবুজ রঙের স্নিগ্ধ আলোয় গ্রহটি উজ্জ্বল। এই শ্যামলিমার উৎস অরণ্যলালিত জীবজগৎ-পৃথিবীর সম্পদ।
বন: প্রাণবৈচিত্র্য :
প্রকৃতি গড়ে উঠেছে, উদ্ভিদ ও প্রাণীর পারস্পরিক নির্ভরতা নিয়ে। উদ্ভিদ জগতের ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে প্রাণীজগৎ। প্রতিটি প্রাণের সঙ্গে উদ্ভিদের এক অচ্ছেদ্য বন্ধন। এই বন্ধন কোথাও খাদ্যের প্রয়োজনে, কোথাও অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্যে, কখনও বা জীবনধারণের তাগিদে। এই শৃঙ্খলকে পারিভাষিক শব্দে বলা হয় বাস্তু-সংস্থান। কিন্তু এই বাস্তু-সংস্থানে ফাটল ধরিয়েছে একটি প্রাণী। তার নাম, মানুষ। মানুষ তার বুদ্ধি আর প্রযুক্তি নিয়ে ক্রমশ হয়ে উঠেছে পৃথিবীর অধীশ্বর। নিজের প্রয়োজনে অন্য প্রাণকে সে ব্যবহার করেছে অবাধে। মানুষের আগ্রাসী লোভের মুখে পৃথিবীর উদ্ভিদ রাজ্য আজ প্রায় নিঃশেষিত। অনুরূপ বন্য প্রাণীদের অনেকেই চলে গেছে বিলুপ্তির দেশে। মানুষের লোভের শিকার হয়েছে তারা। অনিয়ন্ত্রিত অরণ্য ধ্বংসের পরিণাম দেখা যাচ্ছে চারদিকে। এভাবে চলতে থাকলে পৃথিবীতে যে বায়োডাইভার্সিটি বা প্রাণ-বৈচিত্র্য রয়েছে, তা হয়ে যাবে নিঃশেষ।
হারিয়ে যাওয়া বন্যপ্রাণী :
পৃথিবীতে যে কত প্রাণের সম্পূর্ণ অবলুপ্তি ঘটেছে তার। হিসাব নেই। প্রাগৈতিহাসিক যুগে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল বিশাল সরীসৃপ ডাইনোসর, হাতির পূর্বসূরি ম্যামথ্, স্যারর্-টুথ টাইগার বা খাড়া-দাঁত বাঘ। এই শতকে মরিশাস দ্বীপ থেকে হারিয়ে গেছে ডোডো নামে পাখি। আমেরিকার প্রেইরি বনভূমি থেকে হারিয়ে গেছে বাইসন, মেরু অঞ্চল হারিয়েছে স্বর্ণশৃগাল।
মানুষ যখন ঘাতকের ভূমিকায় :
বন্যপ্রাণী অবলুপ্তির প্রধান কারণ হল অরণ্য-নিধন। মানুষ তার বিলাসব্যসন ও দৈনন্দিন প্রয়োজনে অরণ্য সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার করে চলেছে। ভারতে ইংরেজ শাসন প্রবর্তনের পর শুধুমাত্র রেল লাইনের স্লিপারের জন্য ভারতের শতাব্দী-প্রাচীন বিশাল বৃক্ষগুলিকে যেভাবে কেটে ফেলা হয়েছে, তা ভাবলে শিউরে উঠতে হয়।
বনক্ষয়: বন্যপ্রাণীর লোপ :
বন্যপ্রাণীদের বাঁচিয়ে রাখা মানুষের অন্যতম প্রয়োজনীয় দায়িত্ব। কারণ তাদের এক একটি প্রজাতির অবলুপ্তি সর্বদাই মানুষের ক্ষতি ডেকে আনে। যেমন, বাঘ বিলুপ্ত হলে হরিণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। হরিণ বৃদ্ধি পেলে তারা অরণ্য নিঃশেষ করবে। তখন এই হরিণরাই অরণ্য-পার্শ্ববর্তী কৃষিক্ষেত্রে ধ্বংসলীলা চালাবে। এজন্য পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করা জরুরি। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় উদ্ভিদের পাশাপাশি আরণ্যক প্রাণীর সুরক্ষা একান্ত প্রয়োজন।
মানবজীবন :
এই পৃথিবীতে আমাদের এই মানবজীবন বিচ্ছিন্ন কোনো সৃষ্টি নয়। অরণ্য বন্যপ্রাণী এবং তার সঙ্গে জড়িত যে পরিবেশ, সেইসব নিয়েই পারস্পরিক নির্ভরতায় আমাদের মানবজীবন গঠিত। এদের ভেতর একটি বিনাশ হলে, অপরটিও গিয়ে দাঁড়াবে মৃত্যুর মুখোমুখি।
উপসংহার :
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য ইদানীং গড়ে উঠেছে নানা আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সংস্থা, যেমন-WWF বা ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড-লাইফ ফেডারেশন। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংস্থার উদ্যোগে গড়ে উঠেছে সংরক্ষণ আন্দোলন। সুন্দরলাল বহুগুণা ও চিপকো আন্দোলন, মেধা পাটেকরের 'নর্মদা বাঁচাও' আন্দোলন প্রভৃতি ভারতে অরাজনৈতিক সংরক্ষণ আন্দোলনের অন্যতম। আশার কথা এই যে, বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠেছে নানা অভয়ারণ্য এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ প্রকল্প। গুজরাটের গির অরণ্যের সিংহ-প্রকল্প, সুন্দরবনের বাঘ-কুমির প্রকল্প, আমাদের কাজিরাঙায় গন্ডার প্রকল্প-এসব প্রকল্পগুলি মানুষের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার দিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।
আরও পড়ুন-